শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
6-5-15-vaskarjo -আবুল বাশার- বিশ্বকবি রবীন্দ্র ঠাকুরের ১৫৪ তম জন্মজয়ন্তী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন এবং প্রিয় কবির স্মরণে তাঁরই নামে “রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের” ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শুভ আগমন ঘটবে। আগামি ২৫ শে বৈশাখ, ৮ মে শুক্রবার তিনি আসবেন। এ খবরে বৃহত্তর পাবনা (পাবনা+সিরাজগঞ্জ) জেলার সকল প্রান্তে মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বণ্যা। এ খবরে শুধু বৃহত্তর পাবনা নয় উত্তর বঙ্গের শিক্ষানুরাগী মানুষের মাঝে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। আর্ন্তজাতিক মানের এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাঝ দিয়ে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য নব উদ্যোম ও উদ্যোগের দ্বার উন্মোচিত হবে এটাই মনে করছেন সবাই। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল এ অঞ্চল বাসীর। আশা প্রত্যাশার দোলা চলে দীর্ঘ দুই দশক পর এর বাস্তবায়ন ঘটছে। মখদুম শাহদৌল্লা ও বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথের পদস্পর্শিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পাদপীঠ শাহজাদপুরে কবির স্মরণে তাঁর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হোক এ প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল এলাকার শিক্ষানুরাগী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নানাভাবে নানাকৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। ২০০৭ সালে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলার রবীন্দ্র-ভক্ত শিক্ষানুরাগীরা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়ীকে ঘিড়ে কবির ১৪৮তম জন্মবার্ষিকির অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের স্মরণে কবিগুরুর নামে ‘রবীন্দ্র্র বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করেন। বিষয়টি পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পায়। এরপর থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন উদ্যোগ এবং প্রত্যাশা প্রতিক্ষার দুই দশক পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বিষয়ে কোন নিশ্চিত খবর পাওয়া যাচ্ছিলো না। এর আগে রবীন্দ্র দর্শনের আলোকে দেশের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য শাহজাদপুরের একজন স্বনামধন্য জ্ঞানতাপস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্য প্রয়াত ড. মাযহারুল ইসলাম শাহজাদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিয়েছিলেন। তিনি এলাকার শুধীজন রবীন্দ্র-প্রেমিক ও মানবতাবাদীদের সাথে নিয়ে এ উদ্যোগ গহন করেছিলেন। এ উদেশ্যে ১৯৯২ সালে প্রণীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয স্থাপন আইনের আওতায় ১৯৯৫ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়ন এলাকার সাতবাড়ীয়া গ্রামে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জার্মান কবি গেটের স্মরণে ‘টেগর গ্যেটে পিস ইউনির্ভাসিটি’ নামে একটি প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময়ে দেশের খ্যাতনাম ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয় ট্রাষ্টিবোর্ড। প্রখ্যাত একাডেমিসিয়ানদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল একাডেমিক কাউন্সিল। তত সময়ে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল প্রয়াত ড. মযহারুল ইসলামকে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐ সময়ে সত্তর কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছিল। বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য যথা নিয়মে আবেদনও করা হয় বিশ্বদ্যিালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে। পরবর্তীতে নানা জটিলতার কারনে শেষাবধি ‘টেগর গ্যেটে পিস ইউনির্ভাসিটি’ স্থাপনের উদ্যোগ থেমে যায়নি। ড. মযহারুল ইসলামের মৃত্যুর পর এলাকাবাসী নতুন উদ্যোমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কাজ শুরু করে। এরপর এলাকাবাসী ও দেশবাসীর প্রত্যাশা পুরুনে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করে। অগ্রজদের পথ পরিক্রমা পেড়িয়ে অবশেষে রবীন্দ্র নাথের নামে একটি পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যদিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার আনুষ্ঠানিক ও কার্যকর পদযাত্রা শুরু হবে। বাংলাদেশে ৩৫তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মরণে “রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে এমন একটি চমকপ্রদ এবং আনন্দের খবর ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারী জাতীয় দৈনিক সমকালে প্রকাশ পয়েছিল। এরপর একাধিক জাতীয় দৈনিকে খবরটি প্রকাশ পায়। খবরে জানাগিয়েছিল, গত ৫ ডিসেম্বর (২০১২) শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে পত্র দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি চূাড়ান্ত সিন্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতেই হবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস। একই সঙ্গে আরও দুটি ক্যাম্পাস কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও নওগার পতিসরে থাকবে। এ খবরটি যারা সে সময় পত্রিকায় পড়েছিলেন এবং শুনেছিলেন এমন জ্ঞানপিপাসু, শিক্ষানুরাগী প্রতিটি বাঙালির প্রাণে ও অনুভূতিতে নতুনভাবে সারা জাগিয়েছিল। সে সময়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারে বাংলাদেশে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিন্ধান্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথভাবে অর্থায়নে এ বিশ্বদ্যিালয়টি প্রতিষ্ঠা পাবে বলে উল্লেখিত ছিল। কবির স্মরণে তাঁরই আদিপুরুষদের পূন্যভূমি পূর্ব বাংলায় তাঁর নিজস্ব দর্শনের আলোকে, শান্তিনিকেতনের আদলে প্রতিষ্ঠা পেতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্প-সাহিত্য ছারাও পাঠ্যক্রমে কলার পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বানিজ্য অনুষদও থাকবে বলে প্রকাশ করা হয়েছিল। এ খবরটি নতুন প্রজন্মের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছিল আনন্দের এবং উৎসাহের আগাম বার্তা। ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ সিন্ধান্ত ও অর্থায়নে শাহজাদপুরে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের চূড়ান্ত সিন্ধান্ত ঘোষনা করার পর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর এলাকার বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের বিসিক বাসষ্ট্যান্ডে স্থাপন করা হয় রবীন্দ্র্র ভাস্কর্য। এ ঘোষনার পর বাঙালির প্রত্যয় ও প্রত্যাশা অনেকটা কবিগুরুর ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতার ছন্দের মত ছিল,-- আজি এ প্রভাতের রবির কর/কেমনে পশিল প্রাণের ‘পর,/ কেমনে পশিল গুহার আঁধারে/ প্রভাত-পাখির গান।............ ওরে,চারিদিকে মোর /এ কী কারাগার ঘোর!/ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর!/ ওরে, আজ কী গান গেয়েছে পাখি,/ এসেছে রবির কর! আগামী ২৫ বৈশাখ থেকে ২৭ বৈশাখ তিনদিন ব্যাপি কবিগুরুর ১৫৪ তম জন্মজয়ন্তী উৎসব বাংলাদেশের কবির স্মৃতিবিজড়ীত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ নওগার পতিসর ও শাহজাদপুর কাছারিবাড়ীতে জাতীয়ভাবে পালিতে হবে। প্রতিবছর এ তিনটি স্থানের অনুষ্ঠানমালা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জাতীয়ভাবে পালিত হলেও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রলয়ের আয়োজনে জাতীয় অনুষ্ঠান পালিত হতো ঢাকায়। এ বছর এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। এ বছর সংস্কৃকি বিষয়ক মন্ত্রনালয় আয়োজিত তিন দিন ব্যাপি মূল অনুষ্ঠানমালা পালিত হবে শাহজাদপুরে। এর জন্য চলছে ব্যাপক আয়োজন। পরিচ্ছন্নতা ও আলোক সজ্জার মাঝ দিয়ে নতুন সাজে ও উদ্যোগে সেজে উঠেছে শাহজাদপুর ও তার আশেপাশের সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি। শাহজাদপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজন চলছে বিশাল মঞ্চের। যেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনতার উদ্যেশে তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। শাহজাদপুরের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশাল মঞ্চ হবে। কেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ? রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যলয় স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়ে নানামুনির নানা মত থাকলেও রবীন্দ্র দর্শনের সঙ্গে বাঙালির জীবনসমৃদ্ধির যে সম্পর্ক রয়েছে এটি অস্বীকার করবার কোন কারন নেই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এর শ্রেষ্ঠ প্রমান হিসেবে আমাদের সামনে সাক্ষ্য বহন করছে। স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁরই স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারাটা অনেকটা ঋন পরিশোধের দায়ভার মুক্ত হতে পারার আনন্দও বটে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে হঠাৎ করেই যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী রাষ্ট্র ও সমাজ ও রাজনীতি অর্থনীতি সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। শান্তি ও প্রগতির পথে আমাদের অবস্থান কোথায় রয়েছে ? ইতিহাসের বিবর্তন ধারায় এ পরিবর্তন মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণে কতটুকু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে ? বিষয়টি নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে । একপক্ষ দাবী করছেন মানব সভ্যতা এগিয়ে চলেছে। অন্য পক্ষ বলছেন আমরা ক্রমাগত পিছনের দিকে যাচ্ছি। বিষয়টি দার্শনিক বিবেচনায় এবং দর্শনের আলোকে আমাদেরকে বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথের দর্শণ অনুসরনীয়। জাতিগত বাঙালিরা যদি বিষয়টির গভীরে অনুসন্ধানে আগ্রহী হয় সে ক্ষেত্রে পিছনের সত্য ইতিহাসকে খুঁজে বের করা উত্তম বলে বিবেচিত হবে। আমাদের অগ্র-পশ্চাত রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,ভারতবর্ষের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতী (হিন্দু-মুসলমান) তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পকিস্তান নামক দু’টি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। নানা বৈষম্য ও শোষন-বঞ্চনার কারনে রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্থান টিকে থাকতে পরেনি। বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার উন্মেষ ঘটার মধ্যদিয়ে শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭১ সালের এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের আত্নহুতি,২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিলো। জাতীয়তাবাদের প্রথম ভিত্তি রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ইতিহাস এমনটাই সাক্ষ্যবহন করে। বৃটিশ শাসনামলে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হতে ১৯১৭ সালে জাতীয়তাবাদের ওপর ইংরেজি বক্তৃতায় রাষ্ট্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি ডিমের খোসার সঙ্গত উপমাটি ব্যবহার করেছিলেন। রাষ্ট্রের কাজ ডিমের খোসার মতো- বলেছিলেন তিনি। আর ওই খোসার উপযোগিতা যে একেক পক্ষের কাছে একেক রকমের- সেটাই ছিল তাঁর উল্লেখ করার মত বিশেষ বিষয়। ডিমের ভেতরের স্থানটির জন্য খোসাটি কাজ করে নিরাপত্তাদাতার; কিন্তু প্রাতরাশকারীর জন্য খোসার উপকার একেবারেই অন্য প্রকারের। পরাধীন ভারতবর্ষে যে রাষ্ট্রকে রবীন্দ্রনাথ নির্মম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে জেনেছেন সেটি প্রাতরাশকারীরই কাজে লেগেছে, ছানার কোনো উপকার করেনি। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের দীর্ঘ ৪৪ বছর উত্তরণের পর আমাদের নির্মম অভিজ্ঞতা এই যে, রাষ্ট্র এখনো প্রাত রাশকারীদেরই কাজে লেগে রয়েছে, তাদের স্বার্থেই ব্যবহার হচ্ছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ব্যাপকসংখ্যক জনগোষ্ঠি ছানারা এখনও শোষিত বঞ্চিতই রয়ে গেছে। তাদের কোন উপকার আসছে না। শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজ, সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনীতি, শান্তিপূর্ণ সহবাস্থানসহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নামক রাষ্টের সৃষ্টির জন্য বাঙালিজাতী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন অবস্থানে আমরা রয়েছি ? এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক চরিত্র এবং চেহারাটা কি ? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্ন দু’টির উত্তর কারো অজানা নয়। আজকের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে পরেছে। অর্থনীতিতে চলছে একধরনের লুটতরাজের প্রতিযোগিতা। সংস্কৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে বহুমুখী সংকট। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি- শোষক, লুটতারাজকারী,গণহত্যার পৃষ্ঠপোষক ও সহযোগী, প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনকারী, অগ্নীসংযোগ, ধর্ষণকারী পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর দোষর আলবদর, আলসামস্ সহ শান্তিকমিটির দালাল হন্তকদের মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীরা সবাই আমরা এককাতারে। আমাদের আলাদা করে দেখবার কোন পথ পাথেও বিদ্যমান নেই। বাঙাগালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করেই স্বাধীন বাংলাদেশ নামক যে জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সেই জাতি এবং জাতিরাষ্ট্র রক্ষার জন্যই আজকে রবীন্দ্র দর্শনের আলোকে আগামি প্রজন্মকে শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করার আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পরাধীন ভারতীয় মধ্যবিত্তের মনে স্বাধীনতার স্পৃহাকে গভীর করার ব্যাপারে অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন কবিগুরু। সে কারনে তাঁর গান ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে। একই কারনে তাঁর গান বাংলাদেশেরও জাতীয় সঙ্গীত হয়েছে, যদিও এ বাংলাদেশ সেই অবিভক্ত বাংলা নয়। তিনি তার রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে কখনো ঈশ্বরকে টেনে আনেননি। তিনি সর্বদা বলেছেন, ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়। অন্যদের মত মানুষের দূর্ভোগের কারণ ঐশ্বরিক জগতে এমন দর্শনে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ যে ইতিহাসে বিশ্বাসী ছিলেন, সে ইতিহাস রাজা-বাদশার মারামারি, কাটাকাটির বিবরণ নয়। সেটি ছিল সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ইতিহাস। যে ইতিহাস জনগণ রচনা করে, কঠিন শ্রমে। মানুষের উন্নত রুচি বোধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি মনে করতেন, উন্নত রুচির মধ্যেই থাকে নৈতিকতা বোধ। ন্যায়-অন্যায়ের চেতনা না থাকলে মানুষ মহৎ হয়না, তা যতই বৃহৎ হোক না কেন কিম্বা উঁচু। কবির চিন্তায়- প্রকৃতি হলো মানুষের অন্তরের গভীরে জন্ম নেওয়া এক সৃজন শক্তি, যা মানুষকে একটি স্থির কেন্দ্র দেয়। রবীন্দ্রনাথ মুক্তি খুঁজেছেন মানুষের চিরমুক্তিতে, তার প্রকৃতির অন্তরে নিজেকে স্থাপনের মধ্যে। মানুষের ভেতরের বিবর্ণতা, অথবা ধূসর-বাদামি রঙগুলো এবং ক্ষয় হতে থাকা জীবনশক্তিকে ছাপিয়ে প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি যাচনা করেছেন সবুজকে। এই সবুজ- প্রকৃতির,চিত্তের, মানুষের আদি ঠিকানার। প্রকৃতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, প্রকৃতি শুধু উদ্ভিদ এবং জলহাওয়ার জগৎ নয়, এ প্রকৃতি মানুষের ভেতরে মহাকালের কোনো ছায়াপাতের একটি রূপ যাকে ধরা যায় না, ছোয়া যায় না, যাকে শুধু নিজের একান্তে অনুভব করা যায়। এর সবকিছুই রবীন্দ্রদর্শনের আংশিক কথা লিপি। মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও গবেষক মোবাইল নং-০১৭১১-৯৪২২৯৬

সম্পর্কিত সংবাদ

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

উল্লাপাড়া

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

তানিম তূর্যঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর পুকুর থেকে ইয়াম ইসলাম( ৮) নামের এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে...

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

অর্থ-বাণিজ্য

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর উপজেলা সংবাদদাতাঃ শাহজাদপুর উপজেলার কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির নব-নির্বাচিত ক...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা