বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
আমার বাসা থেকে বাজারের দুরত্ব খুব বেশি নয় তাই সবসময় বাজার শেষে ব্যাগ হাতে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি, শারিরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধির জন্য আমি সবসময় রিক্সা এড়িয়ে চলি। আজকে বাজার থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম সবসময়ের মত – এই সময় একজন রিক্সাচালক ডাকলেন বাবা কই যাবেন, আসেন নিয়ে যাই, আমি তার উত্তরে বললাম যে, লাগবে না, একটু সামনে এসেই মনে হলো আজকে তার রিক্সায় যাই, বয়স্ক মানুষটা এভাবে আমাকে ডাকল, তারপর ব্যাগ হাতে তার রিক্সার কাছে যেয়ে উঠে পরলাম, তার রিক্সা চালানের ধরন দেখে বুঝলাম সে এই পেশায় একেবারেই নতুন তাই আমি খু্বই কৌতুহল বশতঃ প্রশ্ন করলাম- চাচা: আপনি কতদিন হলো রিক্সা চালাচ্ছেন? উনি উত্তর দিলেন ২মাস, আমি বললাম আপনি কি আগে কোন পেশায় ছিলেন? উনি বললেন যে এটা খুবই করুন এবং দীর্ঘ ইতিহাস, আমি আরও উৎসাহিত হয়ে তাকে তার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলাম, বললাম সংক্ষিপ্তভাবে যদি আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করেন তাহলে আমরা কিছু শিখতে পারব এবং সেই শিক্ষা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে চেষ্টা করব। উনি বললেন আপনি একজন রিক্সাচালকের কাছ থেকে শিখতে চাচ্ছেন? আমি বললাম ব্যর্থতার গল্পগুলো থেকেই আমি সমসময় শেখার চেষ্টা করি। বাসার কাছে চলে আসলাম, রিক্সা থেকে নেমে নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিলে সে সেটা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।আমি বললাম অন্য যায়গায় রিক্সা না চালিয়ে আপনি আমার সাথে ১০মিনিট সময় গল্প করেন তাহলে নিশ্চয়্ই এই বাড়তি টাকা নিতে আপনার কোন সমস্যা হবে না। উনি রাজি হলেন- অতপর বলা শুরু করলেন, আমার নাম ওয়াজেদ আলী, বাড়ী নীলফামারি, একছেলে এবং তিন মেয়ে, ছেলে বিয়ে করেছে, মেয়েদেরও বিয়ে দিয়েছি, ধানের ষ্টক ব্যবসা ছিল তার, খুব সুখের সংসার ছিল তার, মেয়েদের বিয়ে দিতে যেয়ে অনেক টাকার যৌতুক দিতে হয়েছিল তাকে, তারপরও তার সংসারে অভাব ছিল না, সে তার ব্যবসায় বাকীতে ধান বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পায় না, সে যে সব কৃষকের ধান কিনেছিল তারা তার বাড়িতে এসে প্রতিনিয়ত তাদের পাওনা টাকা দিতে চাপ দেয়, এমতাবস্থায় সে তার সকল কৃষিজমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। জমি বিক্রি করার ফলে তার ছেলে তাদের সাথে ঝগড়া করে আলাদা হয়ে যায়, সে কোন খোজখবর রাখে না এবং টাকা পয়সা দেয় না। এরপর শুরু হয় করোনার তান্ডব, পেটের দায়ে ঢাকা চলে আসে, ঢাকা এসে রিক্সাভাড়া যা পায় তা দিয়ে নিজে চলে এবং তার স্ত্রীর জন্য টাকা পাঠায়, পরিশেষে বলে আল্লাহর রহমতে ভালআছি, সুস্থ আছি।মহান স্রষ্টার উপর ভরসাই তাদের বেচে থাকার শক্তি। বাসায় ফেরার কিছুক্ষন পর কলিংবেলের শব্দ, দরজা খুলতেই দেখি আমার স্ত্রীর কাজের সহকারী রুমা, তাকে দেখেই বুঝলাম যে সে তার মাসিক বেতন নিতে এসেছে, করোনার সময়ে অনেকের মতই আমরাও তাকে বিনা কাজে বেতন দিয়ে যাচ্ছি।তার বিধস্ত চেহারা দেখেই বাসার ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিলাম , বাসায় এসে আমার উপস্থিতিতে তার বস মানে আমার স্ত্রীর কাছে বলতে শুরু করল যে , আপা এই করোনায় আমাদের অবস্থা একেবারেই খারাপ, আমি ৪টা বাসায় কাজ করে প্রায় ৬-৮ হাজার টাকা আয় করতাম, আমার স্বামী মালবাহী ভ্যান চালিয়ে এবং বিভিন্ন যায়গায় রান্নাবান্নার কাজ করে ৮-১০হাজার টাকা আয় করত। দুজনেই আয় দিয়ে আমাদের একটা ছেলে হাসান এবং একটা মেয়ে লাবনী কে নিয়ে সংসার ভালই চলছিল। করোনার মধ্যে সবাইতো আমাকে বিনাকাজে বেতন দিচ্ছে না এবং কাজও করাচ্ছে না, এদিকে আমার স্বামীর কোন কাজ নেই, বাসাভাড়া দিতে হয় ৬হাজার টাকা এবং খাওয়া দাওয়া সবমিলেয়ে ১২-১৩হাজার টাকা লাগে ঢাকা শহর থাকার জন্য কিন্তু যে টাকা পাচ্ছি তার সাথ জমানো টাকা মিলিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি। টাকা পয়সার অভাব অনটনের কারনে আমার স্বামী সারাক্ষন শুধু ঝগড়া করে, মাইর দেয়, এই বলে কান্নাশুরু করে দিল, চোখেঁ মুখেঁ আঘাতের দাগ স্পষ্ট। ফেসবুকে খুব ভাল কনটেন্ট লেখক মিস ফারহানা আশা করোনা শুরু হওয়ার পর তার ফেসবুকে লিখেছিলেন ” করোনা বুয়াকে বানাইয়াছ কারিনা এবং আমারে বানাইয়াছো জরিনা’ সেদিন ভালই লেগেছিল এইভেবে যে, করোনার কারনে বুয়ারা অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও কারিনার মত চলাফেরা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে তারা আগের জরিনার থেকেও খারাপ সময় কাটাচ্ছে। রুমা জানাল যে সে আর ঢাকা থাকবে না, কালকে বাড়ি চলে যাবে। তাকে কিছু সান্তনা দিল তার বস এবং স্বাধ্যমত সহযোগিত করল। পরিশেষে সে বলল যে স্বামী যদি মারধোর না করত তাহলে সে অল্প খেয়ে ঢাকাতেই টিকে থাকার চেষ্টা করত। ওয়াজেদ আলী, রুমার মত লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ হতাশাগ্রস্থ, স্বল্প আয়ে কোনরকম টিকে আছে, এভাবে চলতে থাকলে তারা সামনের দিনগুলোতে টিকে থাকতে পারবে কি না জানিনা তবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপর ভরসাই যেন তাদের বেচে থাকার একমাত্র আশা ভরসা। লেখকঃ মোঃ তারিকুল ইসলাম সম্পাদক ও প্রকাশক তাসিনকো নিউজ ২৪ ডটকম

