রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
সোহরাব হাসান: অন্যান্য বিষয়ের মতো শাহজাদপুরের সমকাল-এর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুলের হত্যা নিয়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির নেতাদের মধ্যে বাহাস শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এই সরকারের আমলে সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন। আর সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের জানালেন, বিএনপিই সাংবাদিক হত্যায় চ্যাম্পিয়ন। শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছেন। স্থানীয় সাংসদ হাসিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেছেন, শাহজাদপুরের পৌর মেয়র হালিমুল হকের শটগানের গুলিতেই শিমুল মারা গেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা নাকি মেয়রকে গুলি করতে বারণও করেছিলেন। বারণ করলেই কি তাঁর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? বিরোধী দল সমাবেশ ডাকলেই পুলিশ প্রশাসন চারদিকে ঘেরাও করে রাখে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাত তুলে ১৪৪ ধারা জারি করে। এখানে কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন? কী করে পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে একজন ব্যক্তি অস্ত্রের মহড়া দিতে পারলেন? আওয়ামী লীগের উঁচু ও নিচু স্তরের সব নেতা এখন বলছেন, ‘শিমুল হত্যাকারী যিনিই হোন, তাঁর বিচার হবে। হত্যাকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা ও মেয়র হালিমুল হকের সমর্থক। অতএব, এটা বলার সুযোগ নেই যে সাংবাদিক শিমুলকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির বা তাদের দোসর বিএনপির’ কেউ হত্যা করেছেন। এখানে আওয়ামী লীগের নেতাদের এই সাফাই গাওয়ারও সুযোগ নেই যে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা আওয়ামী লীগে ঢুকে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। কেননা যে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির, তিনি জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন। একাধিকবার দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ফের দলে ফিরেছেন। বলা যায়, একেবারে পরীক্ষিত আওয়ামী লীগার। বিরোধী দলের সমর্থক মেয়রদের বিরুদ্ধে মামলা হলে সেই মামলা নিষ্পত্তির আগেই সরকার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে শাস্তি প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে তারা কী করে, সেটাও দেখার বিষয়। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, মেয়র সুযোগ পেলেই নাকি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করেন। প্রতিপক্ষও এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগেরই কেউ নিশ্চয়ই হবেন। আওয়ামী জমানায় বিরোধী দলের কারও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করা কিংবা সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার হিম্মৎ আছে? আওয়ামী লীগের নেতারা তো বলছেনই যে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাকি কর্মসূচি ডেকে ঘরে বসে হিন্দি সিনেমা দেখেন। কর্মসূচি দিয়ে ঘরে বসে হিন্দি ছবি দেখলে অন্তত সাংবাদিককে প্রাণ হারাতে হয় না। আর কর্মসূচি দিয়ে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে কী পরিণতি হয়, শাহজাদপুরের শিমুলই একমাত্র উদাহরণ নয়। এর আগে মাগুরায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সশস্ত্র মহড়ার মাঝে পড়ে মায়ের পেটে থাকা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কল্যাণে মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশুটি প্রাণে রক্ষা পেলেও দুর্বৃত্তের গুলি শিমুলকে বাঁচতে দেয়নি। এখন নেতা-মন্ত্রীরা শিমুলের জন্য আহাজারি করলেও শিমুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যাপারে কেউ উদ্যোগ নেননি। আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পড়ে সাংবাদিক শিমুল গুলিবিদ্ধ হন গত বৃহস্পতিবার। যে দেশে ছাত্রলীগের উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হেলিকপ্টার ভাড়া করতে পারেন ছাত্রলীগের সভাপতি, সে দেশে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য গাড়িতে ঢাকায় নিয়ে আসা যায় না, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে? শিমুলের ঘটনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর কথাও মনে পড়ল। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের এক জনসভায় দুর্বৃত্তরা বোমার বিস্ফারণ ঘটালে তিনি গুরুতর আহত হন। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য হেলিকপ্টার চাওয়া হলে তৎকালীন সরকার সাড়া দেয়নি এবং গাড়িতে ঢাকায় আনার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। এখন আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা বদলায়, দল বদলায়, কিন্তু ক্ষমতার চরিত্র বদলায় না। বিএনপি আমলে বেশি সাংবাদিক খুন হয়েছেন, না আওয়ামী লীগ আমলে, সেই না-হক বিতর্কে গিয়ে আমরা কী করব। কোন দল চ্যাম্পিয়ান আর কোন দল রানারআপ, সে বিতর্ক আমাদের কাছে অর্থহীন। আমরা চাই প্রতিটি হত্যার বিচার, প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা। চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাতে কোনো সাংবাদিককে বেঘোরে জীবন দিতে না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমরা চাই। শিমুল হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতা থেকে মন্ত্রী—সবাই হত্যাকারীর বিচার হবে বলে বুলন্দ আওয়াজ তুলেছেন। তাতে দেশের সাংবাদিক সমাজ আশ্বস্ত হতে পারবে বলে প্রতীতি হয় না। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের পাকড়াও করে বিচার করার কথা বলেছিলেন। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল—এই পাঁচ বছরেও সরকার সাগর-রুনির হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে পারেনি। শিমুল হত্যার বেলায়ও যে সে রকমটি হবে না, এর নিশ্চয়তা কী? সূত্র: প্রথম আলো

সম্পর্কিত সংবাদ

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

অর্থ-বাণিজ্য

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

শামছুর রহমান শিশির : পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকার তাঁত...

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : সিরাজগঞ্জ জেলা মটর মালিক সমিতির অাওতাভূক্ত ৪টি বাসের স্টার্টিং পয়েন্ট শাহজাদপুর করার দাবী শ...

নতুন এশিয়ার রূপায়ণ-বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভাবনা