মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির : অতীতে যখন রাসায়নিক সার ছিল না তখন দেশের কৃষকেরা জৈব সার ফসলী জমিতে প্রয়োগ করতেন। ফলে জমিতে উৎপাদিত ফসলের গুনগত পুষ্টিমানও ছিল মানসম্পন্ন। আর এ কারণে অতীতে দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় রোগাক্রান্ত হতেন। কিন্তু বর্তমানে অল্প ফসলী জমিতে হাইব্রিড জাতীয় অধিক ফসল ফলনের আশায় জমিতে নানা রাসায়নিক সার ও কীটনাষক নিয়মানুসারে প্রয়োগ না করে অতিমাত্রায় প্রয়োগ করায় জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস ও উৎপাদিত ফসলের পুষ্টিমান কমেছে বহুগুণে। নান ধরনের রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহার ও যথাযথ পদ্ধতিতে প্রয়োগ না করায় দেশের শষ্যভান্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলসহ দেশের সর্বত্র ফসলী জমিতে প্রয়োগকৃত রাসায়নিক সার অনেক সময়ই কোন কাজে আসছে না। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ফসলী জমিতে জৈব সার প্রয়োগের ফলে জমিতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। কিন্তু অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগে জমিতে এর বিরূপ প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া পড়ছে। জৈব সার প্রয়োগ না করায় ও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে রাসায়নিক সার অতিমাত্রায় প্রয়োগ করায় ফসলী জমিতে এ্যাসিডিটি বৃদ্ধি ও উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ফসলী জমির উর্বরতা শক্তি,পরিবেশের ভারসাম্যতা হ্রাস ও কৃষি প্রধান দেশের কৃষি উৎপাদন মারাত্বকভাবে বিঘ্নিত হবে যা ভবিষত্যে তীব্র খাদ্য সংকট সৃষ্টির একটি বৃহত ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াবে। শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা গ্রামের এলিজা খান মডেল ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্লান্ট পরিদর্শণকালে জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান ও মিল্কভিটার সবেক চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুনের সহধর্মীনি শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এলিজা খান তরুন বলেন, ‘তার ডেইরি ফার্ম থেকে দৈনিক প্রাপ্ত গোবর তিনি বিনষ্ট না করে পুরোপুরিই ওই গোবরের সদ্ব্যবহার করছেন। তার ওই বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে তিনি তার ডেইরি ফার্ম ও পরিবারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর চাহিদা পূরণের পরও বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে প্রাপ্ত বাড়তি গ্যাস বিক্রি করছেন। এত কিছুর পরও তার ওই বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে প্রাপ্ত গন্ধবিহীন উৎকৃষ্ট মানের জৈবসার হিসাবে বিবেচিত গোবর বিক্রি করে ‘গোবর’ নামীয় অতি মূল্যবান গবাদীপশুর মলের সর্বোচ্চো আউটপুট পেয়ে দেশের গো-খামারীদের রাতারাতি ভাগ্যোন্নয়নে এক অনুমপ মডেল স্থাপন করেছেন যা কৃষিপ্রধান দেশের কৃষিখাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ জানা গেছে,উন্নত বিশ্বের ফসলী জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন জৈব সারের অধিক ব্যবহারের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদগণ। আমাদের দেশের ফসলী জমিতে বিভিন্ন ধরনের সুষম রাসায়নিক সার অতি মাত্রায় ব্যবহারে জমিতে পিএইচ-এর মাত্রা নিউট্রালে না থেকে স্থানভেদে কম বা বেশী হচ্ছে যা ফসলী জমির জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। ফলে দেশের ফসলী জমিতে উর্বরা শক্তি অতীতের তুলনায় দিনে দিনে বহুলাংশে কমে যাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে খাদ্যশষ্যের যোগানে উচ্চ ফলনশীল ফসল ফলনের আশায় অজ্ঞ কৃষকেরা ফসলী জমিতে মাত্রাতিরিক্ত হারে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করছেন। এতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেলেও জমিতে রোপিত ফসল মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন নিতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে কৃষকেরা আশানুরূপ ফসল ফলাতে ব্যার্থ হচ্ছেন । ইরি-বোরো ধান চাষের সময় এক বিঘা জমিতে দুই দফায় ৩০-৩৬ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগের নিয়ম থাকলেও কৃষকেরা অধিক ফলনের আশায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করছে । ফলে সরকারি হিসাবে ইউরিয়া সারের চাহিদার পরিমান যোগানের তুলনায় বেশী লাগছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,স্থানীয়ভাবে ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৭’শ ৫০ টাকা। আমদানীকৃত ইউরিয়া সারের খরচও প্রায় ১৭’শ ৫০ টাকা থেকে ১৮’শ টাকা পড়ে যায়। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতে সরকার তা বিক্রি করছে বস্তা প্রতি প্রায় ১ হাজার টাকায়। প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারে সরকার প্রায় ৭৫০ টাকা অর্থ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের মধ্যে সার বিক্রি করছে। কিন্তু সরকার কর্তৃক ভর্তুকি মূল্যে কৃষকের কাছে বিক্রয়কৃত সার যথাযথ পদ্ধতিতে প্রয়োগ না করায় জমিতে ব্যবহৃত সারের অপচয় দিন দিন বাড়ছে। পর্যাপ্ত পরিমান সার কৃষকের মধ্যে সরবরাহ করা হলেও তার সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় সরকার ও কৃষক উভয়ই আর্থিক দিক বিবেচনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। দেশের নিউজিল্যান্ড খ্যাত জনপদ শুধুমাত্র শাহজাদপুর উপজেলাই রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক গো-সম্পদ (সরকারি শুমারি অনুসারে,বাস্তবে এ সম্পদের সংখ্যা আরও বেশী)। ওই বিশাল গো-সম্পদ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ কেজি গোবর পাওয়া যাচ্ছে যার মাসিক মূল্যমান প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সারাদেশে প্রতিদিনের গোবর প্রাপ্তির সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পর্যন্ত পাওয়া না গেলেও একটি উপজেলাই যদি দিনে প্রায় ৪০ লাখ কেজি গোবর পাওয়া যায় তাহলে সারাদেশে কি পরিমান গোবর পাওয়া যাচ্ছে তা একটু খতিয়ে দেখলেই বোধগম্য হবে। ওই গোবর ৪ থেকে ৫ মাস মাটির নীচে পুঁতে রেখে পুরোপুরি পঁচিয়ে উন্নতমানের জৈব সার হিসাবে ফসলী জমিতে ব্যবহৃত না হয়ে জ্বালানী হিসাবে (স্থানীয় ভাষায় ঘষি) ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘গোবর’ নামীয় অতি সহজলভ্য, পরিবেশবান্ধব ও জমির উর্বরা শক্তি, ফসলের উৎপাদন ও পুষ্টিগুণমান বৃদ্ধিকারী ওই জৈব সার হিসাবে ফসলী জমিতে অঠিক ব্যবহার করা হলে একদিকে যেমন কৃষকের ফসলের উৎপাদন ব্যায় কমবে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যতা বজায় থাকার পাশাপাশি জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাবে ও ফসল উৎপাদন বেড়ে যাবে। পাশাপাশি উৎপাদিত ফসলের পুষ্টিগ্রহনের ক্ষমতাও বেড়ে যাবে ও রোগবালাই অনেক কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদগণ কৃষকদের রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে জৈব সার হিসাবে ফসলী জমিতে গোবর প্রয়োগের পরামর্শ দিলেও এখোনো অনেক কৃষকের সচেতনতার অভাব ও যথাযথ জ্ঞান না থাকায় ফসলী জমিতে জৈব সার হিসাবে গোবর প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগে খরচ বৃদ্ধি ও পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস, মাটি থেকে ফসলের পুষ্টিগ্রহন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অপরদিকে মিসেস এলিজা খান মডেল ডেইরি ফার্ম ও বায়োগ্যাস প্লান্টের মতো দেশের প্রতিটি গো-খামারে এরূপ একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে গোবর থেকে উৎপন্ন জৈব সার ফসলী জমিতে প্রয়োগ করা হলে সব দিক বিবেচনায় দেশ ও কৃষকেরা উপকৃত হবে বলে সচেতন মহল অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুর উপজেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন ফের স্থগিত; যুবলীগ নেতাকর্মীরা হতাশ

