মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিশেষ প্রতিবেদক : ষাটের দশকে জন্ম শৈশব কাটে তার পাবনায় পিতার চাকুরীস্থলে। স্কুল জীবনও পার করে সেখানে। সেই সময়ের পাবনা শহরে নকশালীদের প্রভাব ও মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল আন্দোলনের মধ্যে পাবনা শহর ছিল এক অস্থির জায়গা। এই মেজাজটি ধারণ করে এসএসসি পাশের পরে পিতার আর্থিক সহায়তার জন্য যোগ দেয় বাংলাদেশ রাইফেল্স (বিডিআর) এর সিগন্যাল কোরের ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে। সেখানে কোন এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে অশালীন আচরণ ও মারধর করে পালিয়ে চলে আসে চাকুরী থেকে। বিভাগীয় মামলা থেকে গ্রেফতার এড়াতে ১৯৭৮ সালে আত্মগোপন করে দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌরসদরের নলুয়ার চরে। পলাতক জীবনে হাফ ছাড়তে গ্রামের দু’একজন সঙ্গীসহ আসে শাহজাদপুর সদরে। সেই সময়ের জাসদ ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এক-আধটু। বিভাগীয় মামলা মিটে গেলে ছাত্র রাজনীতি দেখে সাধ জাগে আবার কলেজে ভর্তি হতে। ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রনেতাদের হাত ধরে শাহজাদপুর কলেজে এইসএসসিতে ভর্তি হন। কলেজ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন নানা ভাবে। ১৯৮১ সালে শাহজাদপুর কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। শাহজাদপুর কলেজে ভিপি থাকাকালীন এক ছাত্র আন্দোলন তার উশৃংখলতায় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলকে নিয়ে যায় ভিন্ন খাতে। তৎকালীন কলেজের অধ্যক্ষকে তালাবদ্ধ করে রাখেন অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে। এর প্রেক্ষিতে কলেজের গভর্নিং বডি তাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে বহিষ্কার করে শাহজাদপুর কলেজ থেকে। নিজেকে বিভিন্ন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাসদের গণবাহিনীর সদস্য, নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহারকারী বলে ভক্ত সমর্থকদের কাছে সারাক্ষণ মেতে থাকতেন গল্পে। ৯১’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মশাল প্রতীকে নির্বাচনের পর সাধ জাগে তার বড় দলের এমপি হবার। ১৯৯৫ সালে জাসদ থেকে বের হয়ে প্রথমে বিএনপির সাবেক মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার শ্যালকের মাধ্যমে বিএনপিতে স্থানীয়ভাবে যোগদান করে। কিন্তু তখনই তিনি তার নমিনেশন প্রদান করা হবে- এমন শর্ত জুড়ে দিলে তৎকালীন বিএনপির শাহজাদপুরের এমপি কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিশ তার নির্বাচনী এলাকায় তাকে বিএনপির কোন কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করতে দেন না। এ সময় তিনি তার দলবল নিয়ে সাঁথিয়াতে বেগম খালেদা জিয়ার জনসভায় মেজর (অব:) মঞ্জুর কাদেরের সাথে যোগদান করার জন্য চেষ্টা করে সেখানেও ব্যার্থ হন। বিএনপিতে যোগদানের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সুগন্ধায়ও দুইবার গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। এরপর স্থান নেন আওয়ামী লীগে। ৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর ৯৬ সালে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কাজ করার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো বহিষ্কার হন। আবারো দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের জন্য ২০০৪ সালে দ্বিতীয় বার আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন। এর পর থেকেই একলা চলো পথে অস্ত্রের ঝনঝনানি, কথায় কথায় অস্ত্রের ভয় দেখানো - হয়ে দাড়ায় তার নিত্য নৈমিত্বিক ঘটনা। তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহন না থাকায় ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে উপজেলা ও জেলা থেকে তাকে বাদ দিয়ে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাবেক ভিপি আব্দুর রহিমের নাম প্রস্তাব করলেও কেন্দ্রে তদবির করে মনোনায়ন নিয়ে আসেন। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর তিনি পাবনার চর থেকে নিষিদ্ধ সংগঠনের বেশ কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র ও বোমার ঝংকারে আতংকিত করে তোলে নির্বাচনী মাঠ। নির্বাচিত হবার পর থেকেই দলীয় কোন নেতাকর্মীর সাথেই সখ্যতা না রেখে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের প্রহরায় চলাফেরা করতো সে। এমনকি পৌরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় কোন কাউন্সিলর বা পৌর কর্মকর্তাদের গুরুত্ব না দিয়ে সে এবং তার ভাই পিন্টু-মিন্টুর নির্দেশে চালাতেন পৌরসভা। ভয়ে তটস্থ থাকতো অসহায় পৌর কাউন্সিলরা। প্রকৌশলী বিভাগের জন্য কেনা একটি মটর সাইকেল ৯ মাস যাবৎ কেনার পর থেকেই সেটি তার ভাই পিন্টুর ব্যক্তিগত মোটর সাইকেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পৌরসভার বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্বের অর্থে ৩৫ লাখ টাকার সংস্কার কাজ গোপনে টেন্ডার দিয়ে ফেয়ার ট্রেডার্স নাম দিয়ে পিন্টুই এক রকম কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে। প্রকল্পস্থলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিন্টুর ভয়ে একদিনের জন্যও প্রকল্পস্থলে যায়নি প্রকৌশলী বিভাগের কেউ। পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহনের পরে ইউজিআইআইপি’র প্রকল্পের সাড়ে ১০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডারে নি¤œ দরদাতা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে তাদের কাছ থেকে ১৩ % উর্ধদর দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ১০ % কমিশন গ্রহন করে যার পরিমান এক কোটি ১০ লাখ টাকার উপরে। শহরের ৮ কিলোমিটার ড্রেন পরিচ্ছন্নের অভাবে যত্রতত্রভাবে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেনগুলি। টেন্ডার দেয়াই যেনো তার মূল লক্ষ্য। অসহনীয় অনিয়মের প্রতিবাদ করতে চাইলে তাকে বলতে শোনা যেতো, ‘পৌর নিয়মে নয়-অস্ত্রের নিয়মেই চলবে পৌরসভা।’ সর্বশেষ দিলরুবা মোড় থেকে উপজেলা পর্যন্ত রাস্তার কাজটি দীর্ঘদিন ফেলে রেখে অসহনীয় করে তোলে সেই অঞ্চলের মানুষের জীবন। ধূলো আর ইটের গুঁড়ো বাতাসে মিশে শ্বাসকষ্টে ভোগে স্থানীয় বৃদ্ধ ও শিশুরা। এরই প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদ বন্ধ করে দেয় সেই রাস্তাটি । এটাই ছিল বিজয়ের অপরাধ। এই অপরাধেই পিন্টুকে দিয়ে বিজয়কে ধরে এনে তার বাড়ির ভেতরের টর্সার সেলে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে হাত পা ভেঙ্গে ভ্যানে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সূত্রপাত সংঘর্ষের। সেই সংঘর্ষের সময় পৌর মেয়র ও তার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ছবি তুলতে নিলে পরিকল্পিতভাবে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলকে গুলি করে হত্যা করে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী।

সম্পর্কিত সংবাদ

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

ধর্ম

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

বাংলাদেশ

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

চাষিরা বলছেন, খেত থেকে হাটে নেওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজি কাঁচামরিচে গড়ে তিন টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া রয়েছে খাজনা ও অন্যান্য খরচ,...

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

বাংলাদেশ

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

একটি সংগঠনের উদ্যোগে বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। গ্রামের সকল পরিবার হয়েছে এখন সচ্ছল। এই গ্রামে এখন ফিতরা ও যাকাত নেওয়া মানু...

শাহজাদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা! নিহত ১

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা! নিহত ১

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ঢাকাগামী একটি বাস সড়কের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। এদের...

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...