শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির : দেশের দুগ্ধসমৃদ্ধ জনপদ শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরের পশ্চিম পার্শ্বের রাউতারা গ্রামে দেশের একমাত্র ‘মিসেস এলিজা খান মডেল গো-খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট’ স্থাপনের পর থেকেই চলছে দিন বদলের পালা। প্রবাদে আছে,‘খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশী’-অর্থাৎ একটি গো-খামার উৎপন্ন দুধের চেয়েও গবাদীপশুর মল (গোবর) থেকে বহুগুণ বেশী অর্থ আয় করা সম্ভব। এ যেন এক স্বপ্নীল রূপকথার কল্প গল্পের মতোই! ওই গো-খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের পর থেকে সেখানে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে উৎপন্ন হচ্ছে বায়োগ্যাস (মিথাইল গ্যাস)। উৎপন্ন ওই বায়োগ্যাসকে কাজে লাগিয়ে গ্যাসচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে ৫ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎপাদিত ওই ৫ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বায়োগ্যাস প্লান্টে উৎপন্ন মিথাইল বায়োগ্যাসে চলছে পারিবারিক রান্নাবান্নার কাজ। তার পরেও উৎপন্ন বাড়তি বায়োগ্যাসের রিজার্ভার থেকে প্রতি সপ্তাহে একদিন একটি গ্যাসবাহী ট্যাংকারের মাধ্যমে বায়োগ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। বায়োগ্যাসচালিত একটি ৫ কেভি জেনারেটর থেকে ৫ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেই বিদ্যুৎ দিয়ে পুরো গো-খামারের যাবতীয় বৈদ্যুতিক প্রয়োজন মিটিয়েও বাড়তি হিসাবে মিসেস এলিজা খানের বসত বাড়ীতে টেলিভিশন, ফ্রিজ, শক্তিশালী একটি সাবমেরিন বৈদ্যুতিক মোটর, বৈদ্যুতিক ভাল্ব জ্বানানো সহ তার আবাসিক খাতের পুরো বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এসব শুনতে কল্পবাক্য মনে হলেও যারা একবার ওই খামার ও প্লান্ট পরিদর্শণ করেছেন তারা এ সফলতার শতভাগ সত্যতা একবাক্যে স্বীকার করেছেন। শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা গ্রামের দেশের একমাত্র মডেল গো-খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট পরিদর্শনকালে ওই গো-খামার ও প্লান্টের মালিক, শাহজাদপুর উপজলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এলিজা খান ও খামারে কর্মরত রাখালদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে ,ওই গো-খামারে ছোট বড় উন্নতজাতের প্রায় ৮০টি গরু রয়েছে। তন্মদ্ধে প্রায় ৫০টি উন্নতজাতের দুধেল গাভী থেকে দিনে প্রায় সকাল ও বিকেল এ দুইবেলায় প্রায় ৫’শ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ খামারের গবাদীপশু থেকে দৈনিক প্রায় ৭০/৮০ মন তাজা গোবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই তাজা গোবর প্রথমে বায়োগ্যাস প্লান্টের কূপের ন্যায় একটি হাউজে পানি দিয়ে গোলানো হয়। ওই কূপের মাঝখানে রয়েছে একটি হাতল। হাতলটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তাজা গোবরকে তরল করা হয়। এরপর ওই তরল গোবর চলে যাচ্ছে বায়োগ্যাস প্লান্টের মূল রিজার্ভারে ( ১৩ ফুট ব্যাস ও ২০ ফুট গভীরতাবিশিষ্ট)। সেখানে তাজা তরল গোবর থেকে ৭ দিনের মধ্যেই বায়োগ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। যত বেশী গোবর গোল কূপের মধ্যে দিয়ে গোলানো হচ্ছে, তত বেশী বায়োগ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপন্ন বায়োগ্যাসের একটি অংশ চলে যাচ্ছে একটি বৃহৎ গ্যাস সংরক্ষণ রিজার্ভারে। উৎপন্ন বায়োগ্যাসের অন্য অংশ থেকে বায়োগ্যাস চালিত ৫ কেভি জেনারেটরে চিকন সাদা একটি পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই বায়োগ্যাস চালিত জেনারেটর থেকে ৫ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদিত ৫ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে ৫ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি