মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার পর আজ (বুধবার) দুপুরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও বাতিল করার সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে। শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এবার প্রচলিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন না করে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের গড় করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। গতবার অংশগ্রহণ করে যারা অকৃতকার্য হয়েছিল তাদেরও জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। মূলত, এইচএসসির পরীক্ষার পরই উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। তাই করোনাকাল চললেও অন্যসব পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষাকে মেলাতে চাচ্ছিল না সরকার। ফলে, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে বেশ আগে ভাগে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেও এইচএসসি পরীক্ষা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর ছিল বলেই খবর পেয়েছি। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা না নিয়ে অটো পাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার যে সিদ্ধান্ত সরকার তরফ থেকে আসল, সেটাকে সময়োচিত বলেই বোধ করছি। কারণ, পরীক্ষা দিতে এসে কোনো শিক্ষার্থী ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কিংবা মৃত্যুবরণ করলে তার দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ঘাড়েই যেত। তাই, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছোটখাটো কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলেও করোনাকাল বিবেচনায় এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ারই যোগ্য। এতো গেলো পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাসের মাধ্যমে সাধুবাদ পাওয়ার দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, পরীক্ষা গ্রহণ করতে অনমনীয় অবস্থানে থেকে উল্টো দৃষ্টান্ত স্থাপনের নমুনাও আছে এদেশে। এ দৃষ্টান্তটি আইনজীবীদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের। সাম্প্রতিক অতীত বিবেচনায় নিলে যেখানে তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করা নিয়ে অনীহা রয়েছে বলেই জানা যায়; সেখানে করোনাকালে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ ১৩ হাজার পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে কিছুদিন আগেও তারা অনড় অবস্থানে ছিল। যদিও বিধি অনুসারে প্রতি ছয় মাস পর পর বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বিগত ৭-৮ বছরে তারা কখনোই তা পারেনি। সর্বশেষ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রায় তিন বছর পর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তারা আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তিকরণের সর্বশেষ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়। এ অবস্থায় সরকার যেখানে ভাইরাসের সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ও প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে বার কাউন্সিল খুব দ্রুতই প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ শিক্ষানবিস আইনজীবীদের লিখিত পরীক্ষা নিতে পারবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া, মাত্র কিছুদিন আগে ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ আঘাতের বিষয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করে সতর্ক করছে সংক্রমণ মোকাবিলায় গঠিত কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ অবস্থায় পাবলিক পরীক্ষা নিতে যাওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ অবস্থায় বার কাউন্সিলও সরকারের দেখানো পথেই হাঁটতে পারে বলে মনে করি। কারণ, করোনাকালে যতই পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হোক না কেন, এই পরিস্থিতেতে পরীক্ষা নিলে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবেই। তাছাড়া, সংক্রমণ না কমার আগে লিখিত পরীক্ষা হলে এই ১৩ হাজার পরীক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ঢাকায় আসতে হবে। ঢাকায় আসতে নিশ্চয়ই তারা বিভিন্ন গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। পরীক্ষার্থীদের অনেকের সঙ্গেই আসবেন অভিভাবকরাও। তাদের বড় একটি অংশ যে হোটেল গুলোতে উঠবেন সেখান থেকে ভাইরাসে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে। গণপরিবহন থেকেও ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াবে। তাছাড়া এসব অভিভাবকরা পরীক্ষার দিন কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করবেন। পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীমিলে সংখ্যাটা আরও অনেক বড় হয়ে দাঁড়াবে। এই সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্র থেকে একই সঙ্গে বের হতে হবে। তাতেও ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর একটা ঝুঁকি থেকে যাবে। কারণ, কে করোনায় আক্রান্ত, কে আক্রান্ত নয় এটা কেউ জানে না। আর বার কাউন্সিল অনড় অবস্থানে থাকলে ভাইরাসে আক্রান্ত অনেক পরীক্ষার্থীই অসুস্থতা আড়াল করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। তাতে একজন থেকে বহুজনের মাঝে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে। তাছাড়া অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘসময় মাস্ক পরে থাকতে পারেন না। তারা কীভাবে পরীক্ষা দিবেন এ নিয়েও ভাবতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, করেনার প্রাদুর্ভাব না কমা পর্যন্ত যখনই পরীক্ষা হোক, কিছু না কিছু পরীক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত থাকবেই। তাদের ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেটাও বার কাউন্সিলকে স্পষ্ট করতে হবে। তাই সবদিক বিবেচনা করে এ বছর লিখিত পরীক্ষার আয়োজন না করে সেটার বিকল্প নিয়ে বার কাউন্সিলকে এখনই চিন্তা ভাবনা করা উচিত। কারণ, করোনা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি ঘটতে বছরখানেক বা তার বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে। বার কাউন্সিল কি এতদিন প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের অপেক্ষায় রাখবে? সেটা মোটেই সমীচিন কোনো কাজ হবে না। আবার এ পরিস্থিতে পরীক্ষা নেওয়াও ঠিক হবে না। তাহলে বিকল্প কী? করোনা পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার এবার মেধা যাচাইয়ের সব ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে পরবর্তী শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দিচ্ছে; এমনকি গতবার এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য ৩ লাখ শিক্ষার্থীকেও অটোপাসের মাধ্যমে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে বেশ কঠিন একটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ শিক্ষানবিস আইনজীবীদের দ্রুতই সনদ প্রদানের ব্যাপারে বার কাউন্সিল পজিটিভ হতেই পারে। কারণ, মহামারীকালে তালিকাভুক্তি পরীক্ষার ধাপকে আরও কঠিন করার পাশাপাশি সনদ প্রত্যাশীদের বার কাউন্সিল বছরের পর বছর অপেক্ষায় রাখবে এটা যুক্তিসঙ্গত এবং মানবিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তাই, এইচএসসিতে যেভাবে বিকল্পভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায়ও সেরকম বা তার কাছাকাছি কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। মূল্যায়নের পদ্ধতিটা কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে তালিকাভুক্তিকরণ কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনে বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। সেটা এমনও হতে কেবল এ বছরের জন্য প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ শিক্ষানবিস আইনজীবীদের গেজেটের মাধ্যমে সনদ প্রদান করা অথবা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা। তাছাড়া, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর ৪০(১) এবং ৪০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ পরিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত করতেও তেমন কোনো বাঁধা আছে বলে মনে হয় না। কারণ, বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফতে খবর নিয়ে জেনেছি, মাত্র কিছুদিন আগে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় বার বার অকৃতকার্য হওয়া একজনকে এভাবে গেজেট প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে পেশা পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রয়োজন কেবল প্রস্তাবটি রেজ্যুলেশন আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রচলিত আইনে পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করা। বিশেষ বিবেচনায় বিসিএসের মতো পরীক্ষাও পিএসসি একাধিকবার দুই ধাপে সম্পন্ন করেছে নিকট অতীতে। বার কাউন্সিল এ নজিরটিই বিবেচনায় নিতে পারে। বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত সদস্যদের আমরা অত্যন্ত বিজ্ঞ বলেই জানি, তারা যে কেবল আইন অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তা কিন্তু নয়, অনেকেই দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করছেন। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা বেশিরভাগ আইনজীবীই জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রকৃত ধারক এবং বাহক। তাদের সময়কালে এমন কোনো ঘটনা যেন না ঘটে, যেটা পরবর্তীতে বাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে হয়ে থাকে। সূত্রঃ যুগান্তর

সম্পর্কিত সংবাদ

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

ধর্ম

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

বাংলাদেশ

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

একটি সংগঠনের উদ্যোগে বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। গ্রামের সকল পরিবার হয়েছে এখন সচ্ছল। এই গ্রামে এখন ফিতরা ও যাকাত নেওয়া মানু...

শাহজাদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা! নিহত ১

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা! নিহত ১

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ঢাকাগামী একটি বাস সড়কের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। এদের...

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

বাংলাদেশ

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

চাষিরা বলছেন, খেত থেকে হাটে নেওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজি কাঁচামরিচে গড়ে তিন টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া রয়েছে খাজনা ও অন্যান্য খরচ,...