বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
15082012061854pmmujib মোঃ আবুল বাশারঃ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ঘনিষ্টজনরা রাখাল রাজা বলতেন। ১৯২০ সালে ১৭মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপলগঞ্জ মহুকুমার টুঙ্গি পাড়ায় গ্রামের শেখ পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। এক মধ্যবিত্ব পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। মানুষের দুঃখ কষ্ট অত্যন্ত কাছ থেকে তিনি নিবিড় ভাবে দেখেছেন, তাদের শোষণ নির্ষাতনও দেখেছেন। এ ছারাও পূর্ববঙ্গের জনগোষ্টির শতকরা ৮০ জন কৃষিজীবি পরিবারের জীবন জীবিকা সম্পর্কে তাঁর উপলোদ্ধি বোধ অনেকটাই প্রখর ছিল। আর সেকারনেই তাদের মুক্তির চিন্তার ক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক দর্শণ ও কর্ম ছিল ব্যাপক জনগোষ্ঠির স্বার্থে। উপলোদ্ধি বোধের যায়গা থেকেই তিনি তাঁর সমগ্র জীবনের কর্মকান্ড ও রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিবাদী ভূমিকা ব্যাপক জনগণের স্বার্থসংলিষ্ট হওয়ার কারনে তিনি গণমানুষের নেতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। হয়তোবা সে কারনেই তাঁর ঘনিষ্টজনরা তাঁকে বাংলার রাখাল রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করে গর্ব বোধ করতেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে প্রতিবাদী যুবক এরপর প্রতিবাদী রাজনীতিবিদ পরবর্তীতে দলীয় নেতৃত্বের শীর্ষস্থান অধিকার করার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তাঁর কর্মদক্ষতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতা দিয়ে। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক অঙ্গনে থেকে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা দেখেছেন, সে সময়ে মোহাজেরদের দু:খ-কষ্ট দেখেছেন তাদের সেবা দিয়েছেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় নেতাদের ক্ষমতার রশিটানাটানি পাশাপাশি ক্ষমতালোভী নেতাদের ষড়যন্ত্র কাছাকাছি থেকে দেখেছেন। তাই তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, “পাকিস্থান হওয়ার সাথে সাথেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে জনাব সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কারন বাংলাদেশ ভাগ হলেও যতটুকু আমরা পাই, তাতেই সিন্ধু, পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্থানের মিলিতভাবে লোক সংখ্যার চেয়ে পূর্ব পাকিস্থানের লোকসংখ্যা বেশী। সোহরাওয়ার্দীর ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ রাজনৈতিক জ্ঞান, বিচক্ষণতা ও কর্মদক্ষতা অনেককেই বিচলিত কওে তুলেছিল। কারন ভাবষ্যতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন এবং বাধা দেওয়ার ক্ষমতাা করো থাকবে না। জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীকে ভালোবাসতেন। তাই তাঁকে প্রথমেই আঘাত করতে হবে। এদিকে সাম্প্রদায়িক গোলমাল লেগেই আছে কোলকাতায়। অন্যদিকে পার্টিশন কাউন্সিলের সভা। কংগ্রেস কলকাতায় ছায়া মন্ত্রী সভা গঠন করেছে। আর একদিকে গোপনে শহীদ সাহেবকে নেতৃত্ব থেকে নামিয়ে নাজিমুদ্দীনকে বসাবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে কলকাতা ও দিল্লিতে। পাঞ্জাব ভাগ হলো, সেখানে নির্বাচনের প্রশ্ন আসলোনা। নবাব মামদোত পূর্ব পাঞ্জাবের লোক হয়েও পশ্চিম পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী হলেন। আর সোহরাওয়ার্দী পশ্চিমবঙ্গের লোক হয়েও পূর্ব পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী হতে হলে আবার তাঁকে নির্বাচন করতে বলা হল। যেখানে সমগ্র বাংলাদেশের মুসলিম লীগ এমএলএরা সর্বসম্মতিক্রমে শহীদ সাহেবকে নেতা বানিয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী আছেন-এই অবস্থায় মধ্যে দিল্লি থেকে হুকুম আসল আবার নেতা নির্বাচন হবে। শহীদ সাহেব শাসন চালাবেন, মুসলমানদের রক্ষা করবেন, না ইলেকশন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সিলেটের গণভোটেও শহীদ সাহেবকে যেতে হলো।(পৃষ্ঠা-৭৫)। এ ধরনের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই পাকিস্তানের সৃষ্টি হলো। পূর্ব পাকিস্থানের নেতা নির্বাচিত হল, কোলকাতাকে ছেড়ে দিয়ে ঢাকা রাজধানী করা হলো। এর সবকিছুর অন্তরালে ছিল ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা বঙ্গবন্ধুকে জ্ঞান স্বচেতন করেছিল। তিনি এটুকুু বুঝতে পেরেছিলেন এ রৈখিক স্বাধীনত্বা নাম মাত্র স্বাধীনত্বা। এতে ক্ষমতালোভী নেতারা ক্ষমতা পেয়েছেন। এ স্বাধীনত্বার মাধ্যমে জনগনের প্রকৃত কোন কল্যাণ সাধন হবে না। তাই তিনি বাঙালি জাতীকে নিয়ে নতুন ভাবনা, নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। মুসলীমলীগ নেতাদের বারবার বিশ্বাশঘাতকতা