শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির : বৃহত্তর চলনবিলসহ সারাদেশের ফসলের ক্ষেতে সরিষার আবাদসহ প্রায় সকল খাদ্যশষ্যের ফুলে (ধান, গম ব্যতীত) পরাগায়ণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন শতকরা প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধিকারী মৌমাছির প্রজনন ও সংরক্ষনের নেই কার্যকরী উদ্যোগ। দেশে এনজিও ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় ৫শ’ মৌচাষী থাকলেও কৃষিপ্রধান এ দেশের প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য! সরকারিভাবে মৌচাষে উদ্বুদ্ধ ও মৌচাষীদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় আনুপাতিক হারে বৃদ্ধিতে যথার্থ কার্যকর উদ্যোগ, মৌচাষীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বিরূপ আবহাওয়া ও বাসযোগ্য পরিবেশ ও স্থানের অভাবে আবহমান গ্রাম বাংলা থেকে কালের চক্রে সময়ের আবর্তনে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকাপালনকারী মৌমাছি যে হারে দিন দিন কমে যাচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে পরাগায়ণের অভাবে খাদ্যশস্যের উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা হুশিয়ারি সংকেত উচ্চারণ করেছেন। অথচ কৃষি প্রধান এ দেশে ফুলে পরাগায়ণের মাধ্যমে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধিকারী মৌমাছি লালন পালন করে মধু আহরণ করে একদিকে যেমন বেকারত্ব ঘুচিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল করা সম্ভব। অন্যদিকে মৌমাছি লালন পালনের মাধ্যমে খাদ্যশস্যের উৎপাদন সর্বোচ্চ শতকরা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এতে একদিকে শত শত টন মধু বিদেশে রপ্তানি করে যেমন প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা আয়ের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে অদূরভবিষ্যতে খাদ্য সংকট মোকাবেলাও কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। এজন্য পরাগায়ণের মাধ্যমে কৃষির সর্বোচ্চ উৎপাদন বাড়াতে মৌমাছি সংরক্ষনের কোনো বিকল্প নেই বলে কৃষিবিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যশোর জেলা সদরের চাচড়া এলাকার মৃত কাজী আনিসুল কাদিরের পুত্র কাজী ফিরোজুল কাদির অসীমসহ প্রায় একযুগ ধরে মৌচাষ করা ভ্রাম্যমান বেশ কয়েকজন মৌচাষীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শাহজাদপুরের পাড়কোলা গ্রামের কৃষক আজমত আলী ২০০৩ সালের আগে যে জমিতে সরিষার আবাদ করে বিঘাপ্রতি চার/সাড়ে চার মণ সরিষা উৎপাদিত হতো, সেই একই জমিতে মৌমাছির ভ্রাম্যমান খামার স্থাপনের পর সরিষার ফুলে মৌমাছি পরাগায়ণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় উৎপাদন হচ্ছে বিঘাপ্রতি ৭/৮ মণ। অর্থাৎ মৌমাছি চাষের পর সর্ষের উৎপাদন বেড়েছে বিঘাপ্রতি আড়াই মণ থেকে চার মণ যা রীতিমতো চরম বিস্ময়ের ঘটনা। বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল মাঠে সরিষার আবাদকরা কৃষক মোঃ হুসাইন, বাদশা মিয়া, আব্দুল মালেক, পিন্টু ,আনোয়ার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, জিয়াউর রহমানসহ ২৫ জন সরিষাচাষী জানিয়েছেন, মৌমাছির খামার সরিষা ক্ষেতের পাশে আসার পর থেকে প্রতি বিঘা সরিষার আবাদ অতীতের তুলনায় ২/৩ মণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে মৌমাছি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় সরিষার ক্ষেতে মৌখামার বসতে দেয়া হতো না। আর এখন মৌমাছি সরিষাচাষীদের শরীরে হুল ফোটালেও মৌখামার অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে বলছে না সরিষাচাষীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অবঃ) কৃষিবিদ মোঃ খাইরুল ইসলাম বলেন, মৌমাছি ফসলের আবাদে অসামান্য ভূমিকা রাখে। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি না থাকলে সরিষাগাছের উর্ধাংশের সরিষায় দানা না বেঁধে চিটে হয়ে যায়। আমের মুকুলে মৌমাছি মধু সংগ্রহ না করলে মুকুলে ফাঙ্গাস জাতীয় পদার্থ গিয়ে জটলা পাকিয়ে ফেলে এবং আমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। শশা জাতীয় সবধরনের শস্য যেমন লাউ, কুমড়া, শশা, তরমুজ, বাঙ্গি এসব উভয়লিঙ্গ ফুলে পরাগরেণুর মিলন ঘটাতে মৌমাছি ব্যাপক সহযোগিতা করে। মৌমাছি এসব শস্যগাছের ফুলে না বসলে সেসময় ঐসব গাছে ফল ধরে না। বর্তমানে মৌমাছির অভাবে হাত দিয়ে পরাগায়ণের কাজ করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষকের ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে শস্যের উৎপাদন কমেছে। এছাড়া মৌমাছি থাকলে শস্যের আবাদে কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। অতীতে দেশে ‘ফ্যাস্ট্যাক’ নামের একটি বহুল প্রচলিত কীটনাশক জমিতে ব্যবহার করলে কীটপতঙ্গ মারা গেলেও মৌমাছি মরতো না। ঐ ‘ফ্যাসট্যাক’সহ ভালো ভালো ঔষধ কেন সরকার বাতিল করে দিয়েছে তা কোনোক্রমেই বোধগম্য নয়। বর্তমানে কীটনাশক হিসেবে যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা মৌমাছির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অতীতে ৫/১০ টাকা মূল্যের একটি লাউ ৪০/৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণ মৌমাছির অভাবে পরাগায়ণ বাধাগ্রস্ত হয়ে লাউয়ের উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। শুধু লাউ নয় মৌমাছি লালন পালনে মধু সংগ্রহের মাধ্যমে একমাত্র ধান ও গম ছাড়া দেশের প্রায় সব ধরনের ফসলের উৎপাদন শতকরা ২০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এজন্য এখনই মৌমাছি সংরক্ষণের যথাযথ উদ্যোগ নেয়া না হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হবে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা হুশিয়ারি সংকেত উচ্চারণ করেছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

আইন-আদালত

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

শামছুর রহমান শিশির : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দীর্ঘ ২ মাস পর ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামী পৌর মেয়র...

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শাহ মখদুমের পূণ্যভূমি ও কবিগুরু রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্কল...

শাহজাদপুরে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং এর তথ্য হালনাগাদ ও গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবীন্দ্র-কাছারিব...

বসন্তের আগমনী বার্তা পরিবর্তনের আভাস

জাতীয়

বসন্তের আগমনী বার্তা পরিবর্তনের আভাস

“হে কবি , নিরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?” সত্যিই ফুঠে উঠেছে আজ কবি সুফিয়া কামালের...

শাহজাদপুরে শতাধিক পুরিয়া হেরোইনসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

অপরাধ

শাহজাদপুরে শতাধিক পুরিয়া হেরোইনসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

শামছুর রহমান শিশির : গত শুক্রবার রাতে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ খাজা গোলাম কিবরিয়া ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইস...