বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির, রাজীব রাসেল, ফারুক হাসান কাহার : শুক্রবার ও গতকাল শনিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র শাহজাদপুর কাপড়ের হাট সংলগ্ন এলাকায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ী প্রাঙ্গনে বৈশাখী সাজে দেশী বিদেশী রবীন্দ্রভক্ত পর্যটকদের ঢল উপচে পড়ে। বর্ণাঢ্য বৈশাখী সাজে তাদের পদচারনায় ও মিলনমেলায় মুখরিত ও প্রাঞ্জলিত হয়ে ওঠে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কাছাড়িবাড়ী প্রাঙ্গন। বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত শাহজাদপুরের কাছাড়িবাড়ীতে এসে তারা কবিগুরুর ব্যবহৃত বসতবাড়ী,আসবাবপত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দেখে তৃপ্তি ঢেকুর ফেলে ঘরে ফেরেন। অতীতের তুলনায় এবারের পহেলা বৈশাখে কবিগুরুর কাছারিবাড়ীতে রেকর্ড পরিমান রবীন্দ্রভক্ত দেশী-বিদেশী নারী, পুরুষ, শিশু কিশোর, যুবক-যুবতীর সমাগম ঘটে। কাছারিবাড়ী মিলনায়তনে দিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শনিবার কবিগুরুর কাছারিবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায় কাছারিবাড়ীতে তিল ধারনের যায়গা নেই এমন অবস্থা।প্রচন্ড ভীড় উপেক্ষা করেও সুশৃংখলভাবে তারা কবিগুরুর ব্যবহৃত বিভিন্ন তৈজসপত্র ও ছবি দিয়ে সাজানো রবীন্দ্র স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন করেন। জানা যায়, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কাছাড়িবাড়ীতে অসংখ্য দেশী বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পহেলা বৈশাখে এখানে বৈশাখী সাজে জনমানুষের ঢল নামে। ফলে পহেলা বৈশাখে শাহজাদপুর পর্যটন শহরে পরিণত হয়। চলতি পর্যটন মৌসুমে বর্তমানে রেকর্ডপরিমান পর্যটকদের কাছাড়িবাড়ীতে আগমন ঘটছে বলে কাছারিবাড়ী সূত্রে জানা গেছে। পহেলা বৈশাখে সরকারি ছুটি থাকায় শাহজাদপুরের কাছাড়িবাড়ী প্রাঙ্গনে লাখো রবি ভক্তদের পদচারনায় প্রাঞ্জলিত ও মুখরিত হয়ে ওঠে। জানা গেছে, শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ী রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারী একদা নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারী নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তের টাকা দশ আনায় এই জমিদারী কিনে নেন। জমিদারীর সাথে সাথে ওই কাছারিবাড়ীও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়।আগে এই কাছারিবাড়ীর মালিক ছিল নীলকর সাহেবরা।১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবি রবীন্দ্রনাঠ ঠাকুর জমিদারী দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে সাময়িকভাবে বসবাস করতেন।তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সম্ভবত এই কারনেই শিলাইদহে তাঁর বাসগৃহ কুঠিবাড়ী নামে এবং শাহজাদপুরের বাড়িটি কাছারিবাড়ী নামে পরিচিত। শাহজাদপুরে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পালকিতে, নৌকায় ও পায়ে হেটে। শাহজাদপুর শহরের প্রানকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত কাপড়ের হাটের দক্ষিন পাশে এক সবুজ শ্যমল পরিবেশে কাছারিবাড়ী অবস্থিত।শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ী ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন।ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার , প্রস্থ ১০.২০ মিটার এবং উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার।ভবনটির দ্বোতলার সিড়ি ব্যাতিত মোট সাতটি কক্ষ রয়েছে।ভবনটির উত্তর দক্ষিনে একই মাপের প্রশস্ত বাড়ান্দা,বাড়ান্দার গোলাকৃতির জোরামাপের খাম, উপরাংশে আছে অলংকরণ করা বড় মাপের দরজা,জানালা ও ছাদের ওপরে প্যারাপেট দেয়ালে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম দর্শনাথীদের বিশেষভাবে দৃষ্টি কেড়ে থাকে।ভবনটির জানালা দিয়ে চারপাশের মনোরম,মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কবি উপলব্ধি করতেন।কাছারিবাড়ীতে বসেই কবি প্রাণভরে ছোট নদী দেখতেন ও শুনতেন ছোটনদীর স্রোতধারার মিশ্রিত সুর। শাহজাদপুরে এসে মানুষ ও প্রকৃতিকে কবি গভীরভাবে ভালবেসেছিলেন।এখানে তিনি খুজে পেয়েছিলেন সাহিত্য সৃষ্টির নানা উপাদান।এখানে অবস্থানকালে তিনি রচনা করেন,সোনারতরী , বৈষ্ণব কবিতা,দুটি পাখি ,আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, যমুনা, হৃদয়, ভরা ভাদরে, প্রত্যাক্ষান ও লজ্জা, চিত্রা, শীত ও বসন্তে, নগর সংগীত, নদীযাত্রা, মৃত্যুমাধুরী, স্মৃতি বিলয়, প্রথম চুম্বন, শেষ চুম্বন, যাত্রী, তৃণ, ঐশ্বর্য, স্বার্থ, প্রেয়সী, শান্তিময়, কালিদাসের প্রতি, কুমার, মানষলোক, কাব্যপ্রার্থনা, ইছামতী নদী, সুশ্রুসা, অশিক্ষাগ্রহন, বিদায়, নববিবাহ, রজ্জিতা, বিদায়, হত্যভাগ্যেরগান, গতোনিক, বঞ্চনা, সংকোচ, মানষপ্রতিভা, রামকানাইয়ের, নির্বুদ্ধিতা, ব্যবধান, তারাপ্রসন্নের কীর্তি, ছুটি, সম্পত্তি, ক্ষুধিত পাষাণ,অতিথি, ইত্যাদি।এছাড়া কবিগুরু এখানে অবস্থান করে ৩৮ টি বিভিন্ন ছিন্ন পত্রাবলী। পঞ্চভূতের অংশবিশেষ ও নাটক বিসর্জন রচনা করেছিলেন। শাহজাদপুর কাছারিবাড়ীর দ্বোতলার উত্তর পাশে লিচুগাছ ও শোভা বর্ধনের জন্য নানা ফুলের গাছে ঘেরা কবি গুরুর অপরুপ কাছারিবাড়ীটি বহুদুরের পথিকেরও দৃষ্টি আকর্ষন করে।কাছারিবাড়ীর চারদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।প্রাচীরের আশেপাশে রয়েছে নানা দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষের বাগান।কাছারিবাড়ীর ভিতরে একটি বকুলগাছ ছিল।কবি ওই গাছের নীচে বসে কবিতা লিখতেন।১৯৬৯ সালে প্রতœতত্ব্ অধিদপ্তর কর্তৃক অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় কাছাড়িবাড়ীকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষনা করা হয়।ওই কাছাড়িবাড়ীর মূল ভবনটির নান সংস্কার কাজ সমাপ্ত করে ভবনটিতে রবীন্দ্রভিত্তিক আলোকচিত্র ও এ বাড়িতে কবির ব্যবহৃত প্রাপ্ত আসবাপত্র নিয়ে একটি স্মৃতি যাদুঘরের রুপ দেয়া হয়েছে।দক্ষিন দিকের দরজা দিয়ে ওই যাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়।নিচতলা ও দ্বোতলার বিশাল হলরুমসহ যাদুঘরের সকল কক্ষ সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত । চারদিকে পাঁকা দেয়ালে বেষ্ঠিত কাছারিবাড়ীর আঙ্গিনাটিও বেশ বড়। এখানে রয়েছে রবীন্দ্র মিলনায়তন,কবির ব্যবহৃত সামগ্রীর মধে চৌকি, লেখার জন্য ডেস্ক, সোফাসেট, আরাম কেদারা, আলনা, আলমারী, সিন্দুক, ঘাস কাটার যন্ত্র, ওয়াটার ফিল্টার, ল্যাম্প, কবির স্বহস্তে আঁকা ছবি, দেশী বিদেশী রাষ্ট্রনায়ক, বিজ্ঞানীসহ গুনীজনদের সাথে কবির অগনিত ছবি। কবির স্মৃতি বিজড়িত এসব স্মৃতিচিন্হ একনজর দেখার জন্য পহেলা বৈশাখে শাহজাদপুরে কবিগুরুর কাছারিবাড়ী প্রাঙ্গনে বৈশাখী সাজে রবীন্দ্রভক্তদের ঢলে পর্যটন শহরে পরিনত হয়েছিল।

সম্পর্কিত সংবাদ

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

ধর্ম

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

বাংলাদেশ

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

একটি সংগঠনের উদ্যোগে বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। গ্রামের সকল পরিবার হয়েছে এখন সচ্ছল। এই গ্রামে এখন ফিতরা ও যাকাত নেওয়া মানু...

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

জাতীয়

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

আগামীকাল রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে একযোগে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

বাংলাদেশ

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

চাষিরা বলছেন, খেত থেকে হাটে নেওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজি কাঁচামরিচে গড়ে তিন টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া রয়েছে খাজনা ও অন্যান্য খরচ,...