বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

শাহজাদপুর প্রতিনিধি : শাহজাদপুর পৌরসদরের পৌরমার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে রমরমা মাদকের ব্যবসা করে আসলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মানিক সরকার। এছাড়াও প্রায় অর্ধ শতাধিক ভ্রাম্যমান বিক্রেতার মাধ্যমে পৌর এলাকার ১০টি পয়েন্টসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে মাদক বিক্রি করে আসছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি’র হাতে মাদকদ্রব্যসহ মানিক ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে এসে আবারও পুরোদমে প্রতাপ, প্রভাব আর দাম্ভিকতার সাথে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি মামলায় ৫ বছরের সাজা হলেও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মানিক দাম্ভিকতার সাথে বিভিন্ন স্থানে বলে বেড়ায়, ‘প্রশাসনের সর্বস্তর ম্যানেজ করেই সে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লাভ নেই। র‌্যাব, ডিবি, পুলিশ ও আবগারী তার পকেটে।’ এলাকাবাসীর কেউ যদি মানিকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করে তাহলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই ব্যক্তিকে হয়রানী করা হয় বলে এলাকাবাসী জানায়। এলাকাবাসী আরও জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় শাহজাদপুর পৌরসদরের প্রাণনাথপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে চাদের আলোকে র‌্যাব-১২ এর সদস্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং ওইদিন রাতেই তাকে আবার বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার বিকেলে একই গ্রামের মোহাম্মদ আলীকে থানা পুলিশ আটক করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশকে ঘেরাও করে আটকের কারণ জানতে চায়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়। এদিন রাতে ফের র‌্যাব-১২ এর সদস্যরাও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করতে আসে। মোহাম্মদ আলীকে বাড়িতে না পেয়ে পরে শাহজাদপুর কোর্টভবনে এক আইনজীবীর সাথে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনার পর র‌্যাব সদস্যরা চলে যায়। এ দু’টি ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ী মানিকের হাত রয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে। বিভিন্ন সময়ে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মানিক, তার পিতা রতন সরকার ও কর্মচারীরা মাদকসহ র‌্যাব-১২, পুলিশ ও ডিবির সদস্যদের হাতে আটক হয়। এসব ঘটনায় এদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়। জামিনে বের হয়ে এসেই মানিক ফের পুরোদমে মাদক ব্যবসায় চালিয়ে যাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন ‘মানিকের খুঁটির জোড় কোথায়?’ এলাকাবাসী অভিযোগে জানায়, ১৯৯৬ সালে এ মার্কেট চালু হওয়ার পর থেকে রতন সরকার ও তার ছেলে মানিক সরকার এ মার্কেটের পশ্চিম পাশের ১ নম্বর গলির ৫ টি কক্ষ ও ২ নম্বর গলির শাকিলের চায়ের দোকানের সামনের ৩ টি কক্ষে বাংলামদ, বিয়ার, যৌন উত্তেজক পানীয়, বিদেশী মদ মজুদ করে মজো, স্প্রিরিট ও ম্যাটাডোর কলমের এজেন্সির অন্তরালে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। প্রায় অর্ধ শতাধিক ভ্রাম্যমান বিক্রেতার মাধ্যমে শাহজাদপুর পৌর এলাকার ১০ টি পয়েন্টসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তারা মদপানের পারমিট নিয়ে পাবনার হাবিবুর রহমান তোতার বেড়া বাজারে অবস্থিত মদের দোকান থেকে এবং তার ভাই শফিকুর রহমানের উল্লাপাড়া এবং লাহিড়ী মোহনপুরের মদের দোকান ও পাবনার জনৈক মানিকের দোকান থেকে এ সব মাদকদ্রব্য অবৈধভাবে আমদানি করে বছরের পর বছর এ অপকর্ম চালয়ে আসছে। এ দোকান থেকেই প্রতিদিন প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও শাহজাদপুর সরকারি কলেজের মাত্র ১’শ গজ দুরে রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় কলেজটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এদিকে পৌর মার্কেটের ব্যাবসায়ীদের অভিযোগ, মার্কেটের মধ্যে প্রকাশে মাদকদ্রব্য বিক্রি করায় মাদক বিক্রেতা ও সেবীরা সব সময় এই মার্কেটে যাতায়াত করছে। ফলে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক ব্যাবসা বানিজ্য করা দুষ্কর ও মুশকিল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও কলেজের প্রবেশ গলিতে মাতালদের অবাধ অস্বাভাবিক চলা ফেরার কারণে কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ পথচারীরা নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজ মসজিদে যাতায়াতকারী মুসুল্লিদের ভাষ্যমতে, ওই গলিতে প্রবেশ করলেই মদের গন্ধে ঈমান রাখাই তাদের পক্ষে দায় হয়ে পড়েছে। গত ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর এএসপি শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে র‌্যাব-১২ এর একটি বিশেষ দল রতন ও মানিকের পৌর মর্কেটের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৮০ লিটার মদসহ দোকান কর্মচারী অসীম কুমার রায়কে আটক করে। এ ব্যাপারে অসীম ও দোকান মালিক রতন সরকারের পুত্র মানিক সরকারকে আসামী করে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় মানিকের ৫ বছরের সাজা হয়। পরবর্তীতে গত ২০০৮ সালের ৮ জুন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ দল একই দোকানে অভিযান চালিয়ে ৩৫০ লিটার বাংলামদসহ দোকান কর্মচারী অসীম ও এক ভ্যান চালককে ভ্যানসহ আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দোকান মালিক রতন সরকার ও তার ছেলে মানিকসহ মোট ৪ জনকে আসামী করে ডিবি পুলিশ একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করে। গত ১৫ সালের ১৯ অক্টোবর র‌্যাব-১২ এর সদস্যরা আবারও রতন ও মানিকের পৌর এলাকার প্রাণনাথপুর মহল্লার বসতবাড়িতে অভিযান চালিযে ৪৫ ক্যান বিদেশী বিয়ারসহ কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মানিক সরকার কে আটক করে। এ ব্যাপারে র‌্যাবের ডিএডি ইউনুস আলী বাদী হয়ে শাহজাদপর থানায় মাদক আইনে আরও একটি মামলা করে। এছাড়া গত ১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ র‌্যাব-১২ এর এএসপি হাসিবুল আলমের নেতৃত্বে র‌্যাব জুয়েল, গোয়েন্দা বিভাগ আরমান সংগীয় ফোর্স পৌর সরকার এন্টার প্রাইজের মালিক মানিকের ৫ টি দোকানে আরও একটি অভিযান চালিয়ে ৬শ’ ক্যান বিদেশী বিয়ার ৩শ’ লিটার বাংলা মদ ও ২৪ বোতল যৌন উত্তেজক জিনসিন প্লাস উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মানিক ও তার পিতা রতন সরকারকে আসামী করে শাহজাদপুর থানায় আরও একটি মামলা হয় হয়। একের পর এক র‌্যাব, ডিবি ও পুলিশের হাতে বিপুল পরিমান মাদকসহ গ্রেফতার ও অসংখ্য মামলা দায়ের হলেও জামিনে বের হয়ে এসেই ফের মাদক ব্যাবসায়ী মানিক পুরোদমে রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে ‘মানিকের খুঁটির জোড় কোথায় ?’

সম্পর্কিত সংবাদ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাণশক্তিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ--এমপি কবিতা

শাহজাদপুর

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাণশক্তিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ--এমপি কবিতা

সংবর্ধনা সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন এনায়েতপুর থানা ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মোঃ জাকারিয়া তৌহিদ তমাল

শাহজাদপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা বানভাসী ৫০ জনকে অর্থ সহায়তা দিলেন

বন্যা

শাহজাদপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা বানভাসী ৫০ জনকে অর্থ সহায়তা দিলেন

শাহজাদপুর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত কর্মচারীদের উদ্যোগে গতকাল সোমবার শাহজাদপুর...

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা আরও তিন দিন বাড়ল

পরিবেশ ও জলবায়ু

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা আরও তিন দিন বাড়ল

এ ছাড়া আজ রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশম...

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!

এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পূর্ব পাশে অবস্থিত পিডিবির ৩টি ও বেসরকারি ১টি মিলে মো...