মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
vvvvvvvvvz শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম মীর শাহ আলম ॥ ‘মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই। ঐ ফুল ফুটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময়তো নাই...’- ছোটবেলার সেই কবিতা এখন যেন শুধুই বইয়ের পাতায় ছন্দবদ্ধ। জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জ থেকে মৌমাছি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। সারিবদ্ধ মৌমাছির ভোঁ-ভোঁ শব্দ বা মৌমাছির চাকে এখন আর গ্রামের দুষ্টু ছেলেদের ঢিল মারার অভিযোগ শোনা যায় না। নগরে স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে জানে না মৌমাছির চাক কী এবং মধু উৎপত্তি হয় কোত্থেকে। এখন কৃত্রিমভাবে মৌমাছির চাষ করে মধু আহরণ করা হয়। শহর-বন্দরের অলি-গলিতে ‘মধু লাগবে গো- মধু’ এমন হাঁকডাক করে মাঝে মধ্যে মৌয়ালরা মধু ফেরি করে বিক্রি করলেও খাঁটি মধু নিয়ে সংশয় যেন থেকেই যায়। গাছের ডালে যদি শোভা পেতে দেখা যায় মৌচাক আর কানে যদি ভেসে আসে হাজারো মৌমাছির ভন ভন শব্দ তাহলে তো কথাই নেই। এমনই মৌমাছির বড় একটি চাকের দেখা মেলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ছুফুয়া গ্রামের একটি গাছের ডালে। মৌমাছির এ চাক থেকে খাঁটি মধু পেতে কখন চাক ভাঙ্গা হবে এমন খবরও রাখছেন অনেকে। চিকিৎসকদের মতে, খাঁটি মধু অনেক রোগের মহৌষধ। মৌচাক ও মৌয়াল ॥ বনে-জঙ্গলে, গাছের ডালে, গাছের কোটরে, মাটির গর্তে, দালানের ছাদের কার্নিশে কিংবা অন্য কোন সুবিধামতো জায়গায় চাক বাঁধে মৌমাছি। হাজার হাজার মৌমাছিকে তাড়িয়ে সাবধানে মধু সংগ্রহ করতে হয় মৌয়ালদের। মৌমাছি তাড়াতে ধোঁয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর গাছে বা অন্য কোন স্থানে উঠতে ব্যবহার করা হয় মই জাতীয় কিছু। দড়ি আর লাঠি দিয়ে তৈরি ঝুলন্ত মই বেয়ে ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়িয়ে মৌচাক ভেঙ্গে মধু ও মোম সংগ্রহ করার বিষয়টি একেবারে রোমাঞ্চকর। মৌমাছির হুল সহ্য করে সংগ্রহ করা মধুপানে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কথা হয় আবদুল কাদের (৫৫) নামের একজন মৌয়ালের সঙ্গে। তিনি জানান, মৌয়ালরা বড় গাছের সুউচ্চ ডাল বা দুর্গম স্থান থেকে সাবধানে নিচের দিকে আগে মই ফেলে দেন, সেই মই বেয়ে একজন ওপরে ওঠেন। এরপর ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়িয়ে দুটি লাঠির সহায়তায় একটি চাটাইয়ে মৌচাক বসিয়ে তা নিচে নামিয়ে দেয়া হয়। নিচে থাকা সহযোগীরা সতর্কতার সঙ্গে মৌচাকের চাটাই নামিয়ে নেন। সহজে বর্ণনা করা গেলেও মৌচাক সংগ্রহ পদ্ধতি প্রত্যক্ষ করলে যে কারও গা শির শির করবে। তবে এই দুঃসাহসিক মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া আজকালের নয়, এর ইতিহাস অনেক পুরনো। মৌচাষের ইতিহাস ॥ ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম পদ্ধতিগতভাবে মৌমাছি চাষ শুরু হয়। এরপর পরবর্তী ১০০ বছরে মৌচাষের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে লরেঞ্জ ল্যাংস্ট্রোথ গবেষণার মাধ্যমে কাঠের তৈরি মৌবাক্স উদ্ভাবন করেন। বিজ্ঞানসম্মত এই মৌবাক্স উদ্ভাবনের জন্য তাকে আধুনিক মৌচাষের জনক বলা হয়। মৌমাছির প্রকারভেদ ॥ ১০ লক্ষাধিক কীট-পতঙ্গের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার মাছির সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এর মধ্যে মৌমাছি আছে ৪ প্রকারের। এগুলো হচ্ছে- এপিস ডরসাটা (বাঘা বা উগ্র বা যাযাবর মৌমাছি), এপিস মেলিফেরা (বিদেশী মৌমাছি), এপিস সেরেনা ইন্ডিকা (শান্ত মৌমাছি) ও এপিস ফ্লোরা (ক্ষুদে মৌমাছি)। এদেশে ‘এপিস সেরেনা ইন্ডিকা’ মৌমাছির চাষ করা হয়ে থাকে। তবে ‘এপিস ডরসাটা’ মৌমাছি থেকে সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া গেলেও এরা উগ্র ও যাযাবর প্রকৃতির বলে বাক্সে পালন করা যায় না। এরা বনে-জঙ্গলে, গাছের ডালে, দালানের কার্নিশে কিংবা অন্য কোন সুবিধামতো জায়গায় চাক বাঁধে। কুমিল্লায় প্রথম মৌচাষ ॥ বাংলাদেশে বিজ্ঞানসম্মত মৌচাষের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। কুমিল্লা কোটবাড়িস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা ও আন্তর্জাতিক সমাজ বিজ্ঞানী ড. আকতার হামিদ খানের প্রচেষ্টায় ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মৌচাষের সূচনা হয়। এর আগে এদেশে অবৈজ্ঞানিকভাবে বন-জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করা হতো। মৌচাষের গুরুত্ব ॥ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মৌচাষের গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশের শস্য-শ্যামল মাটিতে রয়েছে মৌচাষের উপযোগী পর্যাপ্ত বৃক্ষরাজি, রবিশস্য, শাক-সবজি ও ফুলের বাগান। ফুলে ফুলে পুষ্পরস এবং পরাগরেণুর অন্বেষায় ঝাঁক বেঁধে (সমাজবদ্ধভাবে) ঘুরে বেড়ায় মৌমাছি, মধু সংগ্রহ করে। মৌচাষে বাড়তি আয় ও জীবিকা নির্বাহ ॥ জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার চান্দপুর গ্রামের মৌচাষী মোঃ নিজাম উদ্দিন জানান, তিনি ২০০০ সালে একটি মৌবাক্স দিয়ে মৌমাছির চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার ৫টি বাক্স রয়েছে। তিনি মৌচাষের প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছেন। একাধিক মৌচাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তবে দিন যত যাচ্ছে তাদের (মৌয়াল) এ জীবিকা নির্বাহের ধরনেও আসছে পরিবর্তন। জলবায়ুর পরিবর্তনে মৌমাছি কমে যাচ্ছে, আগের মতো মৌচাকও তেমন আর হয় না। মধুর খাদ্যগুণ ও মোমের ব্যবহার ॥ কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ও জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আলহাজ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, মধুর রয়েছে প্রচুর খাদ্যগুণ। উপাদেয় ও ঔষধি গুণসম্পন্ন মধু দিয়ে মানবের উপকার করা ছাড়াও মৌমাছি পরাগায়নে সহায়তা করে বিভিন্ন শস্য, ফলমূল ও শাক-সবজি উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রভূত অবদান রাখে। মধুর ব্যবহার, উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ অনেক। মধু দুধ বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে খুব সহজেই হারানো শক্তি ফিরে পাওয়া যায়। দৈহিক গঠন ও সুস্থতা ছাড়াও রোগ প্রতিরোধে, ত্বকের সৌন্দর্য ও কোমলতা বাড়ানোর জন্য মধুর ব্যবহার সুবিদিত। মধুর সঙ্গে কালিজিরা মিশিয়ে খেলে অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়।

