বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
বিশেষ প্রতিবেদক : তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বসবাসের উপযোগী পরিবেশের অভাব,ফসলে কীটনাষকের অতিমাত্রায় প্রয়োগ, আনাড়ি মধু সংগ্রহকারীদের দ্বারা মৌচাকে অগ্নিসংযোগে মৌমাছিকে পুড়িয়ে মারা, খাদ্যের অভাবসহ বহুবিধ কারণে পরাগায়নে প্রত্যক্ষভাবে সফল ভূমিকা পালনকারী মুক্ত মৌমাছি সংখ্যা কালের আবর্তে সময়ের পরিধিতে আশংকাজনক হারে কমছে। এছাড়া মৌমাছির প্রজননও মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এতে দিন দিন মৌমাছির আনাগোনার হার এতটাই কমছে যে গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন বৃক্ষে বর্তমানে আর আগের মতো মুক্ত মৌমাছি মৌচাক বা বাসা বাধছে না। প্রতিকূল আবহাওয়া ও মনুষ্যসৃষ্টি বহুমূখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে মুক্ত মৌমাছি হয়ে পড়ছে বাক্সবন্দী। বিশেষ করে নানা সমস্যায় জর্জরিত এসব মৌমাছি তীব্র খাদ্য সংকট আর উপযুক্ত বাসযোগ্য পরিবেশের অভাবে একটি বিশেষ এলাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্বঅঞ্চল এলাকা থেকে মুক্ত মৌমাছি ফুলের অভাবে মধু আহরণ করতে না পারায় চলে যাচ্ছে সুন্দরবনে। মৌমাছির প্রজনন বিঘিœত ও সংরক্ষণের অভাবে যে হারে উত্তরাঞ্চলসহ উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্বঅঞ্চল এলাকা থেকে মুক্ত মৌমাছি দক্ষিণ এলাকায় চলে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে সুন্দরবন এলাকা ছাড়া দেশের অন্যসব অঞ্চলে মুক্ত মৌমাছি ও মৌচাকের দেখা পাওয়াটাই দূরহ হয়ে পড়বে বলে বিজ্ঞমহল মনে করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে এর প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিনীর্ভর এ অঞ্চলগুলোতে। এতে এসব অঞ্চলে খাদ্যশষ্য, ফলমুল, সবজিসহ প্রায় সব ধরনের আবাদের (ধান,গম ব্যতিত) উৎপাদন সফল পরাগায়নের অভাবে বহুলাংশে কমে যাবে। এ অবস্থা রোধে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চল এলাকায় মুক্ত মৌমাছি সংরক্ষণে ব্যাপক ভিত্তিতে ফুল গাছ রোপনের কোন বিকল্প নেই বলে কৃষি বিশেষজ্ঞগণ মতামত ব্যক্ত করেছেন। এ অঞ্চলের মধু সংগ্রহকারী মৌচাষীরা জানিয়েছেন, অতীতে শাহজাদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আম, জাম, কাঠাল, কাঠ, বিভিন্ন বুঁনো ফুলগাছসহ বিভিন্ন ফসলের ফুলের মধুর ওপর ভিত্তি করে প্রচুর মৌমাছির বাস (মৌচাক) ছিল গ্রামগঞ্জে। ওই সময় মুক্ত মৌমাছি বিভিন্ন বৃক্ষে মৌচাক তৈরি করে মধু সংগ্রহ ও প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটাতো। মাত্র দুইযুগ আগেও এমন কোন গ্রাম খুঁজে পাওয়া যেতো না যে গ্রামে অন্তত একটি মৌমাছির চাক পরিলক্ষিত হয়নি। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্বঅঞ্চল এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায়, শুষ্ক প্রতিকূল আবহাওয়া ও বৈরি জলবায়ুর কারণে মৌমাছিদের বসবাস ও বংশবৃদ্ধিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে অপেক্ষাকৃত জলীয় আবহাওয়া বিরাজিত অঞ্চলে দিন দিন চলে যাচ্ছে মৌমাছি। অতীতে আম, জাম, কাঠালসহ বিভিন্ন ফলবান বৃক্ষ পরিলক্ষিত হলেও ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যার প্রবল তোড়ে এসব গাছপালা ও বনাঞ্চল কেটে উজাড় করে ফেলার ফলেও মৌচাক আর দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় অনেক অজ্ঞ কৃষকেরা অতিমাত্রায় কীটনাষক ফসলী জমিতে ব্যবহার করছেন। ফসলী জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাষকের ব্যবহারের ফলে মৌমাছি কীটনাষক পানে মারা যাচ্ছে। এছাড়া আনাড়ি মধু সংগ্রহকারীদের ধারনা, ‘মৌচাক থাকলেই মধু পাওয়া যাবে’। তাদের এ ভ্রান্ত ধারনায় মধু সংগ্রহ করতে তারা মশাল জ্বালিয়ে মৌমাছি পুড়িয়ে মেরে ফেলছে। ফলে মৌমাছির বংশবৃদ্ধি মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রত্যক্ষ কু-প্রভাব পড়ছে কৃষিখাতে। এতে কৃষিজ উৎপাদন কমে যাচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। যার নীরব মাশুল গুঁণছেন কৃষকেরা। বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদগনের ভাষ্য,পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে মৌমাছি সুন্দরবনের গেওয়াসহ বিভিন্ন বুঁনো ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহে সুন্দরবনমূখী হয়ে পড়েছে। জীবন ধারণের জন্য পর্যাপ্ত খাবার আর বসবাসের উপযোগী আবহাওয়ার অভাবে যেসব মৌমাছি সুন্দরবনে গিয়ে নতুন করে মৌচাক বাঁধছে তা আর এ অঞ্চলে পুনরায় ফিরে আসছে না। ফলে সময়ের আবর্তনে কালের পরিধিতে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্বঅঞ্চল এলাকায় মৌমাছির আনাগোনা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। কৃষিপ্রধান দেশে প্রায় সব ধরনের ফসলের উৎপাদন শতকরা ৩০-৪০ ভাগ বৃদ্ধিকারী মৌমাছির অভাবে (ধান,গম ব্যাতীত) ফসলের ফুলে সফল পরাগায়নের হার উদ্বেগজনক হারে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। আজ শনিবার দুপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খায়রুল ইসলাম (অবঃ) জানিয়েছেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বসবাসের উপযোগী পরিবেশের অভাব, ফসলে কীটনাষকের অতিমাত্রায় প্রয়োগ, আনাড়ি মধু সংগ্রহকারীদের দ্বারা মৌচাকে অগ্নিসংযোগে মৌমাছিকে পুরিয়ে মারা, খাদ্যের অভাবসহ বহুবিধ কারণে কৃষিপ্রধান দেশের এ অঞ্চলে ফসলের ফুলে সফল পরাগায়নে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালনকারী মুক্ত মৌমাছি সংখ্যা ও মৌচাক উদ্বেগজনক হারে কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা কৃষিখাতের সর্বোচ্চো ফলন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দিন দিন এ অঞ্চল থেকে যে হারে মুক্ত মৌমাছি অন্যত্র (সুন্দরবন) চলে যাচ্ছে তা এ অঞ্চলের কৃষিখাতে সর্বোচ্চো উৎপাদনের জন্য রীতিমতো চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠার বিষয়। এজন্য এ অঞ্চলে রাস্তার ধারে পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর ইউক্যালিপ্টাস, ইপিলইপিল জাতীয় বৃক্ষ রোপনের পরিবর্তে ফলবান বৃক্ষ রোপন এবং ব্যাপক ভিত্তিতে ফুলচাষের উদ্যোগ গ্রহন করা উচিত। আর এর ব্যাত্যয় ঘটলে এ অঞ্চল থেকে কালক্রমে মুক্ত মৌমাছি, মৌচাক হারিয়ে যাবে এবং কৃষিখাতে চরম নেতিবাচক অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়বে যা জাতীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলবে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

বেলকুচিতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

বেলকুচিতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা

জেলার বেলকুচি উপজেলায় কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রতাঁতী ও তাঁত শ্রমিকদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্...

শাহজাদপুরে ‘প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা’কে গণসংবর্ধনা প্রদান

রাজনীতি

শাহজাদপুরে ‘প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা’কে গণসংবর্ধনা প্রদান

শামছুর রহমান শিশির : আজ মঙ্গলবার বিকেলে শাহজাদপুর পৌর এলাকার শক্তিপুরস্থ প্রয়াত ড. মযহারুল ইসলামের বাসভবনে কেন্দ্রীয় আও...