বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
5 আবুল বাশার :- ১০ এপ্রিল রাতে গোপন বেতাকেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণার পরপরই তাজউদ্দীন আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডের অন্যান্য নেতাদের খোঁজে বের হয়ে পরেন। সে সময় সীমান্ত এলাকায় সহজে যাতায়াতের জন্য ইন্দিরা গান্ধী নতৃবৃন্দের জন্য একটি ছোট ডাকোটা প্লেনের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১১ এপ্রিল সেই প্লেনে করেই তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনছুর আলী ও আমিরুল ইসলাম ময়মনসিংহের তুরা পাহারের কাছে অবতরণ করলেন সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্ধানে। বিএসএফ এর সাহায়তায় তাঁরা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আব্দুল মান্নানের খোঁজ পেলেন। তাজউদ্দিন সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে একান্তে আলাপ করলেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ ও সরকার গঠনসহ সব ঘটনা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে জানালেন। সবশুনে তিনি ত্জউদ্দীনসহ অন্যান্য সবাইকে অভিনন্দন জানালেন এবং সরকার গঠনের পক্ষে সম্পূর্ণ মত দিলেন। এরপর ডাকোটা ফের উড়লো আগোরতলার দিকে। সেখানে পৌঁছে খুঁজে পেলেন মন্ত্রীসভার অপরসদস্য খন্দকার মোশতাক আহমদকে। ইতোমধ্যে কর্নেল ওসমানীসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদগন সেখানে পৌঁছে গেছেন। তাজউদ্দীন ওসমাণীর সাথেও আলাপ করলেন। প্রথাগত যুদ্ধের বিপরীতে জনযুদ্ধকে গেরিলা যুদ্ধের মধ্যে সংগঠিত করার আহবান জানিয়ে তাঁর ওপর প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হলো। ১০ এপ্রিল তাজউদ্দীন তাঁর বেতার বক্তৃতায় আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে যোগ দেবার জন্য বিশেষভাবে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাজউদ্দীনের ইচ্ছে ছিল আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সদস্যদের সমবায়ে মন্ত্রীসভা গঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সরকারকে সমর্থনদানকারী সবকটি রাজনৈতিক দলের সমবায়ে একটি মোর্চ বা ফ্রন্ট গঠন করা এবং দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধ সমন্বয়ের দায়িত্ব এই ফ্রন্টের হাতে অর্পন করা। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ও কর্মি ছিলেন এরূপ বহুদলীয় ফ্রন্ট গঠনের বিরুদ্ধে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ দলীয় সাফল্যের পর স্বভাবতই আওয়ামীলীগের সর্বস্তরে দলীয় শক্তিমত্তা সম্পর্কে প্রবল আস্থা সৃষ্টি হয়। তাদের এই আস্থাবোধ পাকিস্তানবাহিনীর সর্বাতœক আক্রমণ এবং নিজেদের সম্যক পশ্চাদপসরণের পরেও অক্ষুন্ন থাকে। ২৬ শে মার্চের পর দেশে যে সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে , তারপূর্ণ তাৎপর্য অনুধাবন করা এবং সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিরেট দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন সাধন করার প্রয়োজন আয়োমীলীগের খুব অল্প সংখ্যক নেতার কাছে স্পষ্ট ছিল। এরপরেও সে সময় প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে আওয়ামীলীগ মহলে তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণা শুরু হয়েছিল। মন্ত্রীসভার অবশিষ্ট তিনজন সদস্যই প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে স্ব স্ব দাবীর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যায় কমবেশী তৎপর ছিল । মন্ত্রীসভার বাইরেও তাজউদ্দীন বিরোধী প্রচারণার উৎসমুখ ছিল একাধিক। শেখ মুজিবের গ্রেফতার হওয়ার কারণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানে ভারত সরকারের বিলম্ব পর্যন্ত অনেক কিছুর জন্যই সরাসরি তাজ উদ্দীনকে দায়ী করে এক প্রবল প্রচার আন্দোলন চলতে থাকে আওয়ামী যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে। প্রবীণ নেতাদের কেউ কেউ স্বাধীনতা ঘোষনা আদেশ’ অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান কতৃক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা কিভাবে প্রয়োগ করে তাজউদ্দীনকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায় তা অন্বেষণে ব্যস্ত হয়ে পরে। কোলকাতায় অনেক আওয়ামীলীগ নেতাই গড়ে তোলে ছোটখাট তাদের নিজস্ব দপ্তর। উপদলীয় গ্রুপ, প্রভাব-প্রতিপত্তি. গাড়ী অর্থ এবং নিজস্ব প্রচার যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। সবাই যে যার মত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যাস্ত থাকার ভান করে। তাদের দলীয় শৃংখলাবোধ এবং সরকারের প্রতি তাদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় আনুগত্য ছিল না। এর মাঝেও তাজউদ্দীন অনেক ধর্য্য , সহণসীল সাহসী মনোভাব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন। তথ্যসূত্র- তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা, মূল ধারা ৭১ (বই থেকে)।

সম্পর্কিত সংবাদ

রাজনীতিতে উত্তরাধিকার প্রথা

সম্পাদকীয়

রাজনীতিতে উত্তরাধিকার প্রথা

সংবিধানের ৪ মূলনীতি-(১) গণতন্ত্র, (২) সমাজতন্ত্র, (৩) ধর্মনিরপেক্ষতা, (৪) জাতীয়তাবাদ এ সব কথা কাগজে কলমে উপহাস মাত্র। এর...

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ

বাংলাদেশ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গল...

শেখ হাসিনা কর্তৃক সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে - মাওঃ রফিকুল ইসলাম খাঁন

জাতীয়

শেখ হাসিনা কর্তৃক সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে - মাওঃ রফিকুল ইসলাম খাঁন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওঃ রফিকুল ইসলাম খাঁন

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবীতে রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : মহাসড়ক অবরোধ

শিক্ষাঙ্গন

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবীতে রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : মহাসড়ক অবরোধ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কোনো উদ্যোগ আজ অবধি

শাহজাদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন

আজ ৯ মার্চ মঙ্গলবার শাহজাদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনের ৫০ বছর পূর্তি পালন করেছে জাতীয় সমাজ তান্ত্রিকদল...

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

জাতীয়

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

মহান বিজয় দিবস ২০২০ উদযাপন উপলক্ষ্যে বুধবার দিনের প্রথম প্রহরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়,...