শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
আমার বাসা থেকে বাজারের দুরত্ব খুব বেশি নয় তাই সবসময় বাজার শেষে ব্যাগ হাতে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি, শারিরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধির জন্য আমি সবসময় রিক্সা এড়িয়ে চলি। আজকে বাজার থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম সবসময়ের মত – এই সময় একজন রিক্সাচালক ডাকলেন বাবা কই যাবেন, আসেন নিয়ে যাই, আমি তার উত্তরে বললাম যে, লাগবে না, একটু সামনে এসেই মনে হলো আজকে তার রিক্সায় যাই, বয়স্ক মানুষটা এভাবে আমাকে ডাকল, তারপর ব্যাগ হাতে তার রিক্সার কাছে যেয়ে উঠে পরলাম, তার রিক্সা চালানের ধরন দেখে বুঝলাম সে এই পেশায় একেবারেই নতুন তাই আমি খু্বই কৌতুহল বশতঃ প্রশ্ন করলাম- চাচা: আপনি কতদিন হলো রিক্সা চালাচ্ছেন? উনি উত্তর দিলেন ২মাস, আমি বললাম আপনি কি আগে কোন পেশায় ছিলেন? উনি বললেন যে এটা খুবই করুন এবং দীর্ঘ ইতিহাস, আমি আরও উৎসাহিত হয়ে তাকে তার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলাম, বললাম সংক্ষিপ্তভাবে যদি আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করেন তাহলে আমরা কিছু শিখতে পারব এবং সেই শিক্ষা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে চেষ্টা করব। উনি বললেন আপনি একজন রিক্সাচালকের কাছ থেকে শিখতে চাচ্ছেন? আমি বললাম ব্যর্থতার গল্পগুলো থেকেই আমি সমসময় শেখার চেষ্টা করি। বাসার কাছে চলে আসলাম, রিক্সা থেকে নেমে নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিলে সে সেটা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।আমি বললাম অন্য যায়গায় রিক্সা না চালিয়ে আপনি আমার সাথে ১০মিনিট সময় গল্প করেন তাহলে নিশ্চয়্ই এই বাড়তি টাকা নিতে আপনার কোন সমস্যা হবে না। উনি রাজি হলেন- অতপর বলা শুরু করলেন, আমার নাম ওয়াজেদ আলী, বাড়ী নীলফামারি, একছেলে এবং তিন মেয়ে, ছেলে বিয়ে করেছে, মেয়েদেরও বিয়ে দিয়েছি, ধানের ষ্টক ব্যবসা ছিল তার, খুব সুখের সংসার ছিল তার, মেয়েদের বিয়ে দিতে যেয়ে অনেক টাকার যৌতুক দিতে হয়েছিল তাকে, তারপরও তার সংসারে অভাব ছিল না, সে তার ব্যবসায় বাকীতে ধান বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পায় না, সে যে সব কৃষকের ধান কিনেছিল তারা তার বাড়িতে এসে প্রতিনিয়ত তাদের পাওনা টাকা দিতে চাপ দেয়, এমতাবস্থায় সে তার সকল কৃষিজমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। জমি বিক্রি করার ফলে তার ছেলে তাদের সাথে ঝগড়া করে আলাদা হয়ে যায়, সে কোন খোজখবর রাখে না এবং টাকা পয়সা দেয় না। এরপর শুরু হয় করোনার তান্ডব, পেটের দায়ে ঢাকা চলে আসে, ঢাকা এসে রিক্সাভাড়া যা পায় তা দিয়ে নিজে চলে এবং তার স্ত্রীর জন্য টাকা পাঠায়, পরিশেষে বলে আল্লাহর রহমতে ভালআছি, সুস্থ আছি।মহান স্রষ্টার উপর ভরসাই তাদের বেচে থাকার শক্তি। বাসায় ফেরার কিছুক্ষন পর কলিংবেলের শব্দ, দরজা খুলতেই দেখি আমার স্ত্রীর কাজের সহকারী রুমা, তাকে দেখেই বুঝলাম যে সে তার মাসিক বেতন নিতে এসেছে, করোনার সময়ে অনেকের মতই আমরাও তাকে বিনা কাজে বেতন দিয়ে যাচ্ছি।তার বিধস্ত চেহারা দেখেই বাসার ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিলাম , বাসায় এসে আমার উপস্থিতিতে তার বস মানে আমার স্ত্রীর কাছে বলতে শুরু করল যে , আপা এই করোনায় আমাদের অবস্থা একেবারেই খারাপ, আমি ৪টা বাসায় কাজ করে প্রায় ৬-৮ হাজার টাকা আয় করতাম, আমার স্বামী মালবাহী ভ্যান চালিয়ে এবং বিভিন্ন যায়গায় রান্নাবান্নার কাজ করে ৮-১০হাজার টাকা আয় করত। দুজনেই আয় দিয়ে আমাদের একটা ছেলে হাসান এবং একটা মেয়ে লাবনী কে নিয়ে সংসার ভালই চলছিল। করোনার মধ্যে সবাইতো আমাকে বিনাকাজে বেতন দিচ্ছে না এবং কাজও করাচ্ছে না, এদিকে আমার স্বামীর কোন কাজ নেই, বাসাভাড়া দিতে হয় ৬হাজার টাকা এবং খাওয়া দাওয়া সবমিলেয়ে ১২-১৩হাজার টাকা লাগে ঢাকা শহর থাকার জন্য কিন্তু যে টাকা পাচ্ছি তার সাথ জমানো টাকা মিলিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি। টাকা পয়সার অভাব অনটনের কারনে আমার স্বামী সারাক্ষন শুধু ঝগড়া করে, মাইর দেয়, এই বলে কান্নাশুরু করে দিল, চোখেঁ মুখেঁ আঘাতের দাগ স্পষ্ট। ফেসবুকে খুব ভাল কনটেন্ট লেখক মিস ফারহানা আশা করোনা শুরু হওয়ার পর তার ফেসবুকে লিখেছিলেন ” করোনা বুয়াকে বানাইয়াছ কারিনা এবং আমারে বানাইয়াছো জরিনা’ সেদিন ভালই লেগেছিল এইভেবে যে, করোনার কারনে বুয়ারা অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও কারিনার মত চলাফেরা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে তারা আগের জরিনার থেকেও খারাপ সময় কাটাচ্ছে। রুমা জানাল যে সে আর ঢাকা থাকবে না, কালকে বাড়ি চলে যাবে। তাকে কিছু সান্তনা দিল তার বস এবং স্বাধ্যমত সহযোগিত করল। পরিশেষে সে বলল যে স্বামী যদি মারধোর না করত তাহলে সে অল্প খেয়ে ঢাকাতেই টিকে থাকার চেষ্টা করত। ওয়াজেদ আলী, রুমার মত লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ হতাশাগ্রস্থ, স্বল্প আয়ে কোনরকম টিকে আছে, এভাবে চলতে থাকলে তারা সামনের দিনগুলোতে টিকে থাকতে পারবে কি না জানিনা তবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপর ভরসাই যেন তাদের বেচে থাকার একমাত্র আশা ভরসা। লেখকঃ মোঃ তারিকুল ইসলাম সম্পাদক ও প্রকাশক তাসিনকো নিউজ ২৪ ডটকম

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শাহ মখদুমের পূণ্যভূমি ও কবিগুরু রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্কল...

শাহজাদপুরের চা দোকানী হত্যার রহস্য উদঘাটিত

অপরাধ

শাহজাদপুরের চা দোকানী হত্যার রহস্য উদঘাটিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : শাহজাদপুর গালা ইউনিয়নের ভেড়াখোলা গ্রামে এবছর ১৯মার্চে ডোবা থেকে জামাত আলী নামের এক চা দোকানীর লাশ উ...

দিনে গরম রাতে শীত- বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ

স্বাস্থ্য

দিনে গরম রাতে শীত- বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ

চন্দন কুমার আচার্য, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ দিনে গরম রাতে শীত! সিরাজগঞ্জ জেলায় ঘরে ঘরে সর্দি জ¦র-ডায়রিয়াসহ বিভিন্...

বিলুপ্ত প্রায় ভিসিআর !

তথ্য-প্রযুক্তি

বিলুপ্ত প্রায় ভিসিআর !

শামছুর রহমান শিশির : প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের আধুনিকায়নের পদতলে পিষ্ট হয়ে এক সময়ের বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় নানা ইলেকট্রনিক্স স...

শাহজাদপুর চৌকি আদালত পরিদর্শণে বিচারপতি মো: নুরুজ্জামান

আইন-আদালত

শাহজাদপুর চৌকি আদালত পরিদর্শণে বিচারপতি মো: নুরুজ্জামান

শামছুর রহমান শিশির ও এমএ হান্নান : রোববার সকালে শাহজাদপুর চৌকি আদালত পরিদর্শণ করলেন বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভ...

মৃত্যু পথযাত্রী দুধের শিশু আলিফকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন

মৃত্যু পথযাত্রী দুধের শিশু আলিফকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মাদলা মধ্যপাড়া মহল্লার হতদরিদ্র দিনমজুর সাদ্দাম হোসেনের ও মুনিরা খাতুনের একমাত্র সন্তান আল...