রাজনীতি

শাহজাদপুর উপজেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন ফের স্থগিত; যুবলীগ নেতাকর্মীরা হতাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর: আজ ২৫ এপ্রিল শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি মিলনায়তনে দীর্ঘ ১৩ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ...

শাহজাদপুর কায়েমপুরে কায়েমপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রানাসহ ৩ জনের জাসদে যোগদান

রাজনীতি

শাহজাদপুর কায়েমপুরে কায়েমপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রানাসহ ৩ জনের জাসদে যোগদান

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : ২৫ মার্চ রোববার বিকেলে স্থানীয় জাসদ কার্যালয়ে উপজেলা জাসদ সভাপতি শফিকুজ্জামান শফির সভাপতিত...

শিমুল হত্যার পলাতক আসামীদের মালামাল ক্রোক শুরু: প্রথম দিনেই ৪ জনের বাড়িতে সফল অভিযান

জাতীয়

শিমুল হত্যার পলাতক আসামীদের মালামাল ক্রোক শুরু: প্রথম দিনেই ৪ জনের বাড়িতে সফল অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার চার্জশিট ভূক্ত পলাতক ৪ আসামীর বাড়িতে পুলিশ আজ মঙ্...

শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক ২ এমপি রোষানলে

রাজনীতি

শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক ২ এমপি রোষানলে