বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শামছুর রহমান শিশির : গোবরে ফুটেছে দুর্লভ পদ্ম ! তাও আবার কল্পনায় নয় ! সুপ্রাচীনকাল থেকে দেশে বহুল প্রচলিত ‘গোবরে পদ্মফুল’-এর সারার্থ ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে,ভিন্ন ভিন্ন উপমা প্রকাশে বহুল ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে ‘গোবরে পদ্মফুল’ বলতে বা ‘গোবরে পদ্মফুল’ -এর ভাবার্থে সাধারণস্থলে অসাধারণ নজিরকেই বুঝানো হয়ে থাকে। ‘গোবরে পদ্মফুল’ শব্দটি সুপ্রাচীনকাল থেকে উপমা বা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হলেও এবার আর সেটি রূপক, কাল্পিককতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। গবাদীপশুর মলমূত্রকে গোবর বলা হয়ে থাকে। সেই গোবর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন,গ্যাস উৎপাদন,জ্বালানী ও উৎকৃষ্টমানের জৈবসার প্রস্তুত করে এলিজা খান নামের এক সফল গো-খামারী দেশের একমাত্র মডেল ডেইরি ফার্ম (গো-খামারের) ও বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে ‘গোবরে পদ্মফুল’-এর জ্বাজল্যমান,উৎকৃষ্ট,দৃষ্টান্তমূলক,বাস্তবিক নজির স্থাপন করে রীতিমতো দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।এমনটি শুনতে রূপকথার কল্পকাহিনীর মতো মনে হলেও এবার সত্যই ‘গোবরে পদ্মফুল’ ফুটিয়ে রূপকথার কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়েছেন এলিজা খান নামের দেশের একমাত্র মডেল ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্লান্টের মালিক,এক সফল গো-খামারী। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা গ্রামে অবস্থিত দেশের একমাত্র মডেল ‘মিসেস এলিজা খান মডেল ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্লান্ট’ পরিদর্শন করে ‘গোবরে পদ্মফুল’-এর রূপক নয়, বাস্তবতারই প্রমাণ পাওয়া গেলো, যা নিজ চোখে না দেখলে কোনভাবেই ঠাহর, বিশ্বাস করার উপায় নেই। গাভী প্রতিপালন করে অর্থ উপার্জনে দুগ্ধ বা বাছুরের আর্থিক মূল্যের চেয়ে গোবরের আর্থিক মূল্য বহুগুণে বেশী। গোবর দিয়ে গ্যাস,বিদ্যুৎ,উৎকৃষ্টমানের জৈবসার উৎপাদন ও বিপনন করে দুধ বা বাছুরের আর্থিকমূল্যমানের বহুগুণ বেশী অর্থ আয় করে কথিত কল্পিত হাঁস থেকে সোনার ডিম প্রাপ্তির শামিলে (রূপকর্থে) অনন্য সাফল্যগাথা এক নজির স্থাপন করেছেন গর্বিত মডেল গো-খামারী এলিজা খান। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মডেল,সফল, সার্থক, ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনকারী গো-খামারী মহিয়ষী এক সফল নারী শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এলিজা খানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিল্ক ইউনিয়ন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া’র সহযোগীতায় তিনি গত ’২০১২ সালে নিজ বাড়িতে এ প্লান্টটি গড়ে তোলেন। প্রথমে তিনি দেশ ও বিদেশ থেকে উন্নতজাতের বেশ কিছু গবাদীপশু তার খামারের জন্য ক্রয় করেন। এরপর থেকে কয়েকজন রাখাল রেখে তিনি ওই গো-খামারের গবাদীপশু আপন সন্তানের ন্যায় লালন পালন শুরু করেন। একে একে উন্নতজাতের বাছুর ও উন্নতজাতের দুধেল গাভীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার গো-খামারে উন্নতজাতের দুধেল গাভীর সংখ্যা দাড়ায় ৫০ টিতে। প্রতিটি উন্নতজাতের গাভী থেকে সকাল ও বিকেল এ দু’বেলায় প্রায় ৫’শ লিটার টাটকা খাঁটি গরুর দুধ সংগৃহিত হয়। ওই দুধ তিনি মিল্কভিটায় সরবরাহ করছেন। এতে তার দৈনিক প্রায় ২০ সহ¯্রাধিক টাকা আয় হচ্ছে। উন্নতজাতের গাভী থেকে শুধু দুধ সংগ্রহ ও বাছুরের প্রজননের মধ্যেই তিনি সীমাবদ্ধ থাকেন নি। একনিষ্ট পরিশ্রম,সুদক্ষ পরিচালনা আর নিয়মিত পরিচর্যার পাশাপাশি তিনি তার অদম্য,তীক্ষè মেধা খাটাতে থাকেন যে,ওই খামার থেকে খাঁটি দুধ উৎপাদন ও উন্নতজাতের বাছুর প্রজনন ছাড়াও