বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শামছুর রহমান শিশির : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দীর্ঘ ২ মাস পর ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামী পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর স্ত্রী মোছাঃ লুৎফুন নেছা পিয়ারী বাদী হয়ে বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আজ মঙ্গলবার একটি পিটিশন কেস দায়ের করেছেন। ওই মামলায় শাহজাদপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ভিপি আব্দুর রহিম, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুবে ওয়াহিদ শেখ কাজল ও পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নাছির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা আশিকুল হক দিনারসহ ১৭ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ২’শ জনকে আসামী করা হয়েছে। শুনানী শেষে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক হাসিবুল হক পিটিশন মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, মামলা দায়েরের খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ শত শত নেতাকর্মী মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামী পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুসহ খুনীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। আদালতে দাখিলকৃত পিটিশন মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামীরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩ টায় পিস্তল, দেশী তৈরি বন্দুক ও দেশীয় অস্তসস্ত্র নিয়ে তার স্বামী পৌর মেয়র মিরুকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের মণিরামপুর মহল্লার বসতবাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা উপর্যুপরি ককটেল নিক্ষেপ ও দেশীয় অস্ত্র দ্বারা এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রলীগ সভাপতি কাজলের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে অনেক পথচারী এবং জনৈক সাংবাদিক শিমুল আহত হয়। এছাড়া মামলাটি বিলম্বে দায়েরের কারণ হিসেবে বাদী উল্লেখ করেছেন, এ বিষয়ে সে নিজে বাদী হয়ে একটি এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নানা অজুহাতে মামলাটি এফআইআরভূক্ত করতে বিলম্ব করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি আদালতে এই পিটিশন মামলা দায়ের করেন। জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর ভাই হাসিবুল হক পিন্টু স্থানীয় সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে মেয়রের বাড়িতে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করে তার দুই হাত ও পা ভেঙ্গে ভ্যানে তুলে দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মী সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে মিছিলটি মেয়র মিরুর বাড়ি ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ মিছিলকারীদের ঘটনাস্থল থেকে হটিয়ে দেয়। এ সময় মেয়র মিরু, তার ভাই মিন্টুসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হটে যাওয়া মিছিলকারীদের পেছন থেকে গুলিবর্ষণ করলে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কজেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উন্নত চিকিৎসার্থে বগুড়া থেকে ঢাকা নেয়ার পথে সাংবাদিক শিমুল মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নুরুন নাহার বাদী হয়ে মেয়র মিরুকে প্রধান আসামী করে ১৮ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেয়র মিরুসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। ইতিমধ্যেই পুলিশ মামলার তদন্তের স্বার্থে মেয়র মিরু, তার ভাই মিন্টুসহ ৬ জনকে রিমান্ডে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং মিন্টুর স্বীকারোক্তি মোতাবেক মেয়র মিরুর বাড়ির পেছনের ডোবা থেকে একটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। এর আগে ঘটনার দিন পুলিশ মেয়র মিরুর লাইসেন্সকৃত একটি শটগান, এক রাউন্ড ফায়ার্ড কার্তুজ ও ৪৩ রাউন্ড শটগানের গুলি জব্দ করে। নিহত সাংবাদিক শিমুলের মাথায় পাওয়া লেডবলের (সিসার বল) সাথে মেয়রের শটগানের গুলির মিল রয়েছে বলে সিআইডির ব্যালেস্টিক রিপোর্টে উল্লেখপূর্বক আদালতে দাখিল করা হয়। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান বলেন, ‘ মেয়র মিরু, তার ভাই মিন্টু ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার অপকৌশল হিসেবে এ ধরনের একটি মিথ্যা ও বানোয়াট কাউন্টার মামলা দায়ের হয়েছে। দেশের গণমাধ্যমকর্মীসহ সুশীল সমাজ যখন সাংবাদিক শিমুলের খুনীদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার, ঠিক সেই মুহুর্তে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যে এ ধরনের একটি কাল্পনিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুর রহিম বলেন, ‘ ঘটনা দিন তিনি শাহজাদপুর ছিলেন না। পৌরমেয়র মিরুর শটগানের গুলিতেই সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যু হয়েছে যা সিআইডির ব্যালাস্টিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের জড়িয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট পিটিশন মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুবে ওয়াহিদ শেখ কাজল ও যুবলীগ নেতা আশিকুল হক দিনার বলেন,‘ সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের ঠিক আগ মুহুর্তে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করে অভিযুক্ত মেয়র ও তার সহযোগীদের রক্ষার অপচেষ্টা করা হয়েছে।’ অন্যদিকে, শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ খাজা গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘ বিষয়টি তিনি শুনেছেন তবে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ সম্বলিত কোন পিটিশন পাননি।’ এদিকে, সাংবাদিক শিমুল হত্যাকান্ডের দীর্ঘ দুই মাস পর এ ধরনের মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলা দায়েরের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

উত্তরবঙ্গ ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের ১ শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা

অপরাধ

উত্তরবঙ্গ ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের ১ শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা

শামছুর রহমান শিশির : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের আলোকদিয়ার দক্ষিণপাড়া মহল্লায় মঙ্গলবার রাতে তুচ্ছ ঘট...

শাহজাদপুরে ৮ স্কুল শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগে অধ্যক্ষ গ্রেফতার

অপরাধ

শাহজাদপুরে ৮ স্কুল শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগে অধ্যক্ষ গ্রেফতার

শাহজাদপুর প্রতিনিধিঃ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের দ্বার...

বাংলা নববর্ষে 'বৈশাখী আবাহন' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

শিক্ষাঙ্গন

বাংলা নববর্ষে 'বৈশাখী আবাহন' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

তানিম তূর্যঃ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উল্লাপাড়া পাইকপাড়া মডেল একডেমীর উদ্দ্যোগে তরুণ প্রজন্মের লেখা 'বৈশাখী আবাহন' বইয়ের মোড়...

উল্লাপাড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

উল্লাপাড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানাধীন হাটিকুমরুল ইউনিয়নে ডোবার পানিতে ডুবে তাসকিয়া খাতুন (১৪) নামে একটি শিশুর মৃত...

শাহজাদপুরে শিশুশ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা

আইন-অপরাধ

শাহজাদপুরে শিশুশ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পরিত্যাক্ত বাড়িতে জামরুল কুড়াতে গিয়ে মাদরাসা ছাত্র মামার ধূমপান করা দেখে ফেলায় শিশুশ্রেণি

শাহজাদপুরে সাংবাদিকদের সাথে এবি পার্টির মতবিনিময়

রাজনীতি

শাহজাদপুরে সাংবাদিকদের সাথে এবি পার্টির মতবিনিময়

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি)’র দলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা জনগণের মাঝে তুলে ধরার লক্ষ্যে শা...