শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
শফিউল আযম বেড়া (পাবনা): করোনার প্রকোপে তরল দুধের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাঘাবাড়ির প্রায় ২০টি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দেয়ায় পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ গো-খামারি ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন। গত রমজানে দুধের চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় একটু আশার আলো দেখেছিলেন খামারিরা। ওই সময় দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন খামারিদের কাছ থেকে আগ্রহের সাথে যেমন দুধ কিনেছেন, তেমনি খোলাবাজারেও মিলেছে ভালো দাম। এমন অবস্থা ছিল ঈদুল ফিতরের পরের প্রায় সাত দিন পর্যন্ত। কিন্তু এখন আবার খামারিদের আগের দুঃসময় ফিরে এসেছে। চাহিদা কমে যাওয়ার কথা বলে প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ নেয়া একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে খোলাবাজারে খামারিদের লোকসান দিয়ে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এ দিকে হঠাৎ করেই গো-খাদ্যের দাম ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সেটা খামারিদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত লোকসানে এ অঞ্চলের অনেক গো-খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৩ সালের দিকে পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ দুগ্ধ অঞ্চল গড়ে ওঠে। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখের বেশি গো-খামার রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু পালন করে দুধ উৎপাদন করা হয়। এ অঞ্চলে প্রতিদিন ১৫ থেকে সাড়ে ১৬ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দেড় লাখ লিটার নেয় বাঘাবাড়ির মিল্কভিটা, সাড়ে চার লাখ লিটার নেয় আফতাব, আকিজ, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান এবং এক লাখ লিটার নেয় প্রাণ কোম্পানি। এ সব প্রতিষ্ঠানের দুধ সংগ্রহের পরিমাণ প্রতিদিন প্রায় সাত থেকে আট লাখ লিটার। এ ছাড়া ঘোষেরা ৬০ থেকে ৭০ হাজার লিটার দুধ কিনে থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অবশিষ্ট দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বগুড়া, রংপুর, নাটোর, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। এই দুগ্ধ অঞ্চলকে টার্গেট করে প্রাণ, আকিজ, আফতাব, ব্র্যাক ফুড (আড়ং), অ্যামোফ্রেস মিল্ক, আড়ং দুধ (ব্র্যাক), মিল্কভিটা, ফার্মফ্রেস, রংপুর ডেইরি, ইছামতি ডেইরি, সেফ মিল্ক কোয়ালিটি, বিক্রমপুরসহ প্রায় ২০টি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলে তাদের আঞ্চলিক ও শাখা দুগ্ধ সংগ্রহশালা স্থাপন করেছে। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে কেন্দ্র করে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার তাদের জীবিকার পথ হিসেবে গাভী পালন ও দুধের ব্যবসাকে বেছে নিয়েছেন। ফলে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার গোখামার। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে বাজারজাত করে থাকে। কিন্তু করোনার প্রকোপে তরল দুধের চাহিদা কমে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। মিষ্টি ও চায়ের দোকানদাররাও এখন আগের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ কম দুধ কিনছেন। ফলে উৎপাদিত দুধ নিয়ে খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। অনেক খামারি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে দুধ বিক্রি করছেন। গত রমজানে দুধের চাহিদা কিছুটা বাড়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। এমনকি দুধের সংগ্রহমূল্যও বাড়ানো হয়। এমনিতে প্রতিষ্ঠানগুলো ৪০ থেকে ৪২ টাকা লিটার দরে দুধ সংগ্রহ করলেও রমজানে বেসরকারি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ৪৫ থেকে ৫০ টাকা লিটার দরে দুধ সংগ্রহ করে। এ ছাড়া খামারিরা খোলাবাজারে ও ছানার কারখানায় এর চেয়ে বেশি দামে দুধ বিক্রি করেন। এতে করে খামারিরা আশার আলো দেখতে থাকেন। অনেকেই মনে করেন দুঃসময় কেটে গিয়ে খামারিদের সুসময় ফিরে এসেছে। কিন্তু আবার দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দিলে এ অঞ্চলের দুগ্ধশিল্পে নেমে আসে বিপর্যয়। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে খামারিরা উৎপাদিত দুধ নিয়ে মহাবিপাকে পড়েন। প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দেয়ায় স্থানীয় বাজারে খামারিরা পানির দরে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করেন। দুগ্ধ প্রধান এলাকা সাঁথিয়া, ফরিদপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার কয়েকজন খামারি জানান, ঈদুল ফিতরের পর দুধের দাম কমতে থাকলেও গো-খাদ্যের দাম উল্টো বেড়ে চলেছে। এক হাজার ২৫০ টাকা দামের ৩৭ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা ভুসির দাম ঈদুল ফিতরের পরে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪২০ টাকা। ৩০০ টাকা মণের খড়ের দাম হয়েছে ৪০০ টাকা। খৈল, চিটাগুড়সহ সব ধরনের গো-খাদ্যের দামই এ ভাবে বেড়েছে বলে খামারিরা জানিয়েছেন। বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারি মাহফুজা মীনা বলেন, আমার খামারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ হয়। এক মাস ভালো দামে বিক্রি করার পর আবারো উৎপাদিত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছি। সাঁথিয়ার আমাইকোলা গ্রামের দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সেফ মিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ শেখ জানিয়েছেন, করোনা দেখা দেয়ার পর তাদের প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ নেমে আসে ৫০০ থেকে এক হাজার লিটারে। কিন্তু রমজানে তারা প্রতিদিন পাঁচ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। তখন তারা প্রতি লিটারের সংগ্রহ মূল্য ৫০ টাকার কাছাকাছি করেছিলেন। অথচ এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দামেও খামারিরা তাদের কাছে দুধ বিক্রির জন্য ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার লিটারের বেশি দুধ তারা নিতে পারছেন না।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে পৌরসভা ও অগ্নিবীণা সংসদে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

দিনের বিশেষ নিউজ

শাহজাদপুরে পৌরসভা ও অগ্নিবীণা সংসদে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : আজ শুক্রবার শাহজাদপুর পৌরসভা ও ঐতিহ্যবাহী অরাজনৈতিক সংগঠন অগ্নিবীণা সংসদের উদ্যোগে ইফত...

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

উল্লাপাড়া

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

তানিম তূর্যঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর পুকুর থেকে ইয়াম ইসলাম( ৮) নামের এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে...

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

অর্থ-বাণিজ্য

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর উপজেলা সংবাদদাতাঃ শাহজাদপুর উপজেলার কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির নব-নির্বাচিত ক...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা