শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির : পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকার তাঁতপল্লী গুলোতে বর্ষবরণের জন্য প্রস্তুতকৃত ছোট বড়দের বৈশাখী তাঁতের কাপড় ব্যাপক প্রশাংসা কুড়িয়েছে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেশীয় আবহমান গ্রাম বাংলার নানা ঐহিত্যের প্রতিক ঢোল, তবলা, ফুল, ফল, লতাপাতা, একতারা, বাঁশি, বালতি সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন, বাহারী ডিজাইন, বৈশাখী তাঁতবস্ত্র তৈরি, প্রক্রিয়াকরণ, মোড়কজাত ও বিপননে দেশের লাখ লাখ তাঁত মালিক ও তাঁত শ্রমিকেরা শেষ মুহুর্তে মহাব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। দেশীয় গ্রে-তাঁতের কাপড়ের ওপর বৈশাখী উৎসবে নতুন আমেজ যুক্ত করতে তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ শাহজাদপুরসহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, নরসিংন্দী, যশোর, ঢাকা, মিরপুরসহ তাঁতপল্লীগুলোতে ও গ্রে-তাঁতের কাপড়ে প্রিন্ট করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কর্মচাঞ্চ্যলতা আর হস্তচালিত তাঁতের খট্খট্ শব্দে মুখরিত ও প্রাঞ্জলিত হয়ে উঠেছে তাঁতসমৃদ্ধ জনপদ। এমনিতেই গত প্রায় সাড়ে ৩ মাস ধরে ঐহিত্যবাহী তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ে চরম মন্দাবস্থা চলছে। কিন্তু পহেলা বৈশাখে দেশে বৈশাখী তাঁতের কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এতে তাঁতীরা তাঁতবস্ত্র উৎপাদনে ও প্রিন্ট কারখানাগুলোতে সর্বশেষ সময়ে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। দেশে হস্তচালিত তাঁতে উৎপাদিত শাড়ি,লুঙ্গি ও গামছার মোট চাহিদার সিংহভাগই শাহজাদপুর সহ পাবনা-সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নরসিন্দী জেলায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। এখানে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ী,লুঙ্গী গামছার ব্যাপক কদর রয়েছে দেশ ও বিদেশে। সারা বছরের এ সময় বৈশাখী দেশীয় তাঁতবস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাঁতী ও শ্রমিকরা নিত্যনতুন ডিজাইনের বৈশাখী কাপড় উৎপাদনে সর্চোচ্চো ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায় উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর তাঁত কাপড়ের হাট ও মণিরামপুর বাজারস্থ ইউসুফ প্লাজার বৈশাখী কাপড় পাইকারী বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান রাবেয়া বস্ত্র বিতান, মেরাজ বস্ত্র বিতান, হাজী বস্ত্রালয়, সেলিনা বস্ত্রালয়, ইউসুফ বস্ত্রালয়, লিটন শাড়ী ঘর পরিদর্শন ও বিক্রেতা মেরাজ সরকার, রফিকুল ইসলাম রুবেলসহ বৈশাখী বস্ত্র উৎপাদনকারী তাঁতীরা জানিয়েছেন, ‘পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে তারা বৈশাখী শাড়ি কাপড়ের যে মজুদ গড়ে তুলেছিলেন তা গত সপ্তাহেই শেষ হয়ে গেছে। ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ছোটদের কাপড়ের। তাঁতীরা জানিয়েছেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, বেলকুচি, কামারখন্দ, চৌহালী, সিরাজগঞ্জসদর এবং পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর ও পাবনা সদরের জালালপুরের শত শত সচল তাঁতকারখানা গুলোতে পুরোদমে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র উৎপাদন ও প্রিন্ট কারখানায় দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। তাঁতীদের তাঁত কারখানা ও প্রিন্টের কারখানায় উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে বৈশাখী কাপড় দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে শাহজাদপুর, পাবনা-সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল,নরসিংন্দীসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকার অসংখ্য তাঁত মালিক ও শ্রমিক দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঈদ, পূঁজা ও পহেলা নববর্ষ এলেই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠার জন্য তাঁতীদের খরচ বৃদ্ধি পায়। আর ওই বর্ধিত খরচের টাকার যোগান দিতেই তাঁতীরা কোমড় বেধে কাজ করে থাকেন। কারণ অতিরিক্ত আয়ের অর্থ দিয়ে ঈদ ও দূর্গাপূঁজার মতোই বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে তাদের পরিবারের সদস্যসহ স্বজনদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেন। সেইসাথে ঈদ ,পূঁজা মতো পহেলা বৈশাখের দিনটিতে পান্তা ইলিশের পাশাপাশি পায়েশ, পোলাও, ফিরনি, নাড়–, খৈ, চিড়া, দই, মিষ্টিসহ সবাইকে নিয়ে একটু ভালো খাবারের আয়োজনে বাড়তি আয়ের এ অর্থ ব্যয় হয়। তাঁতীরা জানায়, এতেই তাদের সুখ ,এতেই তাদের শান্তি। এই সুখ শান্তি পরিবারের সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে তাঁতীরা এই বাড়তি পরিশ্রমে মেতে উঠেছে। প্রতিবছর দেশে ও বিদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা ,হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা ছাড়াও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী বাহারী ডিজাইনের ও মনকাড়া রঙের তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গী,গামছাসহ নানা ধরনের তাঁত বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এ সময় তাঁতবস্ত্রের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়েও দ্বিগুণ হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই শাহজাদপুর, পাবনা-সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিন্দী, ঢাকা, মিরপুরের বেনারসী পল্লীসহ দেশের তাঁতপল্লীতে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি লুঙ্গী দেশের তাঁতবস্ত্রের চাহিদার সিংহ ভাগ পূরণ করে আসছে। এ চাহিদা পূরণে শুধুমাত্র শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসদরসহ ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রামে ছোট বড় অসংখ্য সচল তাঁত কারখানা ও প্রিন্টের কারখানাগুলোতে বৈশাখী কাপড় তৈরি হিড়িক পড়েছে। তাঁতের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি,গামছা বিক্রির জন্য উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে দেড় শতাধিক কাপড়ের আড়ৎ ও প্রায় দশ সহস্রাধিক তাঁতের শাড়ী ও লুঙ্গী বিক্রির পাইকারী ও খুচরা দোকান ও শো-রুম রয়েছে। সপ্তাহের দুই দিন রোববার ও বুধবার উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি লুঙ্গির হাট বসছে। এ হাটে দেশের প্রায় সকল স্থান ও ভারত থেকে পাইকার আসছে বৈশাখী কাপড় ক্রয় করতে। ফলে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে পাবনা-সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীর আড়াই থেকে তিন লক্ষ নারী পুরুষ বৈশাখী কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁতের কাপড়ের ধরন ও বর্ণানুয়ায়ী ছোটদের তাঁতের কাপড় পাইকারী ১শ’২০ টাকা থেকে ১শ’৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়দের বৈশাখী কাপড় ধরন ও রকমভেদে ২শ’৫০ টাকা থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্চে। তবে বড়দের চেয়ে ছোটদের বৈশাখী কাপড়েরই চাহিদা বেশী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

আইন-আদালত

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

শামছুর রহমান শিশির : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দীর্ঘ ২ মাস পর ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামী পৌর মেয়র...

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শাহ মখদুমের পূণ্যভূমি ও কবিগুরু রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্কল...