চন্দন কুমার আচার্য, বেলকুচি প্রতিনিধিঃ শীতের সকালে প্রকৃতি যখন শীতের চাদর মুড়িয়ে থাকে তখন বাগানে উঁকি দেয় গাঁদা ফুল। হলুদ গাঁদা। কমলা গাঁদা। সোনালী গাঁদা। বেগুনি গাঁদা। গাঢ় লাল রঙের গাঁদা। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির উঠানে, এমনকি শহরে বাড়ির ছাদে বা বারান্দার টবে- এমন বাহারি রংয়ের গাঁদা চোখে পড়ে। মাটিতে লাগানোর পাশাপাশি গাঁদা ফুল টবেও লাগানো যায়। আর সামান্য যতেœ বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা আঙিনা ভরে তোলা যায় গাঁদা ফুলে। সাধারণত এটি শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও চাষাবাদ হয়ে থাকে। বাগানের শোভাবর্ধন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বন ও গৃহসজ্জায় এর ব্যাপক ব্যবহার ফুলটিকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। বাংলাদেশে গৃহস্থদের বাগানেও চাষ হয় গাঁদা ফুল । ১৯৯০ এর দশক থেকে গাঁদা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি, উল্লাপাড়া, সলঙ্গা, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, শাহজাদপুর উপজেলা এলাকায় অধিক হারে এর চাষাবাদ হয়। গাঁদা ফুলের বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে যেমন- ইনকা, গিনি গোল্ড, ইয়েলা সুপ্রিম, গোল্ডস্মিথ, ম্যান ইন দ্য মুন, মেরিয়েটা, হারমনি, লিজন অব অনার ইত্যাদি। এছাড়া বাংলাদেশে সাদা গাঁদা, জাম্বো গাঁদা, হাইব্রিড ও রক্ত বা চাইনিজ গাঁদার চাষাবাদ হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে চাইনিজ গাঁদা, রাজ গাঁদা, আফ্রিকান ও ফরাসি জাতের গাঁদা বেশি চাষ হয়। রঙ ভেদে গাঁদার জাত হচ্ছে- হলুদ, লাল, কমলা, গাঢ় খয়েরি, লাল হলুদের মিশ্রণ ইত্যাদি। আফ্রিকান জাতের গাঁদা গাছ সোজা ও লম্বা এবং ৩৫-১০০ সেন্টিমিটার (সেমি) লম্বা হয়। ফুল কমলা, হলুদ ও গাঢ় খয়েরি রঙের ছিটা দাগযুক্ত হয়।
ফরাসি গাঁদা গাছ খাটো ও ঝোপালো। ১৫-৩০ সেমি লম্বা হয়। ফুল আকারে ছোট ও রঙ লাল। কমলা গাঁদার গাছ খুব শক্ত। ফুল গাঢ় কমলা। শাখা-প্রশাখা বেশি হওয়ায় ফুল বেশি ধরে। ফুলের আকার ৪ থেকে ৫ সেমি। অনেক দিন পর্যন্ত ফুল ধরে। প্রতি গাছে ৬০-৭০ টি ফুল পাওয়া যায়।
গাদা বা অন্যান্য ফুল নার্সারী এবং ফুল চাষীদের কাছ থেকে জানা যায়. উঁচু, সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ ও উর্বর মাটি গাঁদা চাষের উপযোগী। চার-পাঁচবার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। টবে বা পাত্রে চাষ করলে তিন ভাগ দো-আঁশ, এঁটেল বা দো-আঁশ মাটির সঙ্গে একভাগ গোবর মিশিয়ে সার মাটির মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপর সার মাটি, টবে বা পাত্রে বা পলিব্যাগে ভরতে হবে। মাটিতে সার প্রয়োগ প্রতিশতক জমিতে ৪০ কেজি পঁচাগোবর, ২ কেজি ইউরিয়া, ৩ কেজি টিএসপি ও ২ কেজি এমওপি সার মাটির সঙ্গে মেশাতে হবে।
তারপর চারা রোপন করার সময়টা হলো ডিসেম্বর মাস। এ মাসের চারা রোপন করলে ফুল চাষে বেশী লাভবান হওয়া যায়। একদিকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান অন্য দিকে বিবাহ সাদির কারণে ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে গাঁদা ফুল, গোলাপ ফুল, টগর সহ নানা জাতের ফুল চাষ করে সারি সারি করে শাখা বা বীজ বপন করতে হয়। বপনের ক্ষেত্রে চারার দুরুত্ব থাকতে হবে ৩০ থেকে ৪০ সেমি। চারা উৎপাদন না করে সরাসরি বীজ থেকেও গাঁদা চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতি শতকে ৫-৬ গ্রাম বীজ জমিতে বপন করতে হবে।
