বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শামছুর রহমান শিশির,বিশেষ প্রতিবেদক : পুলিশ সম্পর্কে জনসাধারণের গতানুগতিক মনোভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক! পুলিশ মানেই আতংক, পুলিশ মানেই শোষক- এমন কথা দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় প্রায়শই। গুটিকয়েক অসাধু পুলিশ সদস্যের বিতর্কিত কিছু কর্মকান্ড দেশের গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্টকেই বিতর্কিত করে সমালোচনার ঝড়ের মুখে ঠেলে দেয়। তবে 'পুলিশ মানেই বিদ্বেষী মনোভাব'- লোকালয়ে জনশ্রুতি বা প্রচার অনেকটা এমন শোনা গেলেও সেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই আবার এমন কিছু বিরল প্রশংসনীয় কাজ করেন, বিরল মহানুভবতা প্রদর্শণ করেণ যা দেখে বা শুনে প্রশান্তির তৃপ্তিতে জুড়িয়ে যায় জাতির মন প্রাণ! যা গোটা পুলিশ বাহিনীকে করে তোলে গর্বিত। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের জামিরতা উত্তরপাড়া মহল্লায় ১০/১২ ফুট দীর্ঘ জীর্ণশীর্ণ ছাপড়া ঘরে স্ত্রী ও ৪ মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলছিলো হৎদরিদ্র কুলি আজাহারের। আজাহার-রোকেয়া দম্পত্তির ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে ৬ টি মেয়ে জন্ম নিলেও ২ মেয়ে মারা যায় বেশ আগেই। অবশিষ্ট ৪ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ে আবার বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী। বিধিবাম! প্রায় বছরখানেক অাগে অকষ্মাৎ অসহায় আজাহারের ১৮ বছর বয়সী বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে বুকির ওপর প্রতিবেশী মালয়েশিয়া ফেরত লম্পট আলমের (৩৫) কুদৃষ্টি পড়ে। আলমের বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে ও আলমের দীর্ঘদিনের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতে বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বুকিকে কৌশলে তার বাড়িতে নিয়ে বৌ সাজিয়ে আকারে ঈঙ্গিতে বিয়ে করবে, গলায় বড় সোনার মালা পরিয়ে দেবে-এমনটা বুঝিয়ে প্রতিবন্ধীর মুখ চেপে ধরে সর্বস হরণ করে। প্রতিবন্ধীর ওপর এমন বর্বরোচিত আচরণ চলতে থাকে কয়েকদিন ধরে। লম্পট আলম প্রতিবন্ধীকে গর্ভনিরোধ বড়ি কিনে খাওয়াও শিখিয়ে দেয় গোপনে। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবন্ধীর অসহায় হৎদরিদ্র মা রোকেয়া সুবিচারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচারের পরিবর্তে পান নানা গঞ্জনা আর অপবাদ। মাসখানেক সময় দ্বারে দ্বারে ঘুরতেই কেটে যায় মা রোকেয়ার। পেশাগত দায়িত্বপালনকালে সরেজমিন জামিরতা পরিদর্শণকালে ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হই। সঙ্গীয় সহকর্মী শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি, মানবাধিকার কর্মী, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার সাংবাদিক আবুল কাশেম ও দিনকালের স্থানীয় প্রতিনিধি আল আমিনসহ প্রতিবন্ধীর বাড়ি গিয়ে বর্বরোচিত ঘটনাটি জানতে পারি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামপ্রধানদের প্রাষাণ হৃদয়ে তা বিন্দু বিসর্গও স্পর্শ করেনি। সাংবাদিক আবুল কাশেম, আল আমিন ও আমি এ ৩ জন শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ খাজা গোলাম কিবরিয়াকে অবগত করলে তাৎক্ষণিক তিনি এসআই কমল কুমার দেবনাথকে দায়িত্ব দেন ঘটনাটি তদন্তের, আর আমাদের সহযোগীতার অনুরোধ করা হয় । এরই মধ্যে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। এসআই কমল ও আমরা ৩ জন কমপক্ষে ৭/৮ বার সরেজমিন জামিরতা গেলেও স্থানীয় চতুর ক'জন জনপ্রতিনিধিদের দেয়া মিথ্যা আশ্বাসে ফিরে আসতে বাধ্য হই প্রতিকার ছাড়াই। একপর্যায়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ খাজা গোলাম কিবরিয়া নিজেই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। লম্পট আলমের লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের থানায় ডেকে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রতিকারের ভার অর্পণ করেন উভয়পক্ষের ওপর। আলোচনা সাপেক্ষে লম্পট আলম পক্ষ বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী বুকির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বুকির বিয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা বুকির পরিবারকে দিতে সম্মত হলে উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে পুরো ৫০ হাজার টাকা বুকির মায়ের হাতে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় গ্রাম প্রধান নামধারী কতিপয় টাউট টাইপের লোকজন আলমের কাছ থেকে দফায় দফায় মোটা টাকা খেয়ে বিচার প্রাপ্তি বাধাগ্রস্থ ও কালক্ষেপন করতে থাকে। এমনকি ধর্ষিত প্রতিবন্ধী পরিবারকে দেয়ার শর্তে ওই ৫০ হাজার টাকা আলমের কাছ থেকে জনৈক সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধানবর্গ নিজেদের কাছে বেশ কদিন আটকে রাখে। আমানতী ওই অর্থের একটা অংশ ভেঙ্গেও ফেলে তারা। এসব ঘটনা জানতে পেরে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জের কড়া নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এসআই কমলের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে ৫০ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী পরিবারকে ফেরত দিতে অবশেষে বাধ্য হয়। শুধুমাত্র থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ খাজা গোলাম কিবরিয়ার মানবিক হস্তক্ষেপে ওই টাকা দিয়েই সম্প্রতি বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বুকির শাহজাদপুরের এক সুহৃদ ভ্যানচালকের সাথে বিয়ে হয়েছে। সুখে শান্তিতে নবদম্পত্তি ঘরসংসার করছে। এ বিষয়ে প্রতিবন্ধীর মা রোকেয়া জানান,'এক ট্যাকাও খরচ হয়নি আমার। থানায় কয়েকবার মেয়েসহ গ্যেছি, আইছ্যি, বড়স্যার ভ্যানভাড়াও দিয়ে দিয়েছেন। স্যারের কারণে অসহায় প্রতিবন্ধী মিয়্যাটা আইজ সুখে শান্তিতে স্বামীর সাথে ঘর সংসার করছে। আর সাংবাদিক ব্যাটারা যা কইরল্যা, তার ঋণ কোনোদিন শোধ হবার নয়। আল্লাহ আপনেগরো ভালো করুক।' জনশ্রুতি রয়েছে, পুলিশ নাকি টাকা ছাড়া এক পাও নড়ে না! কিন্তু অসহায় এক প্রতিবন্ধীর জন্য থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ খাজা গোলাম কিবরিয়া যে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসে বিরল অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে এলাকার বিজ্ঞ ও সুধীমহল অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

ইতালি নামতে না পেরে দেশে ফিরলেন তারা, থাকবেন কোয়ারেন্টাইনে

আন্তর্জাতিক

ইতালি নামতে না পেরে দেশে ফিরলেন তারা, থাকবেন কোয়ারেন্টাইনে

ইতালিতে যাওয়া ১৪৭ প্রবাসী বাংলাদেশিকে বিমানবন্দরে নামতে না দিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির সরকার। গতকাল রাত আড়াইটার...

সিরাজগঞ্জের ছেলে ও কিশোরগঞ্জের মেয়ে

বিনোদন

সিরাজগঞ্জের ছেলে ও কিশোরগঞ্জের মেয়ে

টেগর গ্যেটে পিস ইউনির্ভাসিটি থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়// প্রত্যাশা-প্রতিক্ষার দুই দশক পর শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

টেগর গ্যেটে পিস ইউনির্ভাসিটি থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়// প্রত্যাশা-প্রতিক্ষার দুই দশক পর শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

শাহজাদপুর উপজেলায় কর্মকর্তাদের মাঝে ট্যাব বিতরণ