সম্পর্কিত সংবাদ

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

বাংলাদেশ

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

চাষিরা বলছেন, খেত থেকে হাটে নেওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজি কাঁচামরিচে গড়ে তিন টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া রয়েছে খাজনা ও অন্যান্য খরচ,...

শাহজাদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা! নিহত ১

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা! নিহত ১

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ঢাকাগামী একটি বাস সড়কের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। এদের...

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

ধর্ম

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্...

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

বাংলাদেশ

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

একটি সংগঠনের উদ্যোগে বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। গ্রামের সকল পরিবার হয়েছে এখন সচ্ছল। এই গ্রামে এখন ফিতরা ও যাকাত নেওয়া মানু...

৩’শ ৬০ জন দুগ্ধদাই মাতাকে ভাতা কার্ড প্রদান

৩’শ ৬০ জন দুগ্ধদাই মাতাকে ভাতা কার্ড প্রদান

শাহজাদপুর  প্রতিনিধি: গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিলের আওতায় শাহজাদপুর পৌরসভা কর্তৃক বাছাইকৃত উপক...

শাহজাদপুরে ছেলেকে অপহরণ ও ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২লাখ টাকা চাঁদা দাবী ৩ অপহরণকারী আটক

আইন-আদালত

শাহজাদপুরে ছেলেকে অপহরণ ও ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২লাখ টাকা চাঁদা দাবী ৩ অপহরণকারী আটক

আজ রোববার শাহজাদপুরে চাঁদাবাজও অপহরণকারী চক্রের ৩ সদস্যকে পুলিশ আটক করে। এরা হল, উপজেলার...