বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শাহজাদপুর প্রতিনিধি : ইতিপূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাটপ্রাচীল গ্রাম থেকে গোটা উপজেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার পিছ সর্বনাশা ইয়াবা পাইকারীহারে সরবরাহ করা হতো। গত ৩ মাসে শাহজাদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জলিল কর্তৃক হাটপ্রাচীল এলাকায় পর পর বেশ কটি অভিযান পরিচালনা, ইয়াবার গডফাদার গ্রেফতার, ইয়াবা উদ্ধার ও নিয়মিত ওই এলাকায় তদারকী করায় বর্তমানে কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছে হাটপ্রাচীলের শক্তিশালী ইয়াবা চোরাচালান নেটওয়ার্কের সম্রাটেরা । ফলে উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাটপ্রাচীন এলাকার চিহ্নিত বৃহৎ ইয়াবা ব্যবসায়ী, গডফাদার সালাম, রওশন, মৃদুল, শুঁকচাদ, আব্বাস ও মঞ্জুদের দীর্ঘদিনের গড়া ইয়াবা চোরাচালানের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ক্রমান্বয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকায় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই মাদক নেটওয়ার্কের মূলহোতারা তাদের গতিবিধি পরিবর্তন করে শাহজাদপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা পার্শ্ববর্তী সাঁথিয়া উপজেলার পাটগাড়ী এলাকার ইয়াবার গডফাদারদের সাথে মিলেতালে নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করে পাটগাড়ী ও বাঘাবাড়ী এলাকা থেকে ফের শাহজাদপুরের সর্বত্র বড় বড় ইয়াবার চালান সরবরাহ অব্যাহত রাখে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, হাটপ্রাচীলের ইয়াবা নেটওয়ার্ক অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়ার পর থেকে শাহজাদপুরের সর্বত্র ইয়াবা পাইকারী সরবরাহকারী মাদক সম্রাটেরা পাটগাড়ী এলাকা থেকে বেশ কিছু দিন ধরে ইয়াবার বড় বড় চালান সরবরাহ করে আসছে। ওই নেটওয়ার্কের কতিপয় সদস্য সুনামধন্য দুরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহনে চাকুরী করার সুবাদে কক্সবাজার থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান এনে পাটগাড়ীতে পৌছে দিচ্ছে। অনেকে আবার সেই চালান অভিনব কৌশলে শাহজাদপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। এই সংবাদ জানতে পেরে থানার চৌকস অফিসার এসআই আব্দুল জলিল গত ১ মাস ধরে জনৈক সিএনজি চালকের পরিচয় দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ওই নেটওয়ার্কের গডফাদারদের ইয়াবা ক্রয়ের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিলো। এক পর্যায়ে ওই নেটওয়ার্কের অন্যতম হোতা পাটগাড়ী এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান সবুজ (৪০) তার দেয়া ১’শ পিছ ইয়াবা ক্রয়ের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে গত সোমবার বাঘাবাড়ী বরাল নদীর উত্তরপাড়স্থ আলহামরা পরিবহনের কাউন্টারে যেতে বলে। যথারীতি এসআই জলিল সিএনজি চালক সেজে সেখানে যথাসময়ে সেখানে গেলেও মাদকস¤্রাট ওইদিন সেখানে না আসায় তিনি হতাশ না হয়ে এবং হাল ছেড়ে না দিয়ে ফিরে আসেন। পরদিন গতকাল মঙ্গলবার ফের ওই মাদক সম্রাট তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়ায় সিএনজি চালক সেজে সঙ্গীয় ফোর্সসহ তিনি ১শ পিছ ইয়াবা ক্রয়ের জন্য ২২ হাজার টাকা ( সকল নোটের ক্রমিক নং কাগজে লিপিবদ্ধ করা ১ হাজার টাকার নোট ১০টি, ৫’শ টাকার নোট ২০টি ও ১’শ টাকার নোট ২০ টিসহ ২২ হাজার টাকা ) নিয়ে যথাসময় আলহামরা কাউন্টারের অদূরে অবস্থান নেন। আলহামরা পরিবহনের সুপারভাইজার পাটগাড়ী ইয়াবা চোরাচালান চক্রের অন্যতম হোতা ইয়াবা সম্রাট সবুজ এ সময় বাঘাবাড়ীস্থ আলহামরা কাউন্টারের ভিতরে থেকে ফোন করে সেখান থেকে টাকা দিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসতে বলেন। এসআই জলিল অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ফোর্সদের বাঘাবাড়ী বরাল সেতুর মাঝামাঝি অবস্থান করতে বলে অপর দুই ফোর্সকে মোবাইল ফোন ও টাকা দিয়ে আলহামরা কাউন্টারে পাঠিয়ে দেন। যথারীতি সবুজ ২২ হাজার টাকা হাতে পেয়ে ১’শ পিছ ইয়াবার চালান হস্তান্তর করার সময় এসআই জলিল কাউন্টারের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় চতুর মাদক সম্রাট সবুজ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইয়াবার চালানটি ওই কাউন্টারের ভেতরেই ফেলে দেন। অনেক খোঁজাখুজির পর অবশেষে চালানটি পাওয়া গেলেও ধুর্ত সবুজ ‘ওই ইয়াবা তার নয়, অন্য কারো’ জনসন্মুখে এমন চ্যালেঞ্জ করে বসে। প্রচলিত ‘যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেঁতুল’ প্রবাদের মতোই তখন তিনি মাদক