সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
১৮৯০ সালের জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকের ঘটনা। শাহজাদপুরে সে সময় ঠাকুর পরিবারের পাশাপাশি ঢাকা জেলার মুড়াপাড়ার ব্যানার্জীবাবুদেরও জমিদারি ছিল। শাহজাদপুরে তাঁদেরও বেশ বড় কাছারি ছিল। একদিন ব্যানার্জীবাবুরা তাঁদের কাছারি বাড়ির প্রাঙ্গণে বাইরে থেকে যাত্রাদল এনে যাত্রাভিনয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই যাত্রাভিনয় দেখতে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি শাহজাদপুর হাই স্কুলের ছাত্ররাও গিয়েছিলেন। যাত্রা চলাকালে শাহজাদপুর হাই স্কুলের অল্প বয়সী ছাত্রদের মধ্যে একটু গোলমাল বেধেছিল। সে সময় ব্যানার্জীবাবুদের কাছারির ম্যানেজার রমাপতিবাবু ওই গোলমাল দেখে একজন ছাত্রের কান ধরে যাত্রা মণ্ডপ থেকে তাকে বের করে দেন। শাহজাদপুর স্কুলের সে সময় ছাত্রদের নেতা ছিলেন, আজিজ মেছের। তিনি সে সময় উঁচু ক্লাসে পড়তেন। ছাত্রদের অপমান করা হয়েছে বলে আজিজ মেছের সব ছাত্রকে যাত্রা মণ্ডপ থেকে বের করে বাইরে চলে আসেন। বাইরে আসার সময় ছাত্ররা কেউ-ই যাত্রাভিনয়ের কোনো বাধার সৃষ্টি করল না। বাইরে এসে সকলে মিলে স্থির করল- পরে এর শোধ নিতেই হবে। এই ঘটনার কয়েকদিন পরে রমাপতিবাবু দুপুরের দিকে পালকিতে চড়ে শাহজাদপুর স্কুলের সামনে দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। রমাপতিবাবুকে দেখেই স্কুলের ছাত্ররা একত্রিত হয়ে আজিজ মেছেরের নেতৃত্বে পালকির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রমাপতিবাবুকে পালকি থেকে নামিয়ে বেশ করে উত্তম-মধ্যম দেয়। রমাপতিবাবু মার খেয়ে সোজা থানায় গেলেন। তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাবে থানা থেকে সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলে পুলিশ এল, আজিজ মেছেরকে ধরতে। কিন্তু স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক দ্বারকানাথ সেন পুলিশকে কিছুতেই ঢুকতে দিলেন না স্কুলে। তিনি বললেন- স্কুলের প্রেসিডেন্ট হলেন সিরাজগঞ্জ মহকুমার এসডিও। তাঁর অনুমতি ছাড়া আমি কিছুতেই পুলিশকে স্কুলে ঢুকতে দিতে পারি না। পুলিশ অগত্যা ফিরে গেল। শাহজাদপুর হাই স্কুল রবীন্দ্রনাথের অর্থে প্রতিষ্ঠিত । জমিদার রবীন্দ্রনাথ তখন কাছারিতেই ছিলেন। প্রধান শিক্ষক ঘটনার দিনই রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়ে বিষয়টি তাঁকে জানালেন। ঘটনাটি এসডিও সাহেবের কানে গেল। তিনি এলেন শাহজাদপুর হাই স্কুলে। রবীন্দ্রনাথকেও এসডিও সাহেব বিচার সভায় ডেকে আনলেন। বিচারের সময় প্রধান শিক্ষক বিচার প্রাঙ্গণে ছাত্রদের একসঙ্গে দাঁড় করে দিলে বাদী রমাপতিবাবু এবং তাঁর সঙ্গী দুজন পাইক কেউ-ই ছাত্রদের মধ্যে কারা রমাপতিবাবুকে মেরেছিল, সঠিকভাবে তাদের সনাক্ত করতে পারল না। বাদীপক্ষের তিনজনই একমত না হয়ে প্রত্যেকে উল্টোপাল্টাভাবে ভিন্ন ভিন্ন ছাত্রদের দেখাতে লাগল। ফলে আজিজ মেছেরসহ সকল ছাত্রই তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেল। তথ্যসত্র : গোপালচন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রাবলী, পৃষ্ঠা : ৭৫-৭৬, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা ৭০০০৭৩।

সম্পর্কিত সংবাদ

৩’শ ৬০ জন দুগ্ধদাই মাতাকে ভাতা কার্ড প্রদান

৩’শ ৬০ জন দুগ্ধদাই মাতাকে ভাতা কার্ড প্রদান

শাহজাদপুর  প্রতিনিধি: গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিলের আওতায় শাহজাদপুর পৌরসভা কর্তৃক বাছাইকৃত উপক...

৪ ফেব্রুয়ারী সালমান, সানি লিওন আসছেন ঢাকায়

৪ ফেব্রুয়ারী সালমান, সানি লিওন আসছেন ঢাকায়