ফুল চাষ করতে হলে মাটি শুকানোর আগেই সেচ দিতে হয়। গাছের গোড়ায় পানি জমলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা জন্মালেই নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। গাঁদা ফুলে রোগবালাই তেমন হয় না। তবে জাব পোকা আক্রমণ করলে ২ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। গাছ বড় হলে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। গাছ সোজা থাকলে ফুলের গুণগত মান ভালো হয়। গাছে ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য ফুল আসার একমাস আগে গাছের ডগা ভেঙে দিতে হবে। একটি শাখায় ঘন হয়ে অনেকগুলো ফুল বা কুঁড়ি ধরলে উপরের একটি বা দু’টি রেখে বাকিগুলো ভেঙে দিতে হবে, যাতে ফুল বড় হয়। চারা রোপনের ১৫ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা মারা গেলে সেখানে নতুন চারা রোপন করা উচিত। চারা ঘন হলেও পাতলা করে দিতে হবে।
বাণিজ্যিকভাবে গাঁদা ফুলের চাষ-বাংলাদেশে এক সময় ফুলের উৎপাদন ছিল বাড়ির উঠান বা ছাদের উপরে টবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে সৌখিন উৎপাদকের গণ্ডি পেরিয়ে ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। শুধু আবাদই নয় বাংলাদেশের ফুল এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে। তাই এখন যে কেউ নিজেকে একজন আর্দশ ফুল চাষী হিসেবে গড়ে তুলে ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন। বর্তমানে ঋতুভিত্তিক (গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীত) তিন জাতের গাঁদা ফুলের চাষ করা হয়। বাংলাদেশে ফুলের বাজার খুব সীমিত। সিরাজগঞ্জ শহর সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার। প্রতিদিন ভোরে এখানে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল আসে এবং পাইকারী ও খুচরা দু’ভাবেই বিক্রি হয়।
গাঁদা ফুল শীতকালীন ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। বিবাহ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, গৃহসজ্জা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস, পূজাসহ সব অনুষ্ঠানেই গাঁদা ফুলের ব্যবহার রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শীতকালীন ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। বাংলাদেশে গাঁদা একটি জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত ফুল। সাধারণত এটি শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে এর চাষাবাদ হয়ে থাকে। গাঁদা ফুল বিভিন্ন জাত ও রঙের হয়। গাঁদা ফুলের আছে নানান রকম ঔষধি গুণ।
ফুল চাষের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই, কম লেখাপড়া জানা যে কোনো ব্যক্তিও কলমে শিক্ষা নিয়ে ফুল চাষ শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
সম্পর্কিত সংবাদ
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
শাহজাদপুরে দু’দিনব্যাপী হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহ.) এর বাৎসরিক ওরশ শরু।
এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পূর্ব পাশে অবস্থিত পিডিবির ৩টি ও বেসরকারি ১টি মিলে মো... শাহজাদপুর প্রতিনিধি :- শাহজাদপুরে এক কলেজ ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দন্ডবিধি ৫০৯ ধারা মোতাবেক বেলা... সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।
ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব... প্রতিনিধিঃ শাহজাদপুরে র্যাবের অভিযানে ৬১ বোতল ফেন্সিডিলসহ স্থানীয় ২ ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব-১২ সিরা...অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!
অপরাধ
শাহজাদপুরে ইভটিজিং এর অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যুবক-যুবতীর সাজা
রাজনীতি
শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা
শাহজাদপুরে ফেন্সিডিলসহ ২ ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার