শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : দেশের নিউজিল্যান্ড খ্যাত জনপদ শাহজাদপুরসহ পাবনা-সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন দুগ্ধসমৃদ্ধ এলাকায় অসংখ্য ভেজালকারী দুগ্ধ ব্যবসায়ী ও অসাধু ঘোষের দল দৈনিক হাজার হাজর লিটার তরল দুধে মানবদেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে নকল দুধ তৈরি করে সড়ক পথে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দুধের রং,সুবাস ও সোয়াবিন তেল মিশ্রণ করে ফ্যাট সৃষ্টির মাধ্যমে বেসরকারী বিভিন্ন ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারে সরবরাহ করছে। ভেজাল ওই দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দেশের নামীদামী ব্রান্ডের নামে মোড়কীকরণ করে দেশের দুধের ভোক্তাদের হাতে পৌছানো হচ্ছে। আজ (বুধবার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের নেতৃত্ব পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে নকল দুধ তৈরী, ক্রয়, বিক্রয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দুধ সংগ্রহ, মিষ্টিজাত খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত ও সরবরাহের অভিযোগে মোহনপুরস্থ আকিজ ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারকে ১০ হাজার, প্রাণের ডেইরী প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারকে ৫ হাজার, আড়ং ডেইরী প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারকে ৫ হাজার, বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারকে ৫ হাজার, এবং অপর ২ মিষ্টি ব্যবসায়ীকে ২ হাজার টাকা করে সর্বমোট ২৭ হাজার টাকা জরিমান আদায় এবং গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের ভেজাল ঔষধ কারখানায় অভিযান চালিয়ে মোহনপুরের দীকেন্দ্রনাথ চন্দ্রের ছেলে কারখানা মালিক অমরেশ চন্দ্র (৫৭) কে ১ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযান চলাকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উল্লাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সুফিয়ান, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মডেল থানার পুলিশ পুরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা, সেনেটারি ইন্সপেক্টও শহীদুল ইসলাম প্রমূখ। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার পাবনার ডেমরায়ও দুধ ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে অভিযান হয়েছে বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে কাপড় কাঁচা ডিটারজেন্ট পাউডার, সয়াবিন তেল, সোডা, স্যালাইন, চিনি, গুঁড়োদুধসহ মানবদেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিকেল দিয়ে ভেজাল ও নকল শিশুখাদ্য (দুধ) তৈরী করে আকর্ষনীয় মোড়কে মোড়কজাত করে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করে আসছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে,‘কেমিক্যেল মিশ্রিত তরল দুধ পান করে শিশুসহ আমজনতার কিডনি, লিভারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবার ঝূঁকি অত্যন্ত বেশী থাকে। এজন্য এ অঞ্চলে ভেজাল দুধ তৈরিকারীদের প্রতিরোধে ‘গুরু পাপে লঘু দন্ড’ এর পরিবর্তে ‘গুরু পাপে গুরু দন্ড’র আইন প্রচলন অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়ার মোহনপুর, পাবনার জেলার ফরিদপুর থানার ডেমরা ইউনিয়নের পালপাড়া সংলগ্ন এলাকায় ভেজালকারীরা প্রথমে দুধ থেকে ক্রিম তুলে ঘি তৈরি, এরপর টানা দুধ দিয়ে ছানা তৈরি ও তারও পরে ছানার পানির সাথে ফরমালিন, কাটিং ওয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিকেল ও দুধের সুবাস তৈরির জন্য এ্যাসেন্স মিশিয়ে ভেজাল দুধ বিক্রি করে তিন ভাবে লাভবান হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের দেশে প্রচলিত আইনের ফাঁকফোঁকর থাকায় ওই আইন প্রয়োগের ফলে এবং প্রসাশনের নিয়মিত নজরদারীর অভাবে দুগ্ধসমৃদ্ধ এ জনপদের বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানীর ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টার স্থাপনের পর থেকে বছরের পর বছর এ অপকর্ম চলে আসছে। যাদের মাত্র কয়েক বছর আগে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তারাই এ ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এদের প্রতিরোধে গোয়েন্দা বিভাগেরও কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত না হওয়ায় দিনে দিনে ভেজাল দুধের উৎপাদন আকংকাজনকহারে বেড়েই চলছে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ আইনের ধারা মোতাবেক বিষাক্ত দুধ প্রস্তুত ও সরবরাহকারী বা তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান না থাকায় বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এ বে-আইনী কাজ কোন ভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এলাকার সিংহভাগ হিন্দু ঘোষ সম্প্রদায়রাই অতীব জরুরী শিশুখাদ্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর তরল দুধ তৈরির জন্য অতিরিক্ত সরঞ্জাম আনছে এবং আগেভাবেই কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে। স্থানীয় বিভিন্ন ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা না করে লিটার ভিত্তিতে কমিশন নিয়ে সংগ্রহকৃত ওই ভেজাল দুধের সাধে কিছু খাটি দুধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ওই দুগ্ধ শীতলীকরণের মাধ্যমে দেশের তরল দুধের ভোক্তদের সাথে এ প্রতারণা ও অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, মারাত্বক ক্ষতিকারক কেমিক্যেল মিশ্রিত ওই বিষাক্ত তরলদুধ পান করে শিশুসহ আমজনতা আক্রান্ত হচ্ছে নান জটিল রোগে। শিশুদের জীবন ও ভবিষ্যত বিপন্ন হতে চলেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গবাদিপশুসমৃদ্ধ পাবনা-সিরাজগঞ্জের পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর,ফরিদপুর, ডেমরা, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, তাড়াশ এলাকাসহ বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়া (পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর) থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ লিটার টাটকা তরল দুধ সংগৃহিত হয়। সংগৃহীত ওই দুধের একাংশ দেশের সর্ববৃহৎ সমবায়ী প্রতিষ্ঠান ‘মিল্কভিটা’য় চলে যায়। দিনে লাখ লাখ লিটার দুধ উৎপন্ন হওয়ায় শাহজাদপুরে ‘মিল্কভিটা’ পাশাপাশি ব্যাঙ্গের ছাতার মতো ১৪টি œ বেসরকারী ডেইরি প্রজেক্টের দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। আর ওই কেন্দ্রগুলি স্থাপিত হবার পর থেকে ভেজালকারী ওই চক্রটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কেমিকেল মিশ্রণ করে ভেজাল দুধ উৎপাদন করে কেন্দ্রগুলিতে সরবরাহ করতে শুরু করে। প্রথমে এ ভেজাল দুধের ব্যাপারে ওইসব কুলিং সেন্টারের অনেক কর্মকর্তারাও অজ্ঞ ছিলেন। পরবর্তীতে বিষয়টি অপেন সিক্রেট হবার পর থেকে বিপুল অর্থের লোভ সামলাতে না পেরে তারাও শিশুসহ দেশবাসীর জনস্বাস্থ্যেকে জিম্মি করে ভেজাল দুধ সরবরাহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছেন। স্থানীয় দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা জানান,বর্তমানে লিটার প্রতি দুধের দাম ও এক কেজি গো-খাদ্যের দামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারতম্য না থাকায় শাহজাদপুরসহ পাবনা জেলা ও সিরাজগঞ্জ জেলাসহ দুগ্ধসমৃদ্ধ এলাকা বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ডেমরা, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, তাড়াশ ও রায়গঞ্জের তরল দুধ ব্যবসায়ীদের অনেকেই খাবার পানির সাথে, ছানার পানির সাথে ময়দা ও চিনি জ্বালিয়ে তাতে ফরমালিন, কাটিং ওয়েল, পার অক্সাইড, খাইসোডা ও দুধের ননী মিশিয়ে নকল ভেজাল দুধ তৈরী করছে। তারা প্রতি ৩৭ লিটার খাবার পানিতে ৩ লিটার দুধের ননী, ৫০ গ্রাম খাইসোডা, কয়েক চামচ পার অক্সাইড, ফরমালিন ও কাটিং ওয়েল মিশিয়ে ১ ক্যান (৪০লিটার) নকল ভেজাল দুধ তৈরি করছে। দুধ সাধারনত ৬ থেকে ৭ ঘন্টার বেশী সতেজ না থাকায় এতে ফরমালিন ও ৪০ লিটার ক্যানে ৩ থেকে ৫ লিটার পানি মেশানো হচ্ছে। এতে ৪৮ ঘন্টাতেও তৈরীকৃত ভেজাল দুধ নষ্ট হচ্ছে না। ফলে ঢাক, বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ দেশের দুরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় তরল দুধ পৌছানোর কাজে কোন বেগ পেতে হচ্ছে না। পাবনা-সিরাজগঞ্জে বর্তমানে ফের ভেজাল দুধ তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছে একটি অসাধু চক্র। অভিজ্ঞ মহলের মতে,‘শাহজাদপুরসহ পাবনা-সিরাজগঞ্জের গুটিকয়েক অসাধু দুগ্ধ ব্যবসায়ীর হাতে দেশবাসী জিম্মি হোক এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ অপকর্ম প্রতিরোধে অবিলম্বে প্রশাসন কর্তৃক ঝটিকা অভিযানের পাশাপাশি কঠোর আইন প্রনয়ণ অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। আর এর ব্যাত্যয় ঘটলে শিশুসহ দেশের আমজনতার স্বাস্থ্যঝূঁকি কোনভাবেই হ্রাস করা সম্ভব হবে না বলেও তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

গাজা  প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক

গাজা প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

সিরাজগঞ্জের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার ফাহমিদা হক শেলী

ফটোগ্যালারী

সিরাজগঞ্জের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার ফাহমিদা হক শেলী

শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম, বিশেষ প্রতিবেদক, বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ : সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সন্মেলন ক...

শাহজাদপুরে ভূমি সপ্তাহ শুরু

শাহজাদপুরে ভূমি সপ্তাহ শুরু

ভূমি সংক্রান্ত নাগরিক সেবা আরও জনমুখী, তথ্য প্রযুক্তি নীর্ভর ও গ্রাহক বান্ধব করে তোলার লক্ষে গতকাল শনিবার উপজেলা ভূমি অফ...

অশ্লীলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, ওয়েব সিরিজের নামে নীল ছবি

বিনোদন

অশ্লীলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, ওয়েব সিরিজের নামে নীল ছবি

অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে অশ্লীলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেন্সর না থাকায় ওয়েব সিরিজে উদ্ভট গল্প, অশালীন দৃশ্য, নোংরা সংলাপ ব...

হাইকোর্টে নির্দেশনা : শাহজাদপুরে স্বাধীনতা বিরোধী মাওলানা ছাইফুদ্দিনের নাম মুছে ফেললো কলেজ শিক্ষার্থীরা

জাতীয়

হাইকোর্টে নির্দেশনা : শাহজাদপুরে স্বাধীনতা বিরোধী মাওলানা ছাইফুদ্দিনের নাম মুছে ফেললো কলেজ শিক্ষার্থীরা

ডেস্ক রিপোর্ট : বৃহত্তর পাবনা জেলা পিস কমিটির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এহিয়ার নামে থাকা শাহজাদপুরে স্থাপিত বিভিন্ন শিক্ষা...