বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং বর্ষনে মধ্য আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যায় জনভোগান্তির সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার সহস্রাধিক গো-খামার। গবাদি পশুর খাবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন শাহজাদপুরের বন্যাকবলিত খামারীরা। বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় এসব গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। বন্যায় উপজেলার অর্ধলক্ষ পরিবার ও ৭০০’শ খামারের প্রায় তিন লাখ গবাদি পশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বানভাসিরা বিভিন্ন রাস্তা, উঁচু স্থান ও বাঁধে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের গচ্ছিত রাখা খড়ও। বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ম আয়ের খামারীরা। গো খাদ্যের সংকটে ক্রমেই গবাদিপশু দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতে দুশ্চিন্তায় কৃষক ও খামারিরা।

তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় গো-খাদ্যের সংকট মোকাবিলায় খড় প্রক্রিয়াজাত করে গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য তাদের ভ্যাটেনারি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।

প্রতি মন খড় (বিচালী) বিক্রি হচ্ছে ৫ শ’ টাকায়। কাচা ঘাস না পাওয়ায় অনেক খামারী খাল বিল ডোবা নালা থেকে কচুরী পানা সংগ্রহ করে গবাদী পশুকে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে।

উপজেলার শতাধিক গরুর বাথান ও ৩ হাজার গোচারণ ভূমি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘাসের অভাব ও এলাকার  প্রায় ৩ লাখ গবাদি পশুর খাদ্যাভাব তীব্র আকার ধারন করেছে। বন্যার সময় বেশীর ভাগ এলাকা দীর্ঘ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে ফসলসহ তৃণজাতীয় খাদ্য স্বমুলে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে বন্যাদুর্গত এলাকায় গবাদী পশুর চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। স্বল্প আয়ের খামারীরা সারাদিন মাঠে মাঠে ঘুরেও গো-খাদ্যের কাচা ঘাসের যোগান দিতে পারছে না। অনেকেই সংসার খরচের পাশাপাশি ধানের খড় (বিচালী) কিনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। চরাঞ্চলের অনেক খামারী গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়াকে অর্ধাহারে অনাহারে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে অনেক খামারী তাদের গৃহপালিত পশু বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সরেজমিন উপজেলার তালগাছি, গাড়াদহ, চরনবিপুর, টেপড়ি, নরিনা, বাতিয়া, যুগ্নীদহ, টেটিয়ারকান্দা, কায়েমপুর ব্রজবালা, পোতাজিয়া, রেশমবাড়ী, চৌচির, বাড়াবিল, দাবাড়িয়া, দাড়িয়াপুর, পোরজনা, কৈজুরি, পাতালিয়াপাড়া, উল্টাডাব, জামিরতা, সোনাতনী, বানতিয়ার, বাঘাবাড়ী, চরাচিথুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বেশ কিছু মাঝারি খামারিদের সাথে কথা হলে তারা প্রতিবেদকে জানায় অন্তত যদি তাদের ১৫দিনের গো-খাদ্য সরকারি অথবা বেসরকারি ভাবে সহযোগীতা পাই তাহলে এই আকস্মিক বন্যায় যে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে তা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।

পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ী গ্রামের বড় খামারী মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী জানান, তার গ্রামে সব মিলে প্রায় ২’শ খামারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরু লালন পালন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি প্রতিবেদককে জানান তার নিজেরও পাঁচ শতাধিক গরুর একটি খামার রয়েছে। খৈল-ভুষি ও খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দুধের দাম কম থাকায় খামারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে চারণ ভুমির ঘাস সম্পুর্ন ভাবে বিনষ্ট হওয়ায় চরাঞ্চলে গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত স্বল্প আয়ের লোকজন যেকোন ভাবেই হোক তাদের নিজেদের খাদ্যাভাব মেটাতে পারলেও গবাদী পশুর খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতি মন খড় ৫’শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তারা গবাদী পশুর খাবারের ব্যবস্থা করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সকল সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মীর কাওছার হোসেন জানান, বন্যা আসার আগে আমি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কর্মী টিম নিয়ে কিভাবে ঢোলের মত গর্ত করে তিন মাস যাবৎ খাদ্য সংরক্ষন করা যায় তা প্রতিটা ইউনিয়নে খামারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়েছে। আমি এবং আমার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কর্মী টিম সব সময় খামারীদের পশু তদারকি করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন সহযোগীতা পাইনি। গতবার উপজেলা প্রশাসন থেকেও পেয়েছিলাম এবার এখন পর্যন্ত কোন ত্রান সহযোগীতা পাইনি। তবে সহযোগীতার জন্য আবেদন করা হয়েছে। ত্রাণ সহযোগীতা পেলে ছোট ও মাঝারী খামারীদের মাঝে বিতারণ করা হবে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার গো-খামারীদের জন্য কোন ত্রাণ সহযোগীতা আসেনি। তবে আবেদন করা হয়েছে সহযোগীতা এলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে বিতারণ করা হবে।

 এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ মোঃ শামসুজ্জোহা জানান, শাহজাদপুর একটি গবাদীপশু সমৃদ্ধ এলাকা। এই গবাদী পশুর খামারের উপর প্রায় ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

করোনায় আক্রান্ত নায়িকা পূর্ণিমা

বিনোদন

করোনায় আক্রান্ত নায়িকা পূর্ণিমা

এ নায়িকা জানান, গত সপ্তাহে কিছুটা উপসর্গ পেয়েছিলেন তিনি। সে কারণে করোনা টেস্ট করান। তার ফল পেয়েছেন পজিটিভ। আপাতত তিনি বা...

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

জাতীয়

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

আগামীকাল রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে একযোগে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব থেকে রাজীব রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার

অপরাধ

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব থেকে রাজীব রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার

মাদক ব্যবসা, অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণের ভ...

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...