মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
003 প্রতিরোধ যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন আবুল বাশার : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই মূলত জেলা, মহুকূমা, থানা শহরগুলোতে এমনকি গ্রাম-গঞ্জেও পাকবাহিনীর সম্ভাব্য হামলার বিরুদ্ধে প্রেতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ছাত্র-জনতার সম্মিলিত পূর্বপ্রস্তুতি চলতে থাকে। প্রতিরোধের প্রধান শর্ত ছিল যে কোনমূল্যে পাকহানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে হবে। নিজ নিজ এলাকাকে স্বাধীন ও মুক্ত রাখতে হবে। বাঁশের লাঠি উঠে এল ছাত্র-জনতার হাতে। বাঁশের লাঠিকেই রাইফেল বানিয়ে শুরু হলো প্রশিক্ষণ। ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকহানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে রাজধানীর ঢাকায় পরিচলনা করেেইতিহাসের বিভিষিকাময় এক যঘণ্য হত্যাযজ্ঞ। চারিদিকে গুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় ঢাকাবাসীর। জেগে দেখেন রাতের অন্ধকার ভেদ করে আকাশ জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে প্রজ্জলিত গোলাগুলি আর দাউ দাউ করে জ্বলছে বস্তি এলাকার কাঁচা বাড়িঘড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ও তার চত্বর এবং রাজধানীর রাস্তাঘাট ও অলিগলি লাশের স্তুপে ভড়ে যায়। ঘুমের মধ্যেই শহীদ হয়ে যান হাজার হাজার নিরাপোরাধ মানুষ। জানতেও পারে না কি ছিল তাদের অপরাধ। শুরু হয় মূমূর্ষু পাকিস্তানের দ্বিখন্ডিত হওয়ার শেষ দৃশ্য, শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম নেয়ার প্রসব বেদনা। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, গ্রেফতার ঢাকার ক্রাকডাউন/ম্যাসাকার এবং সারা বাংলাদেশে পাকবাহিনী মুভ করছে এ খবর টেলিগ্রাম টেলিফোন ও অয়্যারলেস মেসেজ মারফত ২৫ মার্চ রাতেই অনেক জেলা, মহুকূমা, থানা সদর ও ইপিআর ক্যাম্পগুলোতে পৌঁছে যায়। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ সকাল ৮ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার তার বার্তাটি (ডিকোড ম্যাসেস) শাহজাদপুরে পৌঁছেছিল । তৎকালীন শাহজাদপুর থানার ওসি জনাব আব্দুল হামিদ বার্তাটি গ্রহন করেছিলেন। সম্প্রতি মরহুমের স্ত্রী জীবননেসা হামিদ, তাঁর পুত্র ইশতিয়াক আহমদম জাতীয় বিশ্ববিদ্যাললয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনষ্টিটিউটে’ তারবার্তাটি হস্তান্তর করেছেন। তারবার্তাটি পাওয়ার পরপরই ওসি আব্দুল হামিদ এলাকা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য আব্দুর রহমানকে তার কপি প্রদান করেন। তাৎক্ষনিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার ঐ বার্তাটি বাংলায় অনুবাদ করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। তারবার্তার সূত্র ধরে ২৬ মার্চ এলাকার নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, গণপরিষদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ দলীয় নেতৃস্থানীয়দের শাহজাদপুর থানায় আমন্ত্রন জানানো হয়। সকাল ১০ দশটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন সিরাজগঞ্জ-৭ এলাকা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য আব্দুর রহমান, নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আবুল চৌধুরী। অনেক বেলায় আসেন নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সৈয়দ হোসন মনছুর, এর অনেক পরে আসেন সিরাজগঞ্জ-৬ এলাকা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য লে. কমান্ডার (অব) মাহবুবুল ইসলাম খোকা। থানায় অনুষ্ঠিত নেতৃবৃন্দের আলোচনায় সিন্ধান্ত নেয়া হয় এই মুহুর্তে সেনাবাহিনীর গতিপথ বন্ধ করে দেযার জন্য বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর ফেরী পারাপার বন্ধ করে দিতে হবে। সিন্ধান্ত মোতাবেক বাঘাবাড়ীতে গিয়ে ফেরিচালকদের ফেরি নিয়ে দূরবর্তী কোথাও চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তারা ফেরি নিয়ে ডেমরার দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর পুনরায় বসার সিন্ধান্ত হয়। সৈয়দ হোসেন মনছুর ৫০০ কর্মি নিয়ে আসার কথা বলে বাসায় ফিরে যান। পুনরায় থানায় মিলিত হলে সেখানে সৈয়দ হোসেন মনছুর ও মাহবুবুল ইসলাম খোকা আর অসেননি। মাহবুবুল ইসলাম খোকা যাওয়ার সময় ঠাট্টা করে বলে যান “ আপনারা যুদ্ধ করবেন পাকবাহিনীর সঙ্গে ? আমি তাদের ফায়ারিং পাওয়ার জানি, আপনারা জানেন না।” এরপর থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয়মাস তাদের দু’জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে জানা গয়েছিল তারা দু’জনই পাকবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আতœসমর্পণ করেছিলেন। পরবর্তী সিন্ধান্ত মোতাবেক ২৬ মার্চ বিকেলেই রবীন্দ্র কাছারিবাড়ীর ঐতিহাসিক