রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
করোনা ভাইরাস শনাক্তে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছিল রাজধানীর গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কৌশলে রোগী ভর্তি রেখে অতিরিক্ত বিল বাণিজ্যও করছিল হাসপাতালটি। পাশাপাশি রোগীদের বিল বাড়াতে একই টেস্ট বারবার করাচ্ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, এই জালিয়াতি ঢাকতে হাসপাতালটি বিলের ডাটা পর্যন্ত ডিলিট করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব জানিয়েছে, অভিযানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেশকিছু বিলের ডকুমেন্ট হাতে পেয়েছে। অতিরিক্ত বিল বাণিজ্যে অনেক তথ্য হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট বা বিল বিভাগের কম্পিউটার থেকে ডিলিট করে দিয়েছে। চলতি বছরের জুনের কোনো ডাটাই হাসপাতালের সার্ভারে নেই। অভিযানের আগেই সমস্ত ডাটা ডিলিট করে ফেলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে কার নির্দেশে, কে এই কাজটি করেছেন সেটি খতিয়ে দেখছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই হাসপাতাল রোগী ভর্তি রেখে অতিরিক্ত বিল বাণিজ্য করছিল। এছাড়া রোগীদের বিল বাড়াতে একই টেস্ট দুই থেকে তিন বার দেখানো হতো। কোভিড-১৯ নেগেটিভ রোগীদের ভুয়া পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে তাদেরও ভর্তি করা হতো। পাশাপাশি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত নানা টেস্ট দেখিয়ে তাদের আইসিউ ও কেবিনে রেখে বানানো হতো মোট অঙ্কের বিল। গত ২৪ জুন মো. আবদুস সাত্তার নামে এক রোগী ভর্তি হন সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জানা গেছে তাকে কোভিড-১৯ পজিটিভ ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে ভর্তি রাখা হয়েছিল। এরপর একদিনে বিভিন্ন টেস্ট, ওষুধসহ তার হাসপাতাল বিল করা হয় এক লাখ ২৩ হাজার টাকা। কিন্তু পরদিন ওই রোগী ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনা পরীক্ষ করালে রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। এভাবেই সাহাবউদ্দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসিন্দা এনামুল হক। গত ১৪ জুন তার মাকে কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য সাহাবুদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর ধরা পড়ে টাকার বিনিময়ে তার মায়ের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এনামুল বাংলানিউজকে বলেন, মায়ের করোনা পরীক্ষার জন্য তিন হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে একটি মানি রিসিট দেয়। নমুনা নেওয়ার পর ওই দিন বিকেলে হাসপাতালে ফোন করে জিজ্ঞেস করি রিপোর্ট কখন পাব। তখন হাসপাতাল থেকে বলা হয়, কোনো রিপোর্ট দেওয়া হবে না। আমি অন্য কোনো হাসপাতালে ভর্তি করতে গেলেও তো এই রিপোর্টের দরকার। তখন হাসপাতাল বলে মায়ের করোনা নেগেটিভ। তাই রিপোর্ট দেওয়া হবে না। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ই-মেইলে অভিযোগ দিলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে আমি র‌্যাব-১ এ অভিযোগ দিই। এসব প্রতারণার অভিযোগেই হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। এছাড়া সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবুল হাসনাত ও হাসপাতালের ইনভেন্টরি অফিসার শাহরিজ কবির সাদিকে আটকও করেছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টগুলোতে এই সহকারী পরিচালকের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত বিল নৈরাজ্য এবং টেস্ট বাণিজ্য বন্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই বাণিজ্য যারাই করছেন, দ্রুত বন্ধ করুন। নয়তো, এসব অপরাধীকে কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। ‘এমন প্রতারণার অভিযোগে হাসপাতালের মালিকসহ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে। মামলায় যারা আসামি হবেন, তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে’, যোগ করেন তিনি। সারোয়ার আলম বলেন, হাসপাতালটির জুন মাসের সমস্ত বিলের ডাটা ডিলিট করে দিয়েছে। এছাড়া সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবুল হাসনাতের তথ্যমতে, নয়টি র‌্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ধার করা হয়েছে। আরও কিট ছিল, সেগুলো তারা সরিয়ে ফেলেছে। মামলা দায়ের হলে আমরা আরও তথ্য উদ্ধার করব। রোববার (১৯ জুলাই) বিকেলে সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসনের সমন্বয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানে দেখা যায়, এক বছর ধরে এই হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। নবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সরকারের অনুমোদন পাওয়ার আগেই হাসপাতালটি কোভিড-১৯ টেস্ট করছিল। কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য হাসপাতালটি অনুমোদন পেলেও এখানে আর্টিফিসিয়াল মেশিন না থাকায় এক সপ্তাহ আগে অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এও পাওয়া যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা নেগেটিভ রোগীকে পজেটিভ বলে ভর্তি রেখে মোটা অঙ্কের বিল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। এছাড়া সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচটি সার্জিক্যাল সামগ্রীও উদ্ধার করেছে র‌্যাব। পাশাপাশি হাসপাতালের ফার্মেসিতে অননুমোদিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও পেয়েছে সংস্থাটি। সুত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সম্পর্কিত সংবাদ

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

অর্থ-বাণিজ্য

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

শামছুর রহমান শিশির : পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকার তাঁত...

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : সিরাজগঞ্জ জেলা মটর মালিক সমিতির অাওতাভূক্ত ৪টি বাসের স্টার্টিং পয়েন্ট শাহজাদপুর করার দাবী শ...

নতুন নিয়মে ৩৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি