বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
জনসংখ্যা তো বাড়ছেই, বাড়ছে পয়োবর্জ্যও। এর ব্যবস্থাপনায় এখনই নজর না দিলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে নাগরিক স্বাস্থ্য। প্রয়োজন আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। এতে পরিবেশের তো একটা সুরাহা হবেই, উল্টো এই বর্জ্যই সম্ভাবনা দেখাবে কর্মসংস্থান ও আয়ের। উদাহরণ দেখতে যেতে হবে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা। সেখানে মানুষের বর্জ্য থেকে সরাসরি তৈরি হচ্ছে সয়েল কন্ডিশনার ওরফে উন্নতমানের জৈব সারযুক্ত মাটি। এ কাজে স্থাপন করা হয়েছে কো-কম্পোস্ট প্লান্ট। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা (এসকেএস) ফাউন্ডেশন। সরেজমিনে দেখা গেছে, মোট তিনটি ট্যাংক পরিবহনে (ভেকুট্যাক) প্রায় ২৮ হাজার বাড়ির পয়োবর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর সেগুলো চলে যাচ্ছে স্থানীয় কো-কম্পোস্ট প্লান্টে। সেখানে আছে ডায়িং বেড। বেডে রয়েছে হরেক রকম পাথর। পয়োবর্জ্যের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে ওগুলো। এতে আটকে যায় অজৈব বর্জ্য। পাথরের তিন স্তর পার হয়ে তরল অংশ নিচে নেমে যায়। তারপর সেটা যায় অন্য আরেক বেডে। তিনদিন পর কালো রঙের তরল বিভিন্ন বেড ঘুরে মোটামুটি স্বচ্ছ ও দুর্গন্ধমুক্ত হয়। ওই তরলেই মিশে আছে গাছের জন্য দরকারি পুষ্টি উপাদান। সেটাকেই কী করে সুচারুভাবে সার হিসেবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে চলছে গবেষণা। আরও দেখা গেছে, পয়োবর্জ্য থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার পর পচনশীল উপাদানগুলোর সঙ্গে আনুপাতিক হারে মিশিয়ে নেওয়া হয় কাঁঠের গুড়ি। ওটা থেকে তৈরি হয় সয়েল কন্ডিশনার, তথা উর্বর মাটি। গবেষকরা বলছেন, আদিকাল থেকেই পয়োবর্জ্য নাইটসয়েল (পয়োবর্জ্য মিশ্রিত মাটি) হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে পয়োবর্জ্যের মাধ্যমে বর্তমানে যে সয়েল কন্ডিশনার তৈরি হচ্ছে তা মূলত ওই নাইটসয়েলেরই আধুনিক সংস্করণ। এই মাটিতে কোনও জীবাণু বা দুর্গন্ধ থাকে না। কিন্তু সার হিসেবে বাকিদের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। পয়োবর্জ্য থেকে উৎপাদিত সার ব্যবহার নিয়ে কৃষকদের মাঝে যাতে কোনও দ্বিধা কাজ না করে সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে সংস্থা দুটো। ওয়াটার এইড বাংলাদেশের প্রকল্প কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের একটি প্লান্ট থেকে বছরে ১০০ মেট্রিক টনের বেশি সার উৎপাদিত হবে। এই সার ব্যবহারে জমিতে পানি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক খরচ কমে আসে। সাধারণ সারের তুলনায় দ্বিগুণ উৎপাদন পাওয়া সম্ভব এতে।’ এদিকে পয়োবর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার কথা ভাবছে সরকারও। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং পরিচ্ছন্ন দেশ গড়তে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হবে। পয়োবর্জ্যের পাশাপাশি কঠিন বর্জ্যসহ অন্য সব বর্জ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হবে। প্রাথমিকভাবে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোতে পয়োবর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং পরবর্তীতে এই সুবিধা গ্রাম পর্যায়েও পৌঁছে দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, দেশকে সমৃদ্ধ করতে শুধু অর্থনৈতিক সূচক পূরণ করলেই হবে না, স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ অন্য যত প্যারামিটার আছে সেগুলোতেও গুরুত্ব দিতে হবে। সৈয়দপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এখানে এই প্রকল্প শুরু। মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এসকেএস ফাউন্ডেশন আমাদের এখানে কাজ করতে আসে। এরপর তারা ওয়াটার এইড বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্লান্ট বানায়। সেটা দিয়ে আমাদের পৌরসভায় সার উৎপাদন হয়। ঢাকার মানুষ টয়লেট ফ্লাশ করার পর হয়তো জানে না যে তাদের পয়োবর্জ্য কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু সৈয়দপুরের মানুষ জানে তাদের পয়োবর্জ্য ট্যাংক থেকে প্লান্টে গিয়ে সার হয়ে যাচ্ছে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

গাজা  প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক

গাজা প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা

শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা

সিরাজগঞ্জে ভূয়া সার্জেন্ট গ্রেফতার

আইন-আদালত

সিরাজগঞ্জে ভূয়া সার্জেন্ট গ্রেফতার

চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় নাঈমুল হাসান রনি (৩০) নামের...