বকুল তলায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ জনসভায় গণপরিষদ সদস্য আব্দুর রহমান, চাটমোহর ফরিতপুর থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য আবু ইউছুপ মিয়া, আব্দুল লতিফ খান, ছাত্রনেতা আব্দুল গফুর সরবত, গোলাম আজমসহ অন্যান্য নেতাকর্মিরা উপস্থিত ছিলেন। বিশাল ঐ জনসভা থেকে এলাকাব্যাপী সর্বাতœক প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিন্ধান্ত হয়। ২৭ মার্চ সিরাজগঞ্জের মহুকূমা প্রশাসক সামসুদ্দীন সাহেব শাহজাদপুরে এসে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক সভায় মিলিত হলেন। যেহেতু পাকবাহিনী ঢাকা থেকে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট সড়ক পথে আসার একমাত্র রাস্তা আরিচ-নগরবাড়ী ঘাট ও বড়াল নদীর ফেরিঘাট সে কারনে এ দুটি স্থানে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিন্ধান্ত নেয়া হয়। এর মাঝে বিভিন্ন যায়গা থেকে পালিয়ে আসা স্বশস্ত্র ও নিরস্ত্র ইপিআর এবং পুলিশবাহিনীর সদস্যরা বিচ্ছিন্নভাবে বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ীঘাটে জমায়েত হতে থাকে। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত অস্ত্র ও বগুড়া আড়িয়ার বাজার ক্যান্টনমেন্ট থেকে আনা অস্ত্র নিরস্ত্র ইপিআর পুলিশ ও ছাত্রজনতার সম্মিলিত বাহিনীর মাঝে বিতরণ করা হয়। এদের বড় একটি অংশকে কাশিনাথপুর পাইকরহাটি মহাসড়ক সংলগ্ন জঙ্গল পরিপূর্ন ডাববাগানে, বাকিদের শাহজাদপুর বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর ফেরিঘটে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য বসানো হয়। এ সময় এ পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক নূরুল কাদের খান, মহুকূমা প্রশাসক সামসুদ্দীন, ক্যাপটেন হুদা ও গণপরিষদ সদস্য আব্দুর রহমান। এ সেময় জেলা ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে আরো একটি দল বাঘাবাড়ী বড়াল নদীর ফেরী ঘাটে আসেন।তারাও স্থানীয়দের সাথে একত্রিত হয়ে সেখানে নদীর উত্তরপাড়ে বাংকার খুড়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এলাবাসীর সহযোগিতায় আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে সংগ্রহীত খাদ্য ও রসদ প্রতিদিন প্রতিরোধে আংশ গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আসতে থাকে। স্মৃতিচারক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ৭ এপ্রিল ১৯৭১ পাকবাহিনী আরিচা থেকে নৌ-পথে স্পিডবোট,গানবোট, ফেরি নিয়ে এসে নগরবাড়ী ঘাটে অতর্কিত হামলা চালায়। সে সময়ে নগরবাড়ী ঘাটে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন পাবনা জেলা শহরের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্ষুদ্র দল। ভাড়ী অস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর ঐ আক্রমনে প্রতিরোধকারী মুক্তিযোদ্ধারা বেশীক্ষন টিকে থাকতে পারেনি।মেশিন গানের গুলি ও বিমান আক্রমনের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।তারা পিছু হটে আশে-পাশের গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সে দিনের ঐ প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধ সহ প্রায় ১০/১৫ জন সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে গেরৈও পাকবাহিনী দীর্ঘক্ষণ ধারে এলাপাথারি গুলি চালাতে থাকে। প্রতিউত্তর ও প্রতিরোধ না পেয়ে পাকবাহিনী নগরবাড়ী ঘাটে নামে এবং সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্প বসায়। নগরবাড়ীর প্রতিরোধ যুদ্ধে হতাহত মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান ও তথ্য আজো ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি।

সম্পর্কিত সংবাদ

বিডিওএসএনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিলেন শাহজাদপুরের কৃতি সন্তান  কানিজ ফাতেমা

শাহজাদপুর

বিডিওএসএনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিলেন শাহজাদপুরের কৃতি সন্তান কানিজ ফাতেমা

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের এই কৃতি সন্তানকে শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার ও ব্যবস্...

হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বাড়িতে করোনা রোগী

বাংলাদেশ

হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বাড়িতে করোনা রোগী

কুমিল্লার লাকসামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসলেশনে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক রোগী গোপনে পালিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার অভ...

সাংবাদিক শামছুর রহমান শিশিরের নানীর ইন্তেকাল

সাংবাদিক শামছুর রহমান শিশিরের নানীর ইন্তেকাল

আমরা অত্যন্ত গভীর শোকাহত অবস্থায় জানাচ্ছি ‍যে, সাংবাদিক মো. শামসুর রহমান শিশির এর নানী ও মরহুম কুতুব উদ্দিন মোল্লার স্ত্...