শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম, শামছুর রহমান শিশির, ১১ আগষ্ট ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ : কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দেশের নিউজিল্যান্ড খ্যাত জনপদ শাহজাদপুর পৌরসদরসহ ১৩ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গাঁও গেরামে শত শত গো-খামারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে স্বল্প সময়ে অল্প টাকা বিনিয়োগে দেশি ও বিদেশি জাতের গরু মোটাতাজাকরণ কাজে শেষ মুহুর্তে ব্যাতিব্যস্ততায় সময় কাটছে স্থানীয় গো-খামারিদের। গরু মোটাতাজাকরণ করে দারিদ্র জয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতশত বেকার যুবক ও এলাকাবাসী। প্রতি বছর মাত্র ৬ মাসে বাড়ির অন্যান কাজের পাশাপাশি প্রতিটি ষাঢ় গরু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরন করে ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করে শাহজাদপুরে শতশত বেকার গ্রামবাসী এক দৃষ্টান্তমূলক নজির স্থাপন করেছেন। তাদের গো-খামারে মোটাতাজাকরণকৃত গরু বিক্রি হবে দেশের বিভিন্ন কোরবানীর হাটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই শাহজাদপুর পৌরসদরসহ ১৩ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুকরণ অনুসরণে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ করেন স্থানীয় গো-খামারিরা। উপজেলার টেপরি ও পুরান টেপরি গ্রামে সবচাইতে বেশী গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়। এছাড়া উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের বাজিয়ার পাড়া, মহল্লা, পোতাজিয়া, রেশমবাড়ী, আঙ্গারু, বৃ-আঙ্গারু,বাড়াবিল, রুপবাটি, রাউতারা, পোরজনা, পুঠিয়া, ডায়া, নগরডালা, কাকুরিয়া, কাদাইবাদলা,চিথুলিয়া, কাশিনাথপুর, বনগ্রাম,সরিষাকোল, মশিপুর, নুকালী, শেলাচাপড়ী, চরাচিথুলিয়া, ভাইমারা, বহলবাড়ী, আহম্মদপুর, বিন্নাদায়ের, মাদলা, টিয়ারবন্দ, শাকতোলা, বিলকলমী, বৈলতৈল ও যমুনা নদী অধ্যূষিত গালাসহ বিভিন্ন বসতবাড়ি ও গো-খামারে এবং বিশেষত উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে । অনেক বেকার এলাকাবাসী স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে দেশী ও বিদেশী জাতের ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল, দেশী শংকর, অষ্ট্রেলিয়ান, জার্সিসহ বিভিন্ন জাতের এঁেড় বাছুর ক্রয় করে মোটাতাজাকরণ করছেন। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই মোটাতাজাকৃত এসব বাছুর ও এঁড়ে গরু ৬ থেকে ১০ মাস লালন পালন করে লাভজনক দামে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এ কাজে তাদের খুব একটা বেশী বেগ পোহাতে ও খরচ করতে হয়নি। কারণ হিসেবে বেশ কয়েকজন গো-খামারিরা জানিয়েছেন, বন্যাপ্রবন এলাকা শাহজাদপুরে এমনিতেই প্রচুর দুর্বা ঘাস জন্মে থাকে। গরুকে এসব ঘাস খাওয়াতে বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। ফলে একজন লোক ৩/৪ টি গরু খুব সহজেই বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণ করতে পারে। বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরন করা অনেক গো-খামারিদের ভাষ্যমতে, ৫০/৫৫ হাজার টাকার একটি ষাঢ় ৬ মাস মোটাতাজাকরণ করে ১ থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় প্রতি বছর কোববানীর ঈদে দেশে কোরবানীর গরুর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতি বছরের এ সময় বেশ লাভজনক দামেই মোটাতাজাকরণ গরুগুলো বিক্রি করা হয়ে থাকে। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় ও অনেক বেকারদের দেখাদেখীতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরন করে শত শত বেকার স্বাবলম্বী হয়েছেন। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবচাইতে বেশী গরু মোটাতাজাকরন গ্রাম পুরান টেপরি গ্রাম রয়েছে মোটাতাজাকরণে অনেক গো-খামার। ওই গ্রামের স্বাবলম্বী বেশ কয়েকজন গো-খামারি জানিয়েছেন, প্রথমে বংশপরম্পরায় শিখে আসা মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা গরু মোটাতাজাকরণ করতে শুরু করেন। এতে প্রথম থেকেই অনেক বেকার কৃষক সফলতা লাভ করেন। পরবর্তীতে অধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির অবলম্বনে অত্যন্ত লাভজনক এ পেশাকে অনেক বেকারই অনুসরণ করতে থাকেন। ওই গ্রামে বৃদ্ধি পেতে থাকে গরু মোটাতাজাকরণ করে স্বাবলম্বী এলাকাবাসীর সংখ্যা ।পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও একইভাবে গো-খামারীরা গরু মোটাতাজাকরণ করে তাদের ভাগ্যের চাকাকে দ্রুত ঘোড়াতে সক্ষম হচ্ছেন। বিশিষ্ট পশুবিজ্ঞানী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাকিবুল ইসলাম খানের বলেন,‘আগেকার মানুষ দু’একটি গরু পালতো শখ করে। বলদ গরু হলে হাল চাষের ক্ষেত্রে ,আর ষাঁড় গরু হলে তাকে অনেক কৃষক মাংসের জন্য তৈরি করতো। গো-মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গরুর সংখ্যা বেশী হলেও সংখ্যা গরিষ্ঠর স্বাস্থ্যই জীর্ণশীর্ণকায়। অথচ, বাড়ির কাজ করার পাশাপাশি সামান্য যতœ নিলেই গরু মোটাকাতাজকনেণর মাধ্যমে অধিক মাংস উৎপাদন করা সম্ভব যা দেশে মাংসের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে শাহজাদপুরের গরু মোটাতাজাকরন করা শত শত স্বাবলম্বী জনগোষ্ঠির গরু মোটাতাজাকরন গো-খামার।’ উপজেলার পুরানটেপরি গ্রামের গরু মোটাতাজাকরণ গো-খামারিরা আরও জানান, বংশপরম্পরায় গ্রামের হাতে গোনা মুষ্টিমেয় কৃ ষাঁড় ও বলদের মোটাতাজাকরণের কাজ করতে থাকেন। ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ও পেশাটি লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় ওই গ্রামের মুকুল শেখ, গোলাম মওলা, কাদের মেম্বার,জহুরুল হক, মিজানুর রহমান, বাবলু মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন ,মো: আইয়ুব আলী, দুলাল মিয়া, নজরুল ইসলাম, গোলবার হোসেন, আলম মিয়া, আব্দুল বারেক, আমজাদ হোসেন, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুস, ঠান্ডু মিয়া, আনছার মিয়া, গোলাম হোসেন,আবু সাইদ, আবু তালেব, ভোলা মিয়া, আব্দুল আজিজ, শহিদ আলী, নূর মোহাম্মদ,নজরুল ইসলাম(২), খয়বার আলী, মোজাহার আলী, বাবলুমিয়া, ইদ্রিস আলী, আমির হোসেন, ইছা, সরোয়ার হোসেন, আবুল কালাম, কুরমান আলী ,আজিজল হক, জহুরুল(২), ইনসাফ আলী, গাজীউর রহমান, রহম আলী, এরশাদ আলম, শাকাওয়াক হোসন, হান্নান প্রামানিক, আব্দুল মান্নান, জামাল হোসেন, ছাকের আলী, দেলওয়ার হোসেনসহ অসংখ্য বেকার গ্রামবাসী মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। পরবর্তীতে তাদের ধারাবাহিক সাফল্য উপজেলার অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ওই গ্রামে মোটাতাজাকরণকৃত গরু কৃষকরা স্থানীয় তালগাছী গরুর হাট, বেড়া উপজেলার চতুর আলী গরুর হাট, উল্লাপাড়ার গ্যাসের হাট, ঢাকার গাবতলী গরুর হাটসহ কোরবানীর ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন গরুর হাটে বিক্রি করেন। বিজ্ঞমহলের মতে, ফসলের মাঠে কৃষিকাজ বা বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণ করে অতি অল্প সময়ে শাহজাদপুরের বেকার আত্মপ্রত্যয়ী বেকাররা স্বাবলম্বী হরার পাশাপাশি, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবাদন রাখতে পারেন। তাদের মতো বেকার জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ করে প্রতি বছর দেশের গো-মাংসের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে শতশত কোটি টাকার বৈদশিক মুদ্রা আয় করতে পারেন। এতে দেশের বেকারদের সংখ্যা একদিকে যেমন কমে যাবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে তারা দারিদ্রতাকে জয় করে সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শাহ মখদুমের পূণ্যভূমি ও কবিগুরু রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্কল...