পানির ট্যাংকিতে পানি উত্তোলনের জন্য শক্তিশালী একটি সাবমেরিন বৈদ্যুতিক মোটর চালানো হচ্ছে। সাবমেরিন ওই মোটর চালিয়ে ৫ হাজার লিটার পানির ট্যাংকিতে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পরে ওই পানির ট্যাংকী থেকে গো-খামারের গরুকে পানি খাওয়ানো সহ গো-খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা,ধোয়া মোছাসহ যাবতীয় কাজ করা হচ্ছে। যাবতীয় পানি সংরক্ষণের কাজ পাশাপাশি ওই গো-খামারসহ এলিজা খানের বাড়ির ১৩/১৪টি বৈদ্যুতিক ফ্যান,১৫/১৬ টি বৈদ্যুতিক ভাল্ব,ফ্রিজ,টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি চলছে। ওই বায়েগ্যাস প্লান্টে উৎপন্ন বায়োগ্যাস মিসেস এলিজা খানের প্রয়োজন মিটিয়েও ওই প্লান্ট এলাকা থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে সড়কের পার্শ্বে নির্মিত বায়োগ্যাস রিজার্ভারে সংরক্ষিত হচ্ছে। মিসেস এলিজা খানের ওই বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে উৎপন্ন বায়োগ্যাসে গো-খামার ও বাড়ির বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করছে। এতে সফল গো-খামারী এলিজা খানের প্রতি মাসে বিপুল পরিমান বৈদ্যুতিক খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। অপরদিকে, গোবর থেকে শুধু বায়োগ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে এখানেই শেষ নয়। উৎপন্ন বাড়তি বায়োগ্যাস সপ্তাহে একদিন একটি গ্যাসবাহীলরীতে লোড দিয়ে বিক্রি,জেনারেটার চালনার পরও তার গো-খামারে উৎপন্ন বায়োগ্যাস প্লান্টে উৎপন্ন বায়োগ্যাসে মিসেস এলিজা খান গ্যাসের চুল্লির মাধ্যমে রান্নার কাজ পুরোদমে করছেন। এতে বৈদুতিক খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবারের রান্নাবান্নার কাজে প্রয়োজনীয় জ্বালানী ব্যায়ও সাশ্রয় হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে,‘দেশের একমাত্র এলিজা খান মডেল গো-খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্টে দৈনিক প্রায় ৫’শ লিটার খাঁটি গরুর দুধ উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপন্ন ওই দুধ মিল্কভিটায় বিক্রি করে দৈনিক বিপুল পরিমান অর্থ আয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি মজুদকৃত বায়োগ্যাস সপ্তাহে ১ দিন বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুগম করে দেশের গো-সম্পদ সমৃদ্ধ জনপদের গো-খামারীদের জন্য ‘মিসেস এলিজা খান মডেল ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্লাান্ট’ উজ্জ্বল এক সাফল্যমন্ডিত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষত ওই গো-খামার থেকে দৈনিক প্রাপ্ত প্রায় ৭০/৮০ মন গোবর থেকে উৎপন্ন বায়োগ্যাসে গ্যাসচালিত ৫ কেভি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে টিভি,ফ্রিজ,সাবমেরিন মোটর চালনা,ভাল্ব জ্বালানো ও উৎপন্ন বায়োগ্যাসে পরিবারের রান্নার কাজের পাশাপাশি বাড়তি মজুদকৃত গ্যাস বিক্রি করে একদিকে যেমন বাড়তি আয় হচ্ছে,অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ব্যায়ও কমে গেছে। অর্থাৎ বহুগুণে আয় বেড়েছে ও অনেকাংশে খরচ কমেছে নিঃসন্দেহে যা গো-সম্পদসমৃদ্ধ জনপদের লাখ লাখ গো-খামারীদের ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যেতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে ও জাতীয় অর্থনীতিতে কল্পনাতীত ভূমিকা রাখবে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

আইন-আদালত

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

শামছুর রহমান শিশির : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দীর্ঘ ২ মাস পর ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামী পৌর মেয়র...

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শাহ মখদুমের পূণ্যভূমি ও কবিগুরু রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্কল...