রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Hazi Basirulহাজী বশিরুল হাসান খানঃ মা-মাটি বাংলায় জন্মেছিল ক্ষনজন্মা এক মহান নেতা, যাকে ভাল বাসত মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সরোয়ার্দী ও অনেক জ্ঞানীগুণি বিশেষ ব্যক্তিত্ব। যেখানে রাজনীতির সুচিকাগার সেখানেই শুরু হল এক কালো অধ্যায়। বাংলার শিরোমনিকে রাষ্ট্রের বিপক্ষে সোচ্চার হতে দেখে তাকে হুমকি দেয়া হল। মুজিব তুমি যদি রাজনীতি বন্ধ না কর তবে রাজটিকিট দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে বের করে দেয়া হবে। বিনিময়ে একটি মুচলিকা- আমি রাজনীতি করব না......। বঙ্গবন্ধু বলে উঠল- না, না এ হতে পারে না। যার পরিনতি কারাবাস। উন্নিশো আটচল্লিশে কারাবাস সেই যে শুরু। কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল করলে লোপাট- নজরুলের সেই উক্তি আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়। তাই শুরু হল- জেলের তালা ভাংবো শেখ মুজিবকে আনবো। স্লোগানে স্লোগানে বাংলার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হলো। সাগরের ওপারে পশ্চিম পারের শোষকেরা বুঝে ফেলল একে কি করে স্তব্ধ করা যায়। এরপরেই শুরু হলো সেই বাহান্ন’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। ঘর থেকে বের হলে নিশ্চিত বক্ষপাজর ভেদিবে তপ্ত বুলেট। তবুও থামেনি বাংলার দামালেরা- রফিক, জব্বার, ছালাম, বরকত যাদের লহিত কণিকায় রাজপথ রক্তাক্ত রঞ্জিত শোকার্ত মাতৃক্রোড়। মায়ের ভাষায় মা বলব না এও কি হয় ? এও কি হতে পারে ? অবশেষে উর্দুর বোঝা চাপাতে না পেরে নীল নক্সা আঁকে। ওপারে একটি গাছ এপারে একটি গাছ। পশ্চিমা বলে একটি শর্ত ভোটের মাঝেই সুরাহা। দুই গাছের আম কার ভাগ্যে জুটবে। যে কথা সেই কাজ। বিপুল ভোটে জয়ী হলো আওয়ামীলীগ। এর নিষ্পত্তি তো তখনি পাওনা। অথচ কি ন্যাক্কারজনক! কি হৃদয় বিদারক! ঘৃণিত অপধারারের মত্ততায় উল্কা নাচনে মেতেছিল হানাদারেরা। বাংলা মা এমন একটি দেশ-যা কিনা সমস্ত বিশ্ববাসীকে নিমোহিত করে। জীবনানন্দের রূপসী বাংলা শুধু রূপেই নয়, গুণেও গুণবতী। বাদশা আলমগীর, মোগল সম্রাট, পাল, সেন, কত শাসকরাই তো শাসন করেছে। এই মা-মাটি বাংলা একটি দ্বীপ ছিল, পলির পরতে এতই উর্বর যে- ডাল পুতে দিলে ফুলে ফলে পুষ্প মঞ্জুরি হয়ে মউটুসি হয়। তাই তো এতো লোলুপ দৃষ্টি। বেনিয়াদের শাসন থেকে মুক্ত হতে সময় লেগেছিল দুইশো বছর। লর্ড কার্জন যবনিকার সুত্রপাত দেখেছে। এখনও কার্জন হল আছে। কিন্তু সাদা মুলারা শাসনের নামে শোষণ করেছে আড়াই শো বছর। বীর বাঙালিদের রুখতে পারেনি। আটচল্লিশ বাহান্ন উনসত্তর পৃথিবীর সবচাইতে বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করলো মুসলমানের লেবাসধারী বেঈমানরা। মীরজাফর ঘষেটি মিরন মোহাম্মদী বেগকে ছাড়িয়ে গেল। ওরা পুরুষ নয় কা-‘মহিলা’। কুকুর ছানারা বাংলার মানুষ চায়না বাংলার মাটি চায়। হায়রে নরপিশাচ, হায়েনা, তোরা কি একবারও ভেবে দেখলিনা অত্যাচারীরা কখনো টিকে থাকতে পারে না। স্রোতঃস্বীনি নদীতে বালির বাধ টিকে না- ওদের ষোল কলা পূর্ণ হলো যখন মা-বোনকে বেআব্রু করল। আল্লাহর গজবে তাসের ঘরের মত উড়িয়ে দিল মুক্তিযোদ্ধারা। মাত্র নয় মাস যুদ্ধে কি দেশ স্বাধীন হয়? সাড়ে সাত কোটি বাঙালি সবাই মুক্তি যোদ্ধা। কেহ সন্মুখ যুদ্ধ করেছে কেহ আশ্রয়ও দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। গুটি কয়েক রাজাকার, আল বদর, আল সামমস, পিচ কমিটি। আর এরা কোন পর্যায়ে পড়ে। এদের মানুষ বললে মানুষ লজ্জা পাবে। মানুষকে অপমান করা হবে। নিজ গ্রামগঞ্জে, শহর বন্দরের মা বোনদের ধরে এসে হুমার হাইওয়ান কালব। জানোয়ার কুত্তাদের হাতে তুলে দিয়ে আড়াই হাজার মাইল দূরের বেজন্মাদের হীন লালসার চরিতার্থ করে দোসর সেজে দোজখী চোখ দিয়ে উপভোগ করেছে। প্রয়ত গুন্ডার গ্রাস সত্য তুলে ধরেছে প্রয়ণ। সেই একাত্তরের পঁচিশে মার্চের ভয়াল রাত্রীতে কি ঘটেছিল তা কেমনে জানবে বর্তমান প্রজন্ম ও ভবিষ্যত প্রজন্ম। নেমকহারামের দল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে যেন শিক্ষার মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া যায়। মসলিন কাপড়ের মত বিলুপ্তি ঘটাতে। আরে নরপশু তোরা এতটা পাষ- হৃদয়ের অধিকারী হলি কি করে যে মানুষের রক্তে হলিতে মেতেছিলি। ধিক তোদের বংশধরেরাই তোদের মুখে থুথু দিবে একদিন না একদিন। যুদ্ধ চলাকালিন সময় যে যেদিকে পেরেছে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের অন্বেষায় ছুটেছে। বাড়ীতে বাড়ীতে পরিখা তৈরি করে ঝোপ ঝাড় পাহাড়ের অববাহিকাতে রাত কাটিয়েছে তবুও নিস্তার পায় নাই। রাজাকার পথ প্রদর্শক হয়ে মুক্তিযোদ্ধার গ্রামগঞ্জ বলে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিয়েছিল। কত নিরীহ মানুষ, অন্তঃসত্বার পেটে বুটের লাথিতে গর্ভজাত সন্তানকে থতলে দিয়েছে। লুটেরা হিন্দু মুসলিম বাছেনি। লুটপাট হত্যা ধর্ষণ আর বর্বরোচিত অত্যাচার অব্যাহত রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে করাচিতে জেল হাজতে রেখে চোখের সামনে কবর খুড়ে ভয়ভীতি দেখিয়েও দমাতে পারেনি। মুজিব পরিবার অন্তরীন...। বাঙালিরা সব সইতে পারে, পারে না মায়ের অপমান সইতে। ভোটে এ গাছ তো পেলোই ওপারের প্রচুর আম বাঙালিদের অনুকূলে এলো। এখন কি করণীয়, পায়তারার শেষ নেই, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ভাগ্য সুপ্রসন্ন। তবে বিধি বাম। হাজার তালবাহানা ওদের মাথায় ঘুন পোকা কুড়ে খায়। যখন দেখে সমূহ বিপদ সেই শ্বাশত চির অমীয়বানী তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শক্রুর উপর ঝাপিয়ে পরো রেসক্রস ময়দানে বিক্ষুব্ধ জনতা এক বাক্যে গাটছেড়া হয়ে এক বন্ধনে বিনাসূতায় মরণ মালায় রক্তের ফুলে আবদ্ধ হলো। বঙ্গবন্ধু