মহানবী (সা.) এর পোশাক দেখতে ইস্তাম্বুলে হাজারো মানুষের ঢল

আন্তর্জাতিক

মহানবী (সা.) এর পোশাক দেখতে ইস্তাম্বুলে হাজারো মানুষের ঢল

খবরে বলা হয়, হযরত উওয়াইস আল-কারনি (রা.)-কে উপহার হিসেবে পোশাকটি দেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তার বংশধররা এটি দীর্ঘ ১৪শ’ বছর...

দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার বাঘ ইকো ট্যাক্সি জুলাই থেকে উৎপাদনে যাবে

অর্থ-বাণিজ্য

দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার বাঘ ইকো ট্যাক্সি জুলাই থেকে উৎপাদনে যাবে

বিদ্যুৎ চালিত এই গাড়িটি প্রায় শব্দহীন। অন্যদিকে, এর অভ্যন্তরীণ বায়ুচলাচল ব্যবস্থা এবং ফ্যান এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা...

‘চিরায়ত মাছে ভাতে বাঙালি’ কথাটি ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে কল্পবাক্যে

অর্থ-বাণিজ্য

‘চিরায়ত মাছে ভাতে বাঙালি’ কথাটি ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে কল্পবাক্যে

শামছুর রহমান শিশির, বিশেষ প্রতিবেদক : দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। এ বিলকে দেশের সর্ববৃহত মাছের খনি বলা হতো। নদী-নালা, খা...

শাহজাদপুরের চা দোকানী হত্যার রহস্য উদঘাটিত

অপরাধ

শাহজাদপুরের চা দোকানী হত্যার রহস্য উদঘাটিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : শাহজাদপুর গালা ইউনিয়নের ভেড়াখোলা গ্রামে এবছর ১৯মার্চে ডোবা থেকে জামাত আলী নামের এক চা দোকানীর লাশ উ...

দিনে গরম রাতে শীত- বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ

স্বাস্থ্য

দিনে গরম রাতে শীত- বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ

চন্দন কুমার আচার্য, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ দিনে গরম রাতে শীত! সিরাজগঞ্জ জেলায় ঘরে ঘরে সর্দি জ¦র-ডায়রিয়াসহ বিভিন্...