বঙ্গবন্ধুকে বিচলিত করে তুলেছিল। এ কারনে রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে স্বাধীন চেতনা সম্পন্ন বলিষ্ঠ নেতাদের নেতৃত্বে প্রথমে আওয়ামী মুসলীমলীগ পরে আওয়ামীলীগ নামক দল গঠনে একনিষ্ঠ ভূমিকা রাখলেন। পকিস্থানী শাসনামলের দীর্ঘ ২৩ বছর বাঙালি জাতীকে রাজনৈতিক স্বচেতন জাতীতে পরিনত করতে বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুড়ে বেড়িয়েছেন। ৬ দফা ১১ আন্দোলন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জাতীয় চেতনার ঐক্য প্রতিষ্ঠা ৭০’র নির্বাচন ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। এটি হাওয়ায় আসেনি এর জন্য নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। বছরের পর বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। অবশেষে স্বাধীন দেশের স্থপতি হিসেবে জাতীর পিতার স্বীকৃতি পেয়েছেন । বাঙালির জন্য কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলেও ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে থাকনি। বঙ্গবন্ধু তো ঘোষণাই দিয়েছিলেন তার অবস্থান বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত জনগণের পক্ষে। ৫০, ৬০ ও ৭০ দশকে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে যে মুক্তির আন্দোলন আব্যাহত ছিল তার প্রত্যেকটিতে বঙ্গবন্ধু অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন। ’৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পৃথিবীর শক্তিশালী দুটি পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মহাচীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে তাদের বিরোধে অবস্থান নিতে হয়। ঠিক এর বিপরীতে তৎকালীন আরেক বিশ্ব মহাশক্তি সভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অকুণ্ঠ সমর্থন জোগায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণেই ৭ম নৌবহরের অভিযাত্রা সফল হতে পারেনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণে ওই দুটি রাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে। স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনেও ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। তাই বিশ্বে তখন যে দুই পরাশক্তির ঠান্ডাযুদ্ধ চলছিল তার একটির সঙ্গে অপ্রত্যক্ষ হলেও বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সংবিধানে সামজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার যে দর্শন গৃহীত হয়েছিল তাও পুঁজিবাদী বিশ্বের কাছে সমাদৃত হয়নি। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু যখন দেশ ও জাতিকে সংকটমুক্ত করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করার লক্ষে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ করেন তখন পুঁজিবাদী বিশ্ব তাকে তৎকালীন সমাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে মনে করে। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী গস্খহনর প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক স্বাধীনতা বিরোধী চক্র অভ্যন্তরীণ শত্রুদের সহযোগিতায় ১৫ আগষ্টে নৃশংস ভাবে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হতঅ হত্যা কর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে অপসারণ করে। তার দল অর্থাৎ যে দলের নেতৃত্বে দেশে স্বাধীন হয়েছে সেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তাই বেদনা বিধুর ১৫ আগষ্ট জাতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। এ দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হলেও কেউ কেউ আবার ঘটা করে জন্মদিন পালন করে থাকে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির মাঠে ব্যাপক মানুষের সাথে মিশে নেতাদের চরিত্র অবলোকন করে বাঙালি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন,“ আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটি দিক আছে। একটা হল ‘আমরা মুসলমান, আর একটা হল, আমরা বাঙালি।’ পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না।(পৃষ্ঠা-৪৭)। বঙ্গবন্ধু জীবন দিয়ে তাঁর আত্মজীবনীর সত্য উপলোদ্ধিবোধ প্রমান করে গেলেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সেটিকে আরো বেশী করে জাগ্রত করেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

আইন-আদালত

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

শামছুর রহমান শিশির : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দীর্ঘ ২ মাস পর ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামী পৌর মেয়র...

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শাহ মখদুমের পূণ্যভূমি ও কবিগুরু রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্কল...