নিজস্ব প্রতিনিধিঃ তাঁত সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের চৌহালী, এনায়েতপুর, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও বেলকুচি উপজেলা এলাকার খাবার সংকটে তাঁত শ্রমিকেরা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁত কারখানাগুলো। এতে বিপাকে পড়েছেন এই শিল্পের ওপর নির্ভর করা প্রায় ১০লাখ তাঁতশ্রমিক। কাজ না থাকায় টানাপোড়েনের সংসারে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাদের। সরকারি ত্রাণ সহায়তা এখনও পৌঁছায়নি তাদের ঘরে। কোটি কোটি টাকা লোকসানের মূখে পড়েছেন কারখানার মালিকরা। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর,বেলকুচি, চৌহালী, এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩লাখ হস্ত চালিত তাঁত ও বিদ্যুৎ চালিত পাউয়ারলুম রয়েছে । ভালো মুনাফা হওয়ায় এই এলাকায় বাড়তে থাকে তাঁতের পরিধি । তাঁতের খট খট শব্দে ব্যস্ত সময় পার করতেন কারিগররা। দিন রাত এসব তাঁত কারখানায় প্রায় ১০ লাখ (মহিলা-পুরুষ) তাঁতশ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে থমকে গেছে তাদের জীবন। খুকনী গ্রামের বিশিষ্ট তাঁত ব্যবসায়ী হাজী সফি উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম বলেন, সরব তাঁত পল্লীতে নেমে এসেছে নীরবতা, বন্ধ অবস্হায় পড়ে আছে তাঁত মালিকদের তাঁতকারখানার মেশিনগুলো, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সূতা, রং, রাসায়নিকদ্রব্য সহ পাঁচ শতাধিক কোটি টাকা মূল্যের কাচা মালামাল। করোনা পরিস্থিতিতে গত ২৫ মার্চ থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মালিকরা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাপ্তাহিক মজুরি নির্ভর শ্রমিকরা। কাজ নেই এমন অবস্থায় কাটছে তাদের দিন। বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না কেউ। ঘরে নেই খাবার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা। এদিকে এখনও ৯০ ভাগ এসব শ্রমিকদের ঘরে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। ত্রাণ সহায়তার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা। শেরনগর গ্রামের তাঁতশ্রমিক আল আমিন বলেন, 'আমরা এই তাঁতের ওপর নির্ভরশীল। এখন তাঁত বন্ধ। ঘরে খাবার ফুরিয়ে গেছে। ধার দেনা করে কয়েকদিন চলেছি। এখন আর কোনও উপায় নেই। সরকারি কোনও সাহায্য- সহযোগিতাও পাচ্ছি না। অপর শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁত কারখানায় কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। কাজ করে প্রতি সপ্তাহে তিন হাজার টাকার মতো পাইতাম। সেই টাকায় সংসারের সব খরচ ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। এই সময়ে অন্য কাজও করতে পারছি না। ঘরে খাবার নেই। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।