বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
করোনাভাইরাসের মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় নাকাল অবস্থা ভারতে। দিনে দিনে বাড়ছে রোগী, বাড়ছে মৃত্যু। শ্মশানে দিন-রাত জ্বলছে চিতা। হাসপাতালে শয্যার সংকট, অক্সিজেন সংকটসহ নানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এর মধ্যেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতে পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন)। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত শুক্রবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ভারতে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার। গত কয়েক দিন ধরেই ভারতে দৈনিক রোগী শনাক্তের সংখ্যা তিন লাখের ওপরে। দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী ভারতে করোনা সংক্রমিত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ৪৮১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯৭ জন। অর্থাৎ উপসর্গহীন, মৃদু, মাঝারি ও গুরুতর অসুস্থ- সব মিলিয়ে ভারতে গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন করোনা রোগী ছিলেন ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৪ জন। করোনা রোগী বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত শুক্রবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬২৪ জন। এ নিয়ে ভারতে করোনায় মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৪ জন মারা গেলেন। ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি এ ক্ষেত্রে কতটা দায়ী, তা অবশ্য নিরূপণ করতে পারেননি গবেষকেরা। ভাইরাসের নতুন ধরনটি আসলে কী যেকোনো ভাইরাসই প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়, নিজেদের নতুন নতুন সংস্করণ বা ধরন (স্ট্রেইন) তৈরি করে। তবে ভাইরাসের বেশির ভাগ পরিবর্তনই তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। কোনো কোনো পরিবর্তনে ভাইরাসটি দুর্বলও হয়ে পড়ে। কিন্তু কোনো কোনো পরিবর্তনের পর ভাইরাস আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, প্রচলিত টিকায় সুরক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির নাম গবেষকেরা দিয়েছেন ‘বি-ওয়ান-সিক্সসেভেনটিন’। গত অক্টোবরে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। সে সময় সবে ভারত করোনার প্রথম ধাক্কা সামাল দিয়ে উঠছে। তবে গত মার্চ থেকে দেশটিতে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে। গবেষকেরা বলছেন, দেশটিতে এটি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন ধরনটি কতটা ছড়িয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাসের নতুন ধরনটি কতটা ছড়িয়েছে, তা নির্ণয়ে ভারতে বড় পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো হয়নি। তবে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি নমুনার মধ্যে ২২০টিতেই নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জিআইএসএআইডি-এর তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনটি এরই মধ্যে অন্তত ২১টি দেশে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যে ১০৩ জনের শরীরে নতুন ওই ধরনটি পাওয়া গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভারতে যাতায়াতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনটিকে ‘অনুসন্ধানের আওতায় থাকা ধরন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে এই ধরনকে এখনো বিপজ্জনক বা উদ্বেগজনক হিসেবে ঘোষণা করেনি তারা। করোনার নতুন ধরনটি কি আরও সংক্রামক গবেষকেরা এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি, ভাইরাসের ভারতীয় ওই ধরনটি আরও বেশি সংক্রামক কি না। এমনকি করোনার যে টিকাগুলো দেশে দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো এই ধরনের বিরুদ্ধে কার্য কর কি না, তাও এখনো স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জেরেমি কামিল বিবিসিকে বলেন, ভারতে করোনাভাইরাসের যে পরিবর্তনগুলো ঘটেছে, তার মধ্যে দুটি পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে একটি পরিবর্তনের পর ভাইরাসটির প্রকৃতি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের ধরনের সঙ্গে মিলে যায়। এই ধরনটি শরীরে করোনার বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হলেও হতে পারে। উল্লেখ্য, ভারতে ভাইরাসের নতুন ওই ধরনটি উল্লেখযোগ্য দুই পরিবর্তনের পর তৈরি হওয়ায় একে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ বলছেন গবেষকেরা। তবে এই ধরনের চেয়ে যুক্তরাজ্যে তৈরি হওয়া করোনার ধরনটি বেশি সংক্রামক ও বিপজ্জনক কি না, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের এই ধরন ৫০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। এ ব্যাপারে লুজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জেরেমি কামিল বিবিসিকে বলেন, ‘ভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি যুক্তরাজ্যের ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রামক কি না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। তবে আমাদের উদ্বিগ্ন হলে চলবে না।’ ভারতীয় ধরনটির সম্পর্কে এত কম তথ্য কেন বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া বেশির ভাগ তথ্যই অসম্পূর্ণ। ভাইরাসটির খুব কম নমুনাই তাঁরা হাতে পেয়েছেন। ভারত থেকে পাওয়া গেছে ২৯৮টি নমুনা। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে পাওয়া গেছে ৬৫৬টি নমুনা। পক্ষান্তরে যুক্তরাজ্যের ধরনটির নমুনা পাওয়া গেছে ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি। ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জেরেমি কামিল বলেন, ভারতে ভাইরাসের নতুন ধরনটি শনাক্তের পর বিশ্বজুড়ে এটি ৪০০টিরও কম নমুনা শনাক্ত হয়। এ কারণে গবেষকেরা নতুন এই ধরন নিয়ে সেভাবে কাজই করতে পারছেন না বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ কি নতুন ধরন ভারতে এখন প্রতিদিনই আগের দিনের চেয়ে করোনা রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও বাড়ছে দেশটিতে। তবে এর জন্য করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি দায়ী কি না, সে বিষয়েও স্পষ্ট হতে পারছেন না গবেষকেরা। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক রবী গুপ্তা বিবিসিকে বলেন, ভারতের জনসংখ্যা অনেক। জনঘনত্বও অনেক। কাজেই করোনাভাইরাসের জন্য ছড়িয়ে পড়ার এবং পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন ধরন তৈরির ‍উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে সেখানে। তবে গবেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ কি না তা স্পষ্ট না হলেও ভারতে যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় অনেক ঘাটতি রয়েছে, তা পরিষ্কার। বড় জমায়েত এবং মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঘাটতির কারণেই হয়তো করোনা দ্বিতীয় দফায় এতটা প্রবলভাবে আঘাত হানতে পেরেছে। যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের গবেষক জেফরি ব্যারেট বিবিসিকে বলেন, ভারতে সংক্রমণ ‍ও মৃত্যু বৃদ্ধির পেছনে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটিরও ভূমিকা থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ খুব অল্পই রয়েছে হাতে। তিনি বলেন, ‘ভারতের ভাইরাসের নতুন ধরনটির উদ্ভব গত বছর। কাজেই এই ধরনের কারণে যদি সংক্রমণ বেড়ে থাকে, তাহলে বলতেই হয়, এটি ‍যুক্তরাজ্যের ধরনের তুলনায় কম সংক্রামক। কারণ এই অবস্থায় পৌঁছাতে ভাইরাসটির কয়েক মাস সময় লেগেছে।’ নতুন এই ধরনের বিরুদ্ধে কি টিকা কার্যকর বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে এখন করোনার যে টিকাগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা ভারতে ভাইরাসের নতুন ওই ধরনটির বিরুদ্ধে কাজ করবে। বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে টিকাগুলো কাজ করবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক রবী গুপ্তা ও তাঁর সহকর্মীরা মন্তব্য করেছেন, করোনাভাইরাসের কিছু ধরন অবধারিতভাবেই টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরে তৈরি হওয়া সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেবে। কাজেই সর্বোচ্চ সুফল পেতে ভাইরাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সময়ে সময়ে টিকায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। তারপরও যে টিকাগুলো এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার গতি ধীর করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জেরেমি কামিল বিবিসিকে বলেন, বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এই টিকাগুলো সুরক্ষা দেবে। টিকা নেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বা মৃত্যুঝুঁকি অনেকখানিই কমে আসবে। তিনি পরামর্শ দেন, ‘আপনার হাতের কাছে করোনার যে টিকা আছে, তা নিয়ে নিন। দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগার এবং শতভাগ আদর্শ টিকার অপেক্ষা করার মতো ভুল করবেন না।’ সূত্রঃ প্রথম আলো

সম্পর্কিত সংবাদ

করোনায় আক্রান্ত নায়িকা পূর্ণিমা

বিনোদন

করোনায় আক্রান্ত নায়িকা পূর্ণিমা

এ নায়িকা জানান, গত সপ্তাহে কিছুটা উপসর্গ পেয়েছিলেন তিনি। সে কারণে করোনা টেস্ট করান। তার ফল পেয়েছেন পজিটিভ। আপাতত তিনি বা...

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

জাতীয়

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

আগামীকাল রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে একযোগে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব থেকে রাজীব রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার

অপরাধ

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব থেকে রাজীব রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার

মাদক ব্যবসা, অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণের ভ...

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...