

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ও রাউতারা গ্রাম দুটিকে বলা হয় পুকুরের গ্রাম। গ্রাম দুটির একদিকে রয়েছে বড়াল নদী অন্য পাশে রয়েছে গোহালা নদী । এ গ্রাম দুটিতে রয়েছে অনেক জেলে পরিবার। তাদের কাছে থেকে জানা যায় মাছ চাষের পাশাপশি হিন্দু ধমাম্বলীরা বার মাস পুকুরের জল দিয়ে পূজা অর্চণা জন্য পুকুর খনন করে। পুকুর খননের পর গ্রামের মানুষ নিত্যদিনের কাজে পুকুরের পানি ব্যবহার করতো ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পোতাজিয়া ও রাউতারা এলাকাটি ছিল হিন্দু বসতিপূর্ণ এলাকা। বহুকাল পূর্বে রাউতারার ঘোষ পরিবারের পক্ষ থেকে জনহিতকর কাজের অংশ হিসাবে রাউতারার পূর্বপাড়ার ১ একর ৩৫ শতাংশ জায়গার উপর বিশাল পুকুর খনন করা হয় । এ ছাড়া পোতাজিয়া গ্রামে একই সময় পুকুর খননের হিড়িক পরে যায় । শুধু পোতাজিয়াতেই ৫১টি পুকুর খনন করা হয়। রাউতারায় ১ একর ৩৫ শতাংশ জায়গার উপর যে পুকুরটি খনন করা হয় সেটি খনন করেন জোগেষ চন্দ্র ঘোষ । তিনি এলাকায় জোগেষ বাবু নামে পরিচিত । ১৯৪৬ সালে তিনি মারা যান ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জোগেষ ঘোষের বড় ভাই গৌর ঘোষ। গৌর ঘোষের ছেলে সন্তোষ ঘোষ। তার ছেলে শোভন ঘোষ ও তার সহদরেরা করোনার সুযোগ নিয়ে প্রাচীন এই পুকুরটি ভরাট করলে এ নিয়ে এলাকায় হৈ-চৈ পরে যায় । পুকুরটি ভরাটের প্রতিবাদ জানিয়ে পুকুর খননকারী জোগেষ ঘোষের উত্তরসূরীরা পুকুরটি পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন স্থানে লিখিত আবেদন করলেও পুকুর ভরাটকারিদের সাথে পেরে উঠতে পারছেন না । এজন্য তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে । অভিযোগ রয়েছে ঘোষ পরিবারের শোভন ও তার সহদরেরা পুকুরের জায়গা বিক্রি করায় পুকুরের একটি বিশাল অংশ বেহাত হতে চলেছে ।
পুকুর ভরাট নিয়ে কথা হয় রাউতারার মৎস্যজীবি পরেশ হালদারের ছেলে উত্তম হালদার ও আবুল হোসেনের ছেলে আবু তালেবের সাথে । তারা জানান, ভারত পাকিস্থান ভাগের আগে ঘোষ পরিবারের জোগেষ চন্দ্র ঘোষ রাউতারাতে তিনটি পুকুর খনন করেন। এর মধ্যে ১ একর ৩৫ শতাংশ জায়গার উপর একটি বিশাল পুকুর খনন করেন । আমরা জানি এটা কালীর পুকুর হিসাবে। কালী প্রয়াত জোগেষ চন্দ্র ঘোষের মেয়ে। ঘোষ পরিবারের অন্য শরীক জোগেষ ঘোষের বড় ভাই গৌর ঘোষের নাতি সুবীর কুমার ঘোষ (কালা বাবু) ও শোভন ঘোষ এই দুই সহদর মিলে করোনা কালিন সময় ড্রেজার দিয়ে পুকুরটি ভরাট করে। ভরাটকৃত জায়গা এখন বিক্রি করা হচ্ছে ।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, তৎকালিন অবিভক্ত ভারতবর্ষে বৃহত্তর পাবনা জেলার শাহজাদপুর থানার পোতাজিয়া ও রাউতারা গ্রামের জোতদার পরিবারের (বাবুরা নামে পরিচিত) পক্ষ থেকে এ পুকুরগুলো খনন করা হয়। অধিকাংশ পুুকুর খনন করেন ঘোষ পরিবারের লোকজন। তখন থেকেই গ্রাম দুইটি পুকুরের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । এ সব পুকুর বা জলাধার গুলো দেখতে এক সময়ের ভ্রমন পিপাসুরা বর্ষা এলেই বজড়া নৌকায় চরে এখানে বেড়াতে আসতেন । বজড়া নৌকা গুলো ছিল পোতাজিয়া ও রাউতারা গ্রামেরই। সেগুলো এখন সবই অতীত । এখনও পোতাজিয়া গ্রামের পুকুর গুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেলেও রাউতারার তিনটি পুকুরের বিশাল একটি পুকুর টাকার লোভে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ভরাটের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি । রাউতারা প্রাচীন এই পুকুরটি ভরাট নিয়ে কথা হয় রাউতারার ঘোষ পরিবারের অবসর প্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ প্রণব কুমার ঘোষের সাথে । তিনি এলাকায় পনু বাবু নামেই পরিচিত। তিনি জানান, ভরাটকৃত পুকুরটির পুরো জায়গা আমাদের । তিনি আরও জানান, করোনার মধ্যে সবাই যখন বিপদগ্রস্থ তখন আমারই জ্ঞ্যাতিগোষ্ঠির লোকেরা প্রাচীন এই শতবর্ষী পুকুরটি ভরাট করে। পুকুর ভরাটের কথা যখন জানতে পারি তখন আমি ঢাকায় । করোনা মহামারির কারনে আমি ঢাকা থেকে সে সময় আসতে পারিনি । এই সুযোগটিই নিয়েছে আমার গ্যাতিগোষ্ঠির লোকজন । এখন তারাই ভরাটকৃত পুকুরের জায়গা বিক্রিও করছে। আর এগুলো হচ্ছে জাল কগজের মাধ্যমে । জানা গেছে, পুকুর ভরাটের বিষয়টি অবহিত করে ডাঃ প্রণব কুমার সাহা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পুকুরটি পুনরুদ্ধারের জন্য আবেদন করেছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হলে সহকারি কমিশনার ভুমি ও ইউএনও’র পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয় ।
উপজেলা নির্বার্হী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা জানান, যারা পুকুর ভরাট করেছেন তারা আইনের বড়খেলাপ করেছে । তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে । এদিকে শোভন কুমার ঘোষ জানান, ডাঃ প্রণব কুমার ঘোষের সাথে জমি জমা বাটোয়রা করেই দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে পুকুরটি ভরাট করা হয় । তবে পুকুরটিতে আমাদের ৫৪ শতাংশ জায়গা রয়েছে। দাদা প্রনব কুমার ঘোষের সাথে আলোচনা করেই পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করি। এখন তিনি কেন এর বিপক্ষে অবস্থান নিলেন তা আমাদের বোধগম্য নয় ।
সম্পর্কিত সংবাদ

দিনের বিশেষ নিউজ
রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি ভাঙচুরের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ : সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি
শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছাড়িবাড়িতে প্রবেশ করে অডিটোরিয়ামের

শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে মেসার্স তৃপ্তি জর্দ্দা ফ্যাক্টরির নকল জর্দ্দা তৈরী প্রতিরোধে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শাহজাদপুর গঙ্গা প্রসাদ এলাকায় অবস্থিত তৃপ্তি জর্দ্দা ফ্যাক্টরিতে মেসার্স তৃপ্তি জর্দ্দ...

শাহজাদপুর
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন
২৫ বৈশাখ ১৪৩২ (৮ মে ২০২৫ ) বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে

তৃতীয় প্রজন্মের ভাবনা
শাহজাদপুরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চান ইউটিউবার শাহরিয়ার
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের নাম মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। তবে এখানে ঘুরে দেখার মতো আকর্ষণীয় অনেক জায়গা রয়েছে সেটি অনেকেই...

শাহজাদপুর
শাহজাদপুর গাছ থেকে উদ্ধার হলো ১১ ফুট অজগর সাপ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বাড়ির গাছ থেকে ১১ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে।আজ (সোমবার) দুপুরে উপজেলার গালা ইউনিয়নের বিন...

অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!
এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পূর্ব পাশে অবস্থিত পিডিবির ৩টি ও বেসরকারি ১টি মিলে মো...