বললেন, উনি আমার কথা শুনলেন না, তিনি শুনলেন ভুট্টুখানের কথা। অতর্কিত এক হামলায় ইপিআর ক্যাম্প ও সাধারণ জনতার উপর রাতের আধারে চোরাবালি রূপে নিধন করে লক্ষ প্রাণ। এক তরফা হত্যাযজ্ঞ। কি বর্বরতা, নৃশংসতা, পৈশাচিকতা। হায়নারা বাংলার মানুষ চায়না বাংলার মাটি চায়। এটি এক নির্মম হৃদয় বিদারক প্রেক্ষাপট- এক সঙ্গে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ আর মা বোনের সম্ভ্রম। কত হাজার লক্ষ প্রাণ, প্রাণের ভয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে গঞ্জে। অবশেষে শরনার্থী। সকল প্রহসনের বেড়াজাল ছিন্ন করে ‘নয় মাস’ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সহযোগিতা আর লাঠি-বটি-দা এর ক্যাচকা মাইর গেরিলা যুদ্ধ করে পাক হানাদার আর তাদের দোসর রাজাকার আল বদর, আল শামস এদের পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় কেতন উড়ায় বাংলায়। বিশ্বে মাতৃভাষা দিবস, আর লাল সবুজের পতাকা উড়ে আজ পতপত করে। সেই ছবি আজও মনে নাড়া দেয়। দাদা ভাই হাত বানাও পা বানাও ছোট্ট একটি বোন বানাতে পার কি ? সেই ছোট্ট কিশোরী বোনটিকে ভাইয়ের সামনে ধর্ষণ করে বেওনেট দিয়ে স্তন কেটে নেয়। কোথায় সেই ছবি ? বিজয় দয়া বা কারও দাক্ষিণা নয়, ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে কেনা অর্জিত এই বিজয়। হানাদার ও তাদের দোসরা যে বঙ্গবন্ধুর গায়ে একটি ফুলের টোকা দিতে সাহস পায়নি। অথচ যারা শপথ নিয়েছিল সর্বাবস্থায় সরকারের আনুগত্য স্বীকার করবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাকে ভালবেসেছিল, মানুষকে ভালবেসেছিল। কিসিঞ্জারের কটুক্তিকে ভুল প্রমাণিত করে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার রূপকার জনসাধারণের ন্যায্য অধিকার ঘরে ঘরে পৌছে সুখী সমৃদ্ধি দিক দিশারী। যার জীয়ন কাঠিতে জেগেছিল সাড়ে সাতকোটি বাঙালি, হৃদয়ে ছিল ভালবাসার ক্ষণি। এটা সইল না, গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলে। সেই গুটিকয়েক নরাধম বাংলার শিরোমণিকে শহীদের কাতারে সামিল করে দিল পুরা পরিবারকে। বিশ্বজাহানে আজও যার নাম সমাদৃত সে বাংলার কর্ণধার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। আজও কর্ণকুহরে বাজে স্বজন হারানো বেদনা আমার চেয়ে কেউ বেশি বোঝে না।

সম্পর্কিত সংবাদ

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

অর্থ-বাণিজ্য

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

শামছুর রহমান শিশির : পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকার তাঁত...

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : সিরাজগঞ্জ জেলা মটর মালিক সমিতির অাওতাভূক্ত ৪টি বাসের স্টার্টিং পয়েন্ট শাহজাদপুর করার দাবী শ...

নতুন এশিয়ার রূপায়ণ-বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভাবনা