আবহমান গ্রাম বাংলার বিলুপ্তপ্রায় এক ফলের নাম চালতা! চালতা একটি বিষ্ময়কর ফল, যা তার অনন্য পুষ্টিগুণ এবং ঔষুধি গুণের জন্য পরিচিত। এটি 'এলিফ্যান্ট অ্যাপেল' নামেও পরিচিত এবং এর ভক্ষণযোগ্য অংশটি আসলে ফুলের মাংসল বৃতি। চালতা আচার ও চাটনি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি, সর্দি-কাশি উপশম ও রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
জানা যায়, একটি চালতা গাছে বছরে একবারই ফল ধরে। প্রতিটি চালতা ফল স্বাভাবিকভাবে ২'শ ৫০ গ্রাম থেকে প্রায় ৫'শ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। চালতা গাছে প্রথমে ফল ধরে। ফলের আকার যখন ডিমের আকৃতি ধারণ করে তখন ওই ফলের মধ্য থেকে অপরূপ, বাহারী, বিরল ধরনের ফুল ফোটে। চালতার ফুল সাধারণত রাতের আঁধারে ফোটে। এ গাছে ফুল ফোটার এক দিনের মধ্যেই ফুলের পাপড়ি নিস্তেজ হয়ে ঝরে পড়ে। একদিনের মধ্যেই পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত একটি ফুল ফুটে তা ঝরে ফলের জন্ম দেয়। এ সময় মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছির আনাগোনা ঘটে। মৌমাছিরা চালতার ফুল থেকে মধু আহরণ করতে গিয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসে। আর এবাবেই এভাবেই চালতার পরাগায়ন ঘটে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চালতায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, শর্করা, বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, থায়ামিন এবং রিবোফ্লাবিন। চালতা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা সমাধানে সহায়ক হিসেবে বেশ কাজের। এছাড়া, চালতা সর্দি-কাশি: গলা ব্যথা, জ্বর এবং সর্দি-কাশিতে উপশম দেয়। চালতা রক্তের সংবহন ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কিছু ক্ষেত্রে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। এছাড়া এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে ও এতে থাকা ভিটামিন 'সি' স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে চালতার প্রধান ব্যবহার হলো টক আচার এবং চাটনি তৈরি করা। চালতা গাছের ছাল গুঁড়া করে খেলে সর্দি ও কফ ভালো হয়।
সেই চালতা ফল বহুবিধ ঔসধিগুণসম্পন্ন হলেও মূলতঃ এর আচার দেশের নারীদের জন্য লোভনীয় মুখরোচক খাবার হিসাবে ব্যাপক সমাদৃত। যথাযথ উদ্যোগের অভাবে দিনে দিনে আবহমান গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এ গাছটি।