রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
ইসলাম যেহেতু সবচেয়ে সুসভ্য ধর্ম, তাই তার দাবি হলো, মোমিন তার মোবাইল ফোন ব্যবহারে সভ্যের পরিচয় দেবে, তার কথায় থাকবে মাধুর্য, ব্যবহারে থাকবে পরিশীলন আর আচরণে থাকবে ভারসাম্য। সব মিলিয়ে সে হবে আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন উচ্চ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এখানে মোবাইল ফোন ব্যবহারে এমন কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হলো যা ব্যবহারকারীকে ভারসাম্যপূর্ণ হতে সাহায্য করবে। * প্রথমে ভাবুন : কাউকে কল করার আগে তার পেশা, সময় ও ব্যস্ততার কথা ভাবুন। যদি ব্যস্ত থাকার সম্ভাবনা থাকে তবে অন্য সময় ফোন দিন। বিশেষত মানুষের ইবাদত, বিশ্রাম ও ঘুমের সময় কল করা থেকে বিরত থাকুন। ফোন করে 'সরি' বলার চেয়ে প্রথমে ভেবে নেয়া উত্তম। শেখ সাদি (রহ.) বলেন, 'বুদ্ধিমান সেই যে কোনো কাজ করার আগে তার পরিণতি চিন্তা করে।' * কেটে দিলে বারবার কল নয় : কেউ লাইন কেটে দিলে বারবার কল করবেন না। হয়তো তিনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন। বারবার কল করলে যেমন তার কাজের ক্ষতি হয়, তেমন আপনি নিজেও বিরক্ত হবেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'যদি তোমাদের বলা হয় ফিরে যাও, তবে সেটাই (ফিরে যাওয়া) তোমাদের জন্য অধিক উত্তম।' (সূরা নূর : ২৮)। * ফোন না ধরলে বাজে মন্তব্য নয় : কখনও কেউ ফোন না ধরলেই তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করবেন না বা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। বরং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন এবং তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। হতে পারে আপনি তার প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারছেন না।   * ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সময় ফোন নয় : ড্রাইভিং, অপারেশন থিয়েটার, রান্নাবান্না ও ভারি মেশিনারি চালানোর সময় ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা এ সময় সামান্য অসতর্কতা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। এমন কাজে কেউ ব্যস্ত থাকলে তাকেও ফোন দেবেন না। * কিছু সময় ফোন সাইলেন্ট মুডে রাখুন : মসজিদ, হাসপাতাল, ক্লাস রুম, পরীক্ষার হল ও গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের আগে মোবাইল ফোনটি সাইলেন্ট মুডে রাখুন। এ সময় আপনার ফোন বেজে উঠলে সবার মনোযোগ নষ্ট হবে এবং তারা আপনাকে মন্দ বলবে। * প্রথমে সালাম দিন : 'হাই' বা 'হ্যালো' না বলে প্রথমে সালাম দিন। সালাম মুসলিম সমাজের সৌন্দর্য ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রধান একটি সুন্নত। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'প্রথমে সালাম এরপর কথা।' (সুনানে তিরমিজি : ২৬৯৯)। * প্রথমেই কাজের কথা নয় : কাউকে ফোন করেই কাজের কথা বলতে শুরু করবেন না। বরং তার শারীরিক, মানসিক ও ব্যস্ততার সম্পর্কে জানুন। প্রথমে কুশল বিনিময় করুন। এরপর অনুমতি নিয়ে কাজের কথা বলুন। তাতে আপনি অবশ্যই সুফল পাবেন। * প্রয়োজনের বেশি কথা বলবেন না : মোবাইল ফোনে অনর্থক অর্থ ও সময় নষ্ট করবেন না। প্রয়োজন অনুযায়ী কথা বলুন। প্রয়োজনীয় কথা শেষ হলে ফোন রেখে দিন। হাদিস শরিফে এসেছে, নিশ্চয় কেয়ামতের দিন আল্লাহ মানুষের সময় ও সম্পদের হিসাব নেবেন। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, 'নিশ্চয় আল্লাহ তিনটি বিষয় অপছন্দ করেন_ অনর্থক কথোপকথন, সম্পদের অপচয় ও অধিক প্রশ্ন করা।' (বোখারি : ১৪৭৭)। * কোমল স্বরে কথা বলুন : কথা বলার সময় কণ্ঠস্বরে ভারসাম্য রাখুন। উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে যেমন পরিবেশ নষ্ট করবেন না, তেমনি এতটুকু স্পষ্টভাবে কথা বলবেন যেন অপর প্রান্ত থেকে কথা বোঝা যায়। বিশেষত জনসমাগমে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে, হাত-পা নেড়ে হাসির পাত্র হবেন না। বরং নিজের আবেগ ও ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করুন। স্বাভাবিকভাবে নম্র ভাষায় কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'তোমার আওয়াজকে (বা কণ্ঠস্বর) কোমল করো।' (সূরা লোকমান : ১৯)। * নারীরা