বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
করোনা উপসর্গ নিয়ে নড়াইল থেকে খুলনায় চিকিৎসার জন্য আসেন নজরুল ইসলাম (৬৫)। নেওয়া হয় বেসরকারি গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রোগী দেখে পরীক্ষা না করেই ভর্তি করা হয় করোনা ইউনিটে। আর ১৯ ঘণ্টা অতিবাহিত হতে না হতেই অক্সিজেন দেওয়ার বিল করা হয় ৫৬ হাজার ৪শ ও বেড ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৭১ হাজার ৪শ হাজার টাকা। তবে ডাক্তার বাঁচাতে পারেননি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক নজরুল ইসলামকে। গাজী মেডিক্যালের এমন বিলে চরম ক্ষুব্ধ নড়াইল সদরের বাধাল এলাকার নজরুল ইসলামের পরিবার। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী লড়াইল সদরের সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত ওনার করোনা হয়নি। আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডিউটি ডাক্তার বলেন তারা ধারণা করছেন আমার স্বামী করোনা আক্রান্ত। তখন আমরা তাকে বলি ওনার এক বছর ধরে কাশি ও ফুসফুসে সমস্যা ছিল। উনি করোনা রোগী তা আপনারা কিভাবে বুঝলেন? আগে আমাগদের কেবিন দেন। এরপর টেস্ট করলে যদি করোনা হয় তাহলে আমরা করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করবো। কিন্তু ডিউটি ডাক্তার কোনো কথা শুনতে রাজি হন না। তিনি বলেন, এটা আমাদের মালিকের হুকুম তাকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হবে। তখন আমরা অসহায়ের মতো তাদের কথা মেনে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করি। এরপর আমাদের জানানো হয় বিভিন্ন টেস্ট ও ওষুধ বাবদ প্রতিদিন ২০ হাজার টাকার মতো বিল হবে। আমি ওখানে ভর্তি করে ভাবলাম এ কোথায় নিয়ে এলাম। এরপর এ-ওষুধ সে-ওষুধ এনে দিতে বলেন। আমার স্বামী আমার কাছে আপেল খেতে চাইলো আমি দিলাম। এরপর ওরা কি ওষুধ দিল। তিনি অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলে ছটফট করতে থাকেন। পরে মারা যান। তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে একদিনেরও কম সময়ে ৭১ হাজার ৪শ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। পরে কমিয়ে আমাদের কাছ থেকে নেয় ৬৮ হাজার টাকা। নজরুল ইসলামের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম বাবলু অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভাই নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নড়াইল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনার গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু ভাই করোনা আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা না করেই তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ওই ইউনিটে কোনো সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন না। সদ্য যোগ দেওয়া জুনিয়র একজন চিকিৎসক রোগী দেখেন। তিনি জানান, ১৬ আগস্ট দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে তার ভাই মারা যান। মৃত্যুর পর ওষুধ ছাড়া অন্য বিল করা হয় ৭১ হাজার ৪শ টাকা। এর মধ্যে বেড ভাড়া দেখানো হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। অথচ যে রুমে তার ভাইকে রাখা হয়েছিল, সেখানে মোট ৮ জন রোগী ছিল। ৮ জন রোগীর রুমে থাকা এক রোগীর বেড ভাড়া ১৫ হাজার টাকা হয় কীভাবে? অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম বাবলু অভিযোগ করেন, মাত্র ১৯ ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়ার বিল করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৪শ টাকা। এছাড়া ওষুধের বিল হয়েছে আলাদাভাবে ২৭ হাজার টাকা, যেটা এর বাইরে আমরা কিনেছি। গাজী মেডিক্যাল চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করছে। শেষ পর্যন্ত ভুল চিকিৎসায় আমার ভাই মারাও গেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক জোবায়ের আহমেদ খান জবা বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসের নিচে গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, করোনা পরীক্ষা না করে কোনো রোগীকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা অন্যায় কাজ। এছাড়া এত অল্প সময়ে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য ৫৬ হাজার টাকা বিল করার বিষয়টিও অস্বাভাবিক। রোগীর স্বজনরা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ লিখিত অভিযোগ দিলে তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, ওই রোগীকে আনার পর সিটি স্ক্যান করে দেখেন তার ফুসফুসের বেশিরভাগ অংশই ড্যামেজ হয়ে গেছে। সে কারণে দ্রুত তাকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ অক্সিজেন ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে তার বিলই করা হয়েছে। কোনো বাড়তি বিল করা হয়নি। তিনি বলেন, হাসপাতালে সিনিয়র-জুনিয়র সব ধরনের চিকিৎসকই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। যেহেতু তার শ্বাসকষ্ট ছিল সে কারণে করোনা সন্দেহভাজন রোগী হিসেবেই তাকে ওই ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রোগীর মৃত্যুর পর শোকে-কষ্টে তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করছে, যা সঠিক নয়। গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিগত দিনেও পাহাড় সমান অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, প্রয়োজন না হলেও রোগীকে আইসিইউতে রেখে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের প্রমাণ, প্যাথলজি রিপোর্টে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিবর্তে টেকনিশিয়ানের স্বাক্ষর, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্টসহ (প্যাথলজি পরীক্ষার কেমিকেল) নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৬ এর যৌথ অভিযান শেষে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ডা. গাজী মিজানসহ পাঁচজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাকে র‌্যাব-৬ এর সদর দফতরে নিয়ে চার ঘণ্টা আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সব অপকর্মের সত্যতা স্বীকার করে লিখিত মুচলেকা দিয়ে কোনো রকমে ছাড়া পান আলোচিত গাজী মিজান।

সম্পর্কিত সংবাদ

গাজা  প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক

গাজা প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

সিরাজগঞ্জের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার ফাহমিদা হক শেলী

ফটোগ্যালারী

সিরাজগঞ্জের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার ফাহমিদা হক শেলী

শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম, বিশেষ প্রতিবেদক, বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ : সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সন্মেলন ক...

শাহজাদপুরে ভূমি সপ্তাহ শুরু

শাহজাদপুরে ভূমি সপ্তাহ শুরু

ভূমি সংক্রান্ত নাগরিক সেবা আরও জনমুখী, তথ্য প্রযুক্তি নীর্ভর ও গ্রাহক বান্ধব করে তোলার লক্ষে গতকাল শনিবার উপজেলা ভূমি অফ...

ফলোআপ:-শাহজাদপুরে পোরজনা ইউপি চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষের দুর্ণীতির সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে সাধুবাদ

অপরাধ

ফলোআপ:-শাহজাদপুরে পোরজনা ইউপি চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষের দুর্ণীতির সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে সাধুবাদ

শামছুর রহমান শিশির, নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : গত সোমবার সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত, বহুল পঠিত, পাঠক প্রিয়, নন্দিত অনলাই...

শাহজাদপুরে ছেলেকে অপহরণ ও ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২লাখ টাকা চাঁদা দাবী ৩ অপহরণকারী আটক

আইন-আদালত

শাহজাদপুরে ছেলেকে অপহরণ ও ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২লাখ টাকা চাঁদা দাবী ৩ অপহরণকারী আটক

আজ রোববার শাহজাদপুরে চাঁদাবাজও অপহরণকারী চক্রের ৩ সদস্যকে পুলিশ আটক করে। এরা হল, উপজেলার...