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে গোসল করা নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে গোসল করা নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জলাশয়ে গোসল করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। বেলাল প্রামানিক ও এলাকাবাসী সূ...

করোনায় আশার আলো দেখাচ্ছে ভারতের ভ্যাকসিন

আন্তর্জাতিক

করোনায় আশার আলো দেখাচ্ছে ভারতের ভ্যাকসিন

ভারতের প্রথম সাম্ভব্য করোনাভ্যাকসিন কোভ্যাকসিন মানবশরীরে ট্রায়ালের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়ার ছাড়পত্র পেল...

শাহজাদপুরে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত এমপি স্বপন

জাতীয়

শাহজাদপুরে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত এমপি স্বপন

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিল্প উপমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান স্বপন সবাইকে শোক...

নতুন নোটেও থাকছে শেখ মুজিবের ছবি

অর্থ-বাণিজ্য

নতুন নোটেও থাকছে শেখ মুজিবের ছবি

ছোট এসব নোটের পাশাপাশি বাজারে ছাড়া ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোটও বিদ্যমান ডিজাইনের বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন...

খরস্রোতা করতোয়া শুকিয়ে এখন ফসলের মাঠ!

অর্থ-বাণিজ্য

খরস্রোতা করতোয়া শুকিয়ে এখন ফসলের মাঠ!

শামছুর রহমান শিশির : ভারতের মরুকরণ প্রক্রিয়ার যাতাকলে পড়ে এক সময়ের প্রবলা, প্রমত্তা, প্রগলভা, সমুদ্রের যোগ্য সহচারী, স্র...

শিমুল হত্যা: আবারও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন স্ত্রী।

অপরাধ

শিমুল হত্যা: আবারও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন স্ত্রী।

অনলাইন নিউজ এডিটর : সমকালের সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যার ১৭ মাস পার হলেও এখনও বিচার শুরু হয়নি। এতে চরম উদ্বেগ, উৎকন...