সম্রাট সবুজের কাছে থাকা ২২ হাজার টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে ‘আলহামরা পরিবহনের সুপারভাইজারের কাছে ২২ হাজার কেনো ? ২২ লাখ টাকাও থাকতে পারে’-বলে সবুজ ফের তার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। তীক্ষ্ম মেধাসম্পন্ন এসআই জলিল তখন সবুজের কাছে থাকা ২২ হাজার টাকা না দেখেই পকেট থেকে টাকার ক্রমিক নম্বর সম্বলিত ফর্দটি বের করে একে একে প্রত্যেকটি নোটের ক্রমিক নং বলতে শুরু করলে ও কথামতে প্রত্যেকটি নোটের ক্রমিক নং হুবহু মিলে গেলে -উপস্থিত জনতার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না যে সবুজ আলহামরা পরিবহনের সুপারভাইজারের চাকুরীর অন্তরালে বড় বড় ইয়াবার চালান আনা নেয়া ও ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসার পর সবুজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একটি নাম্বার থেকে বার বার ফোন আসতে থাকলে এসআই জলিল সবুজকে ফোনে লাউড দিয়ে রিসিভ করতে বলেন। ‘কিরে-শেষে ড্যাম মাল দিছিস। এ ড্যাম মাল চইলবে না। অয় মাল লে- না অলি ট্যাকা ফেরত দ্যে। কাষ্টমারগরে সাথে কী মারামারি করবো নাকি ? কী করবি সবুজ ভাই।’-ফোনের অপর পাশ থেকে অজানা কন্ঠে এমন কথা আসতে থাকলে তাৎক্ষণিক মেধা ও উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে এসআই জলিল চুপিসারে সবুজকে বুঝিয়ে দিয়ে ফোনে বলতে বলেন ,‘বাঘাবাড়ী আয় তাড়াতাড়ি, ভালো মাল কিন্তু ৭ দিন পাবি না। আর কিছু আছে। দেরি করলি বদলাও দিতে পারবো না। তোক সিএনজি’ত আবার আগাইয়্যা দেবোনি। ভুলে চলে গেছে ভাই, কিছু মনে করিস না।’ এসআই জলিলের নির্দেশনা মোতাবেক অপর ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ইয়াবা সম্রাট সবুজ বাঘাবাড়ীস্থ একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে মোবাইল ফোনে আসতে বললে পার্শ্ববর্তী বেড়া উপজেলার স্যানাল পাড়ার মৃত আরদোশ আলীর ছেলে অপর ইয়াবা ব্যবসায়ী মান্নান ‘ড্যাম ইয়াবা’ পরিবর্তনের জন্য ওই পাম্পের সামনে চলে আসে। সেখানে কৌশলে নিয়ে যাওয়া হয় ইয়াবা সম্রাট সবুজকে। সবুজকে দেখে মান্নান এগিয়ে আসলে তাকেও গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছে থাকা (ড্যাম) ইয়াবা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। মাদক সম্রাটের পেছনে সিএনজি ড্রাইভারের পরিচয়ের অন্তরালে গত ১ মাসে প্রতিদিনই সময় দিয়ে কথা বলে, বুঝিয়ে শুনিয়ে অবশেষে মাদক সম্রাটদ্বয়কে গ্রেফতার ও পৃথক ভাবে দুই জনের কাছ থেকে ৫০ ও ৫০ সর্বমোট ১’শ পিছ ইয়াবা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় আনার পর এসআই জলিল বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল হক ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৯ (খ) ধারায় ওই দুই মাদক সম্রাটের বিরুদ্ধে আজ বুধবার একটি মামলা দায়ের করেন (শাহজাদপুর থানার মামলা নং-৩৪, তারিখ-২৮/১২/১৬ইং)। থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল হক ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইমলাম মামলাটির তদন্তভার এসআই রফিকূল ইসলামের ওপর অর্পণ করেন। আজ ওই দুই ইয়াবা সম্রাটকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ইয়াবা সম্রাটকে গ্রেফতারের জন্য প্রায় ১ মাস আগে পরিকল্পনা ও দীর্ঘ ১ মাস পরে তা বাস্তবায়নে ধৈর্য্য, স্বীয় মেধা,তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তায় অবশেষে ইয়াবা সম্রাটদ্বয়কে গ্রেফতারে সফল হওয়ায় এলাকাবাসী এসআই জলিলকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

সিরাজগঞ্জের ছেলে ও কিশোরগঞ্জের মেয়ে

বিনোদন

সিরাজগঞ্জের ছেলে ও কিশোরগঞ্জের মেয়ে

রাজশাহীতে সন্ত্রাসী হামলায় মুক্তিযোদ্ধা আহত

অপরাধ

রাজশাহীতে সন্ত্রাসী হামলায় মুক্তিযোদ্ধা আহত

ধুলোবালি ও বুঁনো ঘাসে  ভরা ভাষাসৈনিক আলী আজমলের সমাধিস্থল!

জাতীয়

ধুলোবালি ও বুঁনো ঘাসে ভরা ভাষাসৈনিক আলী আজমলের সমাধিস্থল!

সূধীজনের মতে, ‘ভাষা সৈনিক আলী আজমলের সমাধিস্থল যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণসহ তাঁর স্মৃতি চির অম্লান রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ...

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ দিন ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ

শিক্ষাঙ্গন

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ দিন ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ

করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধকল্পে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ এ ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি এ...