কঠোর হবেন : তবে নারীরা মোবাইল ব্যবহারে অধিক সতর্ক ও কঠোর হবেন। তারা পারতপক্ষে অপরিচিত নম্বরের কল রিসিভ করবেন না। আর কোনো কারণে রিসিভ করলেও প্রয়োজনীয় কথা বলেই রেখে দেবেন। মাহরাম (যাদের সঙ্গে দেখা দেয়া বৈধ) নয় এমন পুরুষের সঙ্গে নারীকণ্ঠের স্বাভাবিক কোমলতা পরিহার করাটাই ইসলামি শরিয়তের নির্দেশ। কোনো ধরনের প্রশ্রয়ের তো প্রশ্নই আসে না। কারণ সামান্য প্রশ্রয় পরবর্তীতে বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে (অন্য পুরুষের সঙ্গে) কথার বলার সময় কোমলতা অবলম্বন করো না। তবে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা প্রলুব্ধ হবে। বরং তোমরা মার্জিত কথা বলো।' (সূরা আহজাব : ৩২)। * অনুমতি ছাড়া রেকর্ড নয় : কারও অনুমতি ছাড়া তার কথা রেকর্ড করবেন না বা অনুমতি ছাড়া লাউড স্পিকার দিয়ে অন্যকে তার কথা শোনাবেন না। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা অন্যায় এবং বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। ইসলাম শরিয়ত অনুমোদিত প্রয়োজন এবং রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশকে অবৈধ মনে করে। মানুষের দোষত্রুটি ও একান্ত কথা গোপন রাখতে উৎসাহিত করে। হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, 'যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মোমিনের দোষ গোপন করল, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন করবেন।' (কানজুল উম্মাল : ৬৩৮৯)। হ প্রতারিত করবেন না : কণ্ঠ পরিবর্তন করে মানুষকে প্রতারিত করবেন না। কণ্ঠ পরিবর্তন এবং প্রতারিত করা উভয়টি ইসলামের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, 'যে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।' (মুসলিম : ৪৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, 'রাসূলুল্লাহ (সা.) নারী সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীর প্রতি অভিশাপ করেছেন।' (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৯০৪)। * ইতিবাচক ব্যবহারে মনোযোগী হোন : বর্তমানের অ্যান্ড্রয়েট মোবাইল ফোনে নানা ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আল্লাহকে ভয় করুন এবং পাপ কাজ পরিহার করুন। বিশেষত হারাম গান, বাদ্য ও অশ্লীলতা ত্যাগ করুন। গান, বাদ্য ও অশ্লীলতা মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি ও ঈমানি শক্তিতে নিঃশেষ করে দেয়। ফলে সে বড় বড় পাপে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও সব ধরনের অবৈধ ও অন্যায় সম্পর্ক ত্যাগ করুন। আপনার মোবাইল ফোনটি পাপ কাজে ব্যবহারের যেমন সুযোগ আছে, তেমনি তা অনেক ভালো কাজে ব্যবহারেরও সুযোগ আছে। হারাম গান-বাদ্য পরিহার করে রুচিশীল ইসলামী সঙ্গীত শুনুন। পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত শুনুন। ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে কোরআন তেলাওয়াত করুন। পরিশেষে বলব, আপনার সর্বক্ষণের সঙ্গী মোবাইল ফোনটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম বানান। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কিছু পরিহার করুন। বিশেষ করে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়া ও তাকে বিরক্ত করার মতো গর্হিত কাজ কখনোই করবেন না। কেননা আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, 'যারা মোমিন পুরুষ ও নারীকে বিনা কারণে কষ্ট দেয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।' (সূরা আহজাব : ৫৮)।

সম্পর্কিত সংবাদ

সলঙ্গায় কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

সলঙ্গায় কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় গলায় দড়ি দিয়ে বন্যা পারভীন (১৭) নামে এক কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। বন্যা পারভীন সিরাজগঞ্জ জেলার স...

কাজীপুরে বাল্যবিবাহ থামিয়ে দিয়ে বরযাত্রীর খাবার এতিমদের খাওয়ালেন ইউএনও

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

কাজীপুরে বাল্যবিবাহ থামিয়ে দিয়ে বরযাত্রীর খাবার এতিমদের খাওয়ালেন ইউএনও

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর (১৬) সঙ্গে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চর সারিয়াকান্দি গ...