কিভাবে আরও বাড়তি আয় করা সম্ভব। সফল গো-খামারী এলিজা খানের ওই স্বপ্নীল চিন্তাচেতনাকে বাস্তবতায় রূপদানের জন্য তার গর্বিত স্বামী,সফল গো-খামারী, জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড (মিল্কভিটা)’র সাবেক সফল চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুণ ওই খামারকে বহুমুখী আয়ের উৎস হিসাবে বাস্তবে রূপদানের জন্য ‘বায়োগ্যাস প্লান্ট’ নির্মাণের পরামর্শ দেন। কথায় আছে‘ বাপকা বেটা,সিপাইয়ো ঘোড়া,কুছ না রাখে তো,রাখে থোড়া থোড়া’-তেমনি সুযোগ্য স্বামী, সফল কৃষক হাসিব খান তরুনের পরামর্শ আর অদম্য উৎসাহ পেয়ে তিনি মিল্ক ইউনিয়ন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া’র সহযোগীতায় গত ২০১২ সালে খামারের উত্তরপার্শ্বে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত একটি বায়োগ্যাস প্লাষ্ট স্থাপন করে কৃষক স্বামীর সুযোগ্য সহধর্মিনীরই পরিচয় দিয়েছেন। ওই বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের পর প্লান্টটির নাম দেন ‘মিসেস এলিজা খান মডেল ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্লান্ট’। এরপর থেকে সফল,মডেল গো-খামারী এলিজা খাতুনের স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ নিতে থাকে। একান্ত এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান,‘আগে গাভী লালন পালন করতাম দুধ উৎপদনের জন্য। কিন্তু এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে একটি গো-খামার থেকে শুধু দুধ উৎপাদন করা হরে এখন আর এ ধারণার সাথে আমি একমত পোষণ করি না। দিন বদলের মতো মানুষের উন্নত,আধুনিক,বিজ্ঞানসম্মত ধ্যান ধারণা, চিন্তা চেতনায় একটি গো-খামারের আউটপুট হিসাবে দুগ্ধ উৎপাদন এখন আমার কাছে গৌণ বিষয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে গবাদীপশুর মলমূত্র (গোবর) থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন,বিদ্যুৎ উৎপাদন,জ্বালানী উৎপাদন ও সবচাইতে গুরুতপূর্ণ কৃষিপ্রধান এ দেশের জন্য,পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষা,কীটনাষকের ব্যবহার হ্রাস,ফসলী জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপদন বৃদ্ধিতে জৈবসারের কোন বিকল্প নেই।’ বিশেষজ্ঞ মহলের মতে,‘দেশের একমাত্র মিসেস এলিজা খান মডেল ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্লান্ট’-এর অনুকরণ,অনুসরণে লাখ লাখ গো-খামারীরা দুধ উৎপদনের পাশাপাশি বহুমুখী আয়ের সুযোগ পাবেন যা ত্বরান্বিত গতিতে তাদের ভাগ্যের চাকাকে ঘোরাতে সাহায্য করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান নিঃসন্দেহে রাখবে। এ ব্যাপারে দেশের লাখ লাখ গো-খামারীদের মধ্যে সরকারিভাবে মিল্ক ইউনিয়ন ও পল্লী একাডেমির মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণে সার্বিক সহযোগীতা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

জাতীয়

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

আগামীকাল রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে একযোগে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

ধর্ম

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

বাংলাদেশ

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

একটি সংগঠনের উদ্যোগে বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। গ্রামের সকল পরিবার হয়েছে এখন সচ্ছল। এই গ্রামে এখন ফিতরা ও যাকাত নেওয়া মানু...

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

বাংলাদেশ

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

চাষিরা বলছেন, খেত থেকে হাটে নেওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজি কাঁচামরিচে গড়ে তিন টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া রয়েছে খাজনা ও অন